সাইফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীতে দ্বিতীয় দফায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে।
নাগরপুর সরকারি কলেজ, নাগরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, নাগরপুর-চৌহালী সড়ক সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বন্যার পানি উঠায় চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারন মানুষ। এতে মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় তাদের গবাদি পশু নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে ছুটছেন শত শত মানুষ।
এতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।
উপজেলার নাগরপুর, সলিমাবাদ, দপ্তিয়র, গয়হাটা, ভারড়া, মোকনা, পাকুটিয়া, ধুবড়িয়া, সহবতপুরের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আর এসব এলাকার বসতঘরে পানি ওঠায় ঘরবাড়ি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছে শত শত পরিবার।
এছাড়াও নাগরপুর উপজেলার যমুনা ও ধলেশ্বরী নদী সংলগ্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো এলাকার কাঁচা-পাকা রাস্তা ডুবে গিয়ে আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এদিকে জানা গেছে যে, “গত তিনদিন ধরে যমুনায় পানি বাড়ায় ভারড়া, গয়হাটা, সলিমাবাদ ও দপ্তিয়র এলাকার হাজার হাজার মানুষের ঘরে পানি উঠেছে। বসতঘরের পাশাপাশি ডুবে গেছে টয়লেট, নলকূপ, রান্নাঘর, গোয়ালঘর। ফলে রান্না করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির।”
দুর্গত এলাকায় অনেকে ঘরের ভেতর মাচা পেতে হাঁস-মুরগি ও গবাদিপশু নিয়ে থাকছেন। আবার অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে ছুটছেন নিরাপদ স্থানে। বন্যার পানির স্রোতে চৌহালী-আরিচা সড়কের উপজেলার সলিমাবাদ ইউনিয়নের তেবাড়িয়ায় বেইলী ব্রিজ ভেঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
এছাড়াও নাগরপুর শাহাজানী সড়কের বনগ্রামে পাকা রাস্তায় পানি উঠে পার্শ্ববর্তী চৌহালী উপজেলার সাথে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও জেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা গেছে যে, “গত দুদিনে জেলার নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।”
রবিবার সকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে জানা গেছে যে, “যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত দুদিনে নাগরপুর উপজেলার যমুনা নদী বেষ্টিত চারটি ইউনিয়নে বন্যার পানি বেড়েছে।”
আর এদিকে যমুনা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে নদী ভাঙনও। পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছে।
এদিকে বন্যা পরিস্থিতি দেখতে নাগরপুর উপজেলা প্রশাসনের টিম শনিবার সারাদিন উপজেলার বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছে। আর এসময় পানিবন্দি মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।
সলিমাবাদ ইউনিয়নের পাইকশা এলাকার একাধিক বাসিন্দা জানিয়েছেন, “গত কয়েকদিন ধরে প্রচুর পানি বেড়েছে। এবার ঘরের চাল ছুঁইছুঁই করছে পানি। এ এলাকার অনেকেই ঘরবাড়ি ফেলে আশ্রয়কেন্দ্র ও নিরাপদ স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এতো পানি গতবারেও হয়নি। গরু-ছাগল নিয়ে চরম দুর্ভোগে দিন কাটছে তাদের।”
সহবতপুর এলাকার মো.মন্টু মিয়া নামের এক ব্যক্তি বলেছেন, “পানি বাড়ায় আমার মাছের ঘের ভেসে গেছে। লক্ষাধিক টাকার মাছ বের হয়ে গেছে পুকুর থেকে।”
আরেক মৎস্য চাষি মো. সোহেল মিয়া বলেন, “এবারের বন্যায় আমার তিনটি পুকুর ভেসে গেছে। এতে প্রায় ৮লক্ষাধিক টাকার মাছ বের হয়ে গেছে।”
অপর দিকে ভাই ভাই নার্সারির মালিক মো.তারা মিয়া জানান, “যমুনা নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় লোকালয়ে বন্যার পানি ঢুকে পরে আমার প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকার বিভিন্ন প্রজাতির গাছ তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি দীর্ঘস্থায়ী হলে গাছের চারাগুলো মরে যাবে।”
এদিকে বানভাসী এলাকার মানুষ অভিযোগের সূরে জানান, “বন্যায় তারা দূর্বিসহ জীবনযাপন করলেও সরকারি কোন সহায়তা এখন পর্যন্ত পাননি।”
নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম জানিয়েছেন, “যমুনা নদী সংলগ্ন এলাকার পানিবন্দি মানুষদের গতকাল থেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়া হচ্ছে। বন্যা কবলিতদের সরকারিভাবে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আরো খাদ্য সহায়তা দেয়ার প্রস্তুতি চলছে। তাছাড়া ভাঙন কবলিত এলাকা রক্ষার্থে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে।”