এ কে এম রিপন আনসারী, টঙ্গীর ইজতেমা ময়দান থেকে: বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের শুরু হয়েছে আজ ফজরের নামাজের পর বয়ানের মধ্য দিয়ে। জুমার নামাজের পর বিশেষ করে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হল বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। দ্বিতীয় পর্বে লাখো মুসল্লী টঙ্গীর তুরাগ তীরে আদায় করেন জুমার নামাজ। জুমার নামাজে বিশ্ব শান্তি ও কল্যানের জন্য মোনাজাত করা হয়।
এদিকে জুমার নামাজে অংশ নিতে টঙ্গী ও আশপাশ এলাকা থেকে লাখো মানুষ সকাল থেকেই ময়দানে আসা শুরু করেন। যারা আখেরী মোনাজাত পর্যন্ত থাকবেন তারা থেকে যান। আর যারা শুধু জুমার নামাজ আদাায় করতে আসেন তারা জুমা শেষে ঘরে ফিরে যান।
টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুক্রবার ভোরে শুরু হয়েছে হজের পর মুসলমানদের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ফজরের নামাজের পর ভারতের মাওলানা মুহাম্মদ ওসমানের আম বয়ানের মধ্য দিয়ে ৫৫তম ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়া তাবলীগ জামাতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির অনুসারী তাবলীগের সদস্যরা এ পর্বে অংশ নিচ্ছেন।
বিশ্ব ইজতেমার এবারের পর্বে ভারতীয় মাওলানা সাদ কান্ধলভী যোগদান না করলেও তার পক্ষে ভারতের ৩২ জনের একটি প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছেন।
শুক্রবার ফজর নামাজের পর থেকে ইজতেমার খিত্তায় খিত্তায় অবস্থান নিয়ে মুসল্লিরা আম বয়ান শুনতে থাকেন। আম বয়ান পরিচালনা করেন মাওলানা মুহাম্মদ ওসমান। বাংলা ভাষায় তা তরজমা করেন মাওলানা আব্দুল্লাহ মনসুর।
এই ময়দানে দুপুরে অনুষ্ঠিত হবে অন্যতম বৃহত্তম জুমার নামাজ। ইজতেমাকে সফল ও সার্থক করতে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন ও প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর।
জুমার নামাজকে ঘিরে আশেপাশের এলাকা থেকে আগত মুসুল্লিদের ঢল এখন তুরাগ তীরে। ইজতেমার ময়দানের ভেতর এবং বাইরে অবস্থানরত মুসল্লিদের নিরাপত্তায় কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় থাকছে বাড়তি পুলিশ সদস্য।
এরই মধ্যে পুরো ময়দানকে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে। সিসিটিভি ও ওয়াচ টাওয়ার দিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি করা হচ্ছে। পানি, পয়ঃনিষ্কাশন, বর্জ্য অপসারণসহ মুসল্লিদের সুবিধার্থে কাজ করছে সিটি করপোরেশনসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান।
তিনদিনের এই পর্ব আগামী রবিবার (১৭ জানুয়ারি) আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
ইজতেমার পথে দুই মুসল্লির মৃত্যু
দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় যোগ দিতে এসে গত বুধবার রাতে পৃথক স্থানে ট্রেন ও কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে।
নিহত দুজনের একজন মো. গোলদার হোসেন (৪০)। তাঁর বাড়ি গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানায়। তিনি বুধবার রাত ৯টার দিকে টঙ্গী রেলস্টেশনে একটি ট্রেনের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে আহত হন। পরে হাসপাতালে মারা যান।
নিহত অপরজন হলেন মো. সুরুজ মিয়া (৫৭)। তাঁর বাড়ি নরসিংদী জেলার বেলাব থানায়। তিনি টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকায় রাস্তা পারাপারের সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে একটি কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় মারা যান।
দুজনই ইজতেমায় যোগ দিতে আসছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন গাজীপুর মহানগর পুলিশের (গোয়েন্দা বিভাগ-ডিবি) উপ পুলিশ কমিশনার মনজুর রহমান।
এর আগে গত ১০ জানুয়ারি শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হয়। মাওলানা হাফেজ মোহাম্মদ জোবায়ের অনুসারীরা অংশ নেন প্রথম পর্বে।
ইজতেমার প্রথম আয়োজন শুরু হয় ১৯৪৬ সালে কাকরাইল মসজিদে। তারপর ১৯৪৮ সালে চট্টগ্রামের হাজি ক্যাম্পে ও ১৯৫৮ সালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর লোক সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ১৯৬৬ সালে টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বর্তমানস্থলে স্থানান্তর করা হয়েছে। পরে সরকারিভাবে তুরাগ তীরের ১৬০ একর জমি স্থায়ীভাবে ইজতেমার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়।
১৯৬৭ সাল থেকে টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে তাবলিগ জামাত বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করে আসছে। ইজতেমা মাঠের চাপ কমাতে এবং নিরাপত্তা ও উন্নত ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ২০১১ সাল থেকে দুই ধাপে ইজতেমার আয়োজন হয়ে আসছে।