কালীগঞ্জে মাদ্রাসার দুই হুজুরের দ্বন্ধে প্রাণ গেল শিশুর, লাশ পাওয়া গেলো ড্রয়ারে

Slider জাতীয় নারী ও শিশু


কালীগঞ্জ (গাজীপুর) প্রতিনিধি: মাদ্রাসার দুই হুজুরের দ্বন্ধে প্রাণ গেল তিন বছর দশ মাসের এক শিশুর। পিতার প্রতি প্রতিশোধ নিতে গিয়ে বড় হুজুরের ছেলেকে হত্যা করেছে ছোট হুজুর। মোবাইল ফোন চুরিকে কেন্দ্র করে পিতার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে গাজীপুরের কালীগঞ্জে মোঃ আদিল নামে এক শিশুকে গলাটিপে হত্যা করে তার লাশ কাপড় রাখার ড্রয়ের ভেতরে রেখে তালাবদ্ধ করে রাখে মাদ্রাসার শিক্ষক জোনায়েত আহমেদ । এমন লোমহর্ষক হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার রাতে উপজেলার জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের মরাশ জামিয়াতুল মাদ্রাসা ও এতিমখানায়।

নিহত শিশু আদিল ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মুফতি জোবায়ের আহমেদের ছেলে। ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার ধসালিয়া গ্রামের মুফতি জোবায়ের আহমেদ তার পরিবার নিয়ে মরাশ এলাকায় বসবাস করতো।

বর্বরোচিত এমন হত্যাকান্ডের ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে কালীগঞ্জ অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম মিজানুল হক বলেন, অভিযুক্ত দুই শিক্ষক জোনায়েত আহমেদ ও খাইরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই দুই শিক্ষককে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার বিকাল থেকে ওই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক মুফতি জোবায়ের আহমেদ এর শিশু ছেলে আদিল মাদ্রাসার পাশেই মাঠে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়। পরে ছেলেকে কোথায়ও খুঁজে না পেয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা করে। পরে গ্রামবাসী এসে মাদ্রাসার পুকুরসহ বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করে শিশু আদিলের কোনো সন্ধান না পেয়ে মাদ্রাসার কক্ষে খুঁজতে থাকে। খোঁজাখুজির এক পর্যায় মাদ্রাসার কর্মরত দুই শিক্ষক জোনায়েত আহমেদ ও খাইরুল ইসলামের চলাফেরা ও তাদের কথাবার্তায় অসঙ্গতিতে স্থানীয়দের মনে সন্দেহ হয়। পরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত ওই দুই শিক্ষক শিশু আদিলকে হত্যার ঘটনার কথা স্বীকার করে।

পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক জোনায়েত আহমেদের কক্ষে থাকা কাপড় রাখার ড্রয়ের ভেতর থেকে ওই শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন। পরে স্থানীয়রা থানা পুলিশকে বিষয়টি অবগত করে।
খবর পেয়ে কালীগঞ্জ -কাপাসিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পঙ্কজ দত্ত, কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) একেএম মিজানুল হক, ওসি (অপারেশন) মুজাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোঃ মোয়াজ্জেম হোসেন নিহতের প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজ উদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।

হত্যায় অভিযুক্ত আসামিদের বাড়ী হবিগঞ্জ জেলার রাখাইন উপজেলার তেগুরিয়া গ্রামের মৃত ওয়াহাব আলীর ছেলে জোনায়েত আহমেদ (৩০), অপরজন একই এলাকার জফু মিয়ার ছেলে খাইরুল ইসলাম (২৫)। নিহত শিশু আদিলের পিতা শিক্ষক মুফতি জোবায়ের আহমেদ বাদী হয়ে গ্রেপ্তারকৃত দুইজনকে আসামি করে কালীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে।

কালীগঞ্জ থানার এস আই মো. মোয়াজ্জেম হোসেন জানায়, মরাশ জামিয়াতুল মাদ্রাসা ও এতিমখানায় বড় হুজুর, ছোট হুজুর ও একজন হাফেজ কর্মরত ছিল। সম্প্রতি মাদ্রাসা থেকে একটি মোবাইল ফোন চুরি হয়। এই চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত হয় ছোট হুজুর জোনায়েত আহমেদ। পরে তাকে অপমান অপদস্ত করা হয়। এর পর থেকে বড় হুজুরের প্রতি ক্ষিপ্ত হয় জোনায়েত। তার অপমানের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে উঠে সে। পিতার ওপর রাগ প্রশমিত করতে বড় হুজুরের ছেলেকে হত্যা করে ছোট হুজুর জোনায়েত আহমেদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *