এ যেন ভারত মহাসাগর পাড়ি!

Slider খেলা জাতীয়

ঢাকা: কঠিন পথ, ভয়ংকর চাপ- সেইসঙ্গে ইতিহাস গড়ার সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিটি মুহূর্তে বুক চিতিয়ে লড়াই করার দারুণ এক দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে থাকল পচেফস্ট্রুম। বল হাতে চ্যাম্পিয়নদের নাকানি-চুবানি খাওয়ানোর পর ব্যাট হাতে শিহরণ জাগানিয়া এক নাটুকে ইনিংস উপহার দিলেন বাংলাদেশের তরুণরা। তাতে এতদিনের ভারত-জুজু কাটানোর পাশাপাশি মিলল আরাধ্যের ট্রফিও।
আহা আজি এই দিনে; কত রেকর্ড, কত গল্প, কত কবিতাই না হবে। গায়ক গাইবে গান, শিল্পী তার মনের ক্যানভাসে আঁকবে কোনো চিত্র। যেখানে থাকবে লাল-সবুজের নাম, থাকবে আকবর-শরিফুলদের মুখগুলোও।
এ তো বিশ্বজয়ের আনন্দের দিন, ভারত-বধের উচ্ছ্বাসের দিন, অনেক হিসাব মেলানোর দিন। যুগে যুগেও যে গন্তব্যে নোঙর করতে পারেননি সাকিব, তামিম, মাশরাফি মুর্তজা কিংবা মুশফিকুর রহিমরা। গতকাল সেখানটায় রাঙিয়েছেন বাংলার যুবারা।
ভারত বলেই তো এতটা ভয়। হয়তো মনের কোনে বারবার ভেসে উঠেছে পুরোনো দৃশ্যগুলো। কখনও বিশ্বকাপ, কখনও এশিয়া কাপ, কখনও আবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। বড়রা যেমন এই ভারত-সাগরে ডুবেছে বারবার। ছোটরা এবার সেই পথে পা বাড়াননি। অতীতকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, এতদিনের জমাট বাঁধা হতাশার মেঘগুলো এক নিমেষেই সরিয়ে করেছেন বুনো উল্লাস। দিয়েছেন অতীতের ক্ষতে প্রলেপ।
২৩ বছরের পরিক্রমা। সেই ১৯৯৭ সালে নিজেদের প্রথম অফিসিয়াল ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। তারপর একটু একটু করে এগিয়ে যাওয়া। এই এগিয়ে যাওয়ার পথে একের পর এক আসে ভারত-বাধা। বড়-ছোট আসর মিলিয়ে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে এই ম্যাচের আগে ২২ বার ভারতীয় যুবাদের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। যেখানে মাত্র ৩টিতে জয় ছিল লাল-সবুজের পতাকাবাহীদের। বাকি ১৯ ম্যাচের ১৮টিতে ভারতের কাছে হার মেনেছেন যুবারা।
বড়দের কষ্টটা যে আরও বেশি। ৩৬ ওয়ানডেতে মাত্র ৫ জয়। বাকি ৩১ ম্যাচের ৩০টিতে হার ও ১টি ফলহীন। চার-ছক্কার ক্রিকেটে আরও বাজে অবস্থা। ১১ বারের দেখায় মাত্র ১ জয়। সেইসঙ্গে বড় আসরেও ছিল বাংলাদেশের ভারত-দুঃখ। ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টারে ভারতের কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশ জাতীয় দলের। তার চেয়ে বড় দাগ ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি। সেবার সেমিতে এই ভারতে কাটা পড়ে বাংলাদেশ। এরপর এশিয়া কাপের ফাইনালে দু-দু’বার ভারতের কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া করে টাইগাররা। প্রথমবার ২০১৬, পরেরবার ২০১৮ সালে আরব আমিরাতে দুর্দান্ত পারফর্ম করেও শেষ পর্যন্ত ভারতের কাছে হেরে শূন্য হাতে বাড়ি ফিরতে হয় টিম বাংলাদেশকে।
এমন দুঃসহ তিক্ততা নিয়ে যখন বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে নামে বাংলাদেশ, তখন কি আর স্বস্তিতে থাকা যায়। প্রোটিয়াদের মাটিতে তারই ছায়া দেখা গিয়েছিল। ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাওয়া ম্যাচের দৃশ্যে ফুটে উঠেছিল আরেকটা আক্ষেপের চিত্র, আরেকটা হৃদয়ভাঙার আর্তনাদ। যাক, শেষ পর্যন্ত সব দুঃস্বপ্ন ভুলে বীরের বেশে হাসল বাংলাদেশ, হাসল ১৬ কোটি জনতা। জয় হলো বাংলাদেশের, জয় হলো ক্রিকেটের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *