নরসিংদী: নরসিংদীতে লাফিয়ে বাড়ছে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা। গত ৭ এপ্রিল নরসিংদীতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে এখন পর্যন্ত (১৯ এপ্রিল পর্যন্ত) জেলায় সর্বমোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে বলে মানবজমিনকে নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী জেলা করোনা প্রতিরোধ জরুরি সেলের প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ইমরুল কায়েস। এছাড়া ২০ ও ২১ তারিখের ফলাফল এখন পর্যন্ত হাতে এসে পৌঁছায়নি। দুইদিনের ফলাফল হাতে এসে পৌঁছলে আক্রান্তের সংখ্যা দুইশত এর কোঠায় পৌঁছে যাবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা। এই অবস্থায় নরসিংদীকে করোনার নতুন “হটস্পট” হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইইডিসিআর। আক্রান্ত ১৩৪ জন ছাড়াও গত শনিবার মাধবদীর পাইকারচর ইউনিয়নের পুরানচর এলাকায় আমির হোসেন (৪৫) নামে এক ব্যক্তি ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। মৃত্যুর পর তার নমুনা পরীক্ষায় পজিটিভ রেজাল্ট আসে। এদিকে, জেলাজুড়ে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্তদের প্রায় অর্ধেকই স্বাস্থ্যকর্মী বলে জানা গেছে।
গত শনিবার পর্যন্ত প্রকাশিত আক্রান্তদের তালিকায় ১০৪ জনের মধ্যে চারজন চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের নানা পদের কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে মোট ৪৬ জন রয়েছেন। এতে জেলার সকল পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি জনসাধারণও আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ৪ জন চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ১৬ জন কর্মকর্তা ও ১৪ জন কর্মচারী এবং ১২ জন নার্স রয়েছেন। আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের সবাই নরসিংদীর দুইটি প্রধান হাসপাতালসহ উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর কর্মী। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক, সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার, স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারী, ফার্মাসিস্ট, উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার, পরিসংখ্যানবিদ, স্টোর কিপার, গাড়িচালক, মালী, বাবুর্চি ও সুইপারের মত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এছাড়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।
সিভিল সার্জনের কার্যালয় জানায়, শনিবার দুপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ৭৭ জনের নমুনা রাজধানীর আগারগাঁওয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ল্যাবরেটরি মেডিসিন এন্ড রিসার্চ সেন্টারে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। রোববার সন্ধ্যার মধ্যে ওই ফলাফল হাতে পাওয়ার কথা থাকলেও ফলাফল পাওয়া যায় সোমবার সকালে। ওই ফলাফলে ৩০ জন ব্যক্তিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়। নতুন করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সদর উপজেলায় ২২ জন ও রায়পুরার ৮ জন রয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা করোনা প্রতিরোধ জরুরি সেলের প্রধান ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) ইমরুল কায়েস জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, নরসিংদী জেলা প্রশাসনের দায়িত্বে নিয়োজিত কয়েকজন কর্মকর্তারও নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। তবে তাদের ফলাফল এখন পর্যন্ত হাতে এসে পৌঁছায়নি। এ পর্যন্ত জেলার মোট ৪৯৪ জন ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে পরীক্ষা শেষে ১৩৪ জনকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে সদরে ৭০ জন , রায়পুরায় ২৬ জন, শিবপুরে ১৭ জন, বেলাবতে ১১ জন, পলাশে ৫ জন ও মনোহরদীতে ৫ জন রয়েছেন। তবে এরই মধ্যে নরসিংদী সদর ও পলাশের দুই ব্যক্তি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর বর্তমানে সুস্থ্য আছেন। জেলায় প্রায় ৮ শতাধিক ব্যক্তি হোম কোয়ারেন্টিনে থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে কেউ নেই। বিভিন্ন হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন প্রায় ৫০ জন। করোনা শনাক্ত হওয়া ব্যক্তিদের সংস্পর্শে আসা প্রায় তিন শতাধিক ব্যক্তি বা স্বজনদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
গত ৭ এপ্রিল পলাশ উপজেলায় জেলার প্রথম করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। পরদিন রায়পুরা উপজেলায় আরও একজনকে করোনা আক্রান্ত বলে ঘোষণা দেওয়া হয়। তারা দুজনেই নারায়ণগঞ্জ থেকে আক্রান্ত হয়ে নরসিংদীতে ফিরেছিলেন। ওই রাতেই ১০০ শয্যা বিশিষ্ট নরসিংদী জেলা হাসপাতালের এক কর্মচারী করোনা আক্রান্ত হিসেবে শণাক্ত হন। পরবর্তীতে তার স্ত্রীও করোনা আক্রান্ত হন। কয়েকদিনের বিরতির পর গত ১৩ এপ্রিল সাংবাদিক ও চিকিৎসকসহ ১৬ জন একদিনেই করোনা আক্রান্ত হন। পরদিন আক্রান্ত হন আরও ৮ জন। গত ১৫ এপ্রিলে নতুন করে আক্রান্ত হন ১৫ জন। পরদিন আরও ২১ জন। ১৭ এপ্রিল শনাক্ত করা হয় ২৭ জনকে। পরদিন আরও ১২ জন। এর একদিন পর সোমবার জানানো হয় ৩০ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর। করোনা সংক্রমণের হারের দিক থেকে ক্রমে ক্রমে দেশের অন্যতম হটস্পট হয়ে উঠছে নরসিংদী। এ অবস্থায় জেলার বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে চরম উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।