ঢাকা: চাচাতো ভাইয়ের কাছে মুঠোফোন ও ব্যাগ রেখে রুবাইয়াত শারমিন যখন শান্তিবাগের বাসার নিচতলা থেকে বেরিয়ে পড়েন, তখন সন্ধ্যা প্রায় সাতটা। এর সাড়ে তিন ঘণ্টা পর সিদ্ধেশ্বরী এলাকায় তিনটি ভবনের মাঝে তাঁর লাশ পাওয়া যায়। মাঝের ওই সময়টা তিনি কোথায় ছিলেন, কী করছিলেন, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানতে পারেনি পুলিশ।
ঘটনাটি তদন্ত করছে রমনা থানা–পুলিশ ও গোয়েন্দা (ডিবি) কর্মকর্তারা। এ ঘটনায় শারমিনের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবদুর রহমানকে (সৈকত) আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। পুলিশের রমনা অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার এস এম শামীম প্রথম আলোকে বলেন, কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছার মতো তথ্য এখনো বের করা যায়নি। তদন্ত চলছে।
গত বুধবার রাতে সিদ্ধেশ্বরী এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক তরুণীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন রাতে স্বজনেরা রমনা থানায় লাশের ছবি দেখে শারমিনের পরিচয় শনাক্ত করেন।
শারমিন রাজারবাগ পুলিশ লাইনস উচ্চবিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে ইংরেজিতে স্নাতক করছিলেন।
শারমিনের মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে গতকাল শনিবার সকালে দ্বিতীয় দিনের মতো স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, শারমিনকে হত্যা করা হয়ে থাকলে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। একই দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে মানববন্ধন করেছে।
শারমিনদের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বিজয়নগর গ্রামে। গত শুক্রবার তাঁকে সেখানে দাফন করার পর থেকে পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে আছেন। গতকাল শারমিনদের গ্রামের বাড়িতে প্রথম আলোর প্রতিবেদক গিয়েছিলেন। তাঁর মা নাহিদা আক্তার বলেন, তাঁর মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারেন না, এটি হত্যাকাণ্ড। আত্মহত্যাকে ঘৃণা করতেন শারমিন।
ঘটনা তদন্তের সঙ্গে যুক্ত পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, আয়েশা কমপ্লেক্সের পঞ্চমতলায় শারমিনের এক বান্ধবী থাকেন। ওই দিন বিকেল পাঁচটায় তিনি বান্ধবীর বাসায় গিয়েছিলেন। সেখানে এক বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যাওয়া নিয়ে তিনি কান্নাকাটি করেন। এরপর তিনি শান্তিবাগে নিজের বাসার পাশে এক ছাত্রীকে পড়াতে চলে যান। ওই বাসার গৃহকর্ত্রী নুরুন নাহার গতকাল মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, শারমিন সেদিন দেরি করে এসেছিলেন। তাঁর মেয়েকে আধা ঘণ্টার মতো পড়িয়েছিলেন।
সিদ্ধেশ্বরীর যে স্থান থেকে শারমিনের লাশ উদ্ধার করা হয়, সেখানে পাশাপাশি তিনটি ভবনের একটি ১২ তলা (আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স)। এর চারতলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক (দোকান, বিভিন্ন অফিস) কার্যক্রম চলে। পঞ্চম তলা থেকে আবাসিক ফ্ল্যাট। আর বাকি দুটি আবাসিক ভবনের একটি তিনতলা, অন্যটি পাঁচতলা। এর মধ্যে পাঁচতলা ভবনের ছাদে টিনের কাঠামো।
মা ও ভাইয়ের সঙ্গে রাজধানীর শান্তিবাগে ভাড়া বাসায় থাকতেন শারমিন। তাঁদের বাসা থেকে হেঁটে আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সে যেতে সময় লাগে বড়জোর ১০ মিনিট। আর ভবনটির পেছনের গলিতে যেখানে তাঁর লাশ পড়ে ছিল, সেখানে যেতে সময় লাগে বড়জোর ১৩ মিনিট। বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বাসার নিচতলা থেকে বেরোনোর পর তিনি যদি সোজা এই এলাকায় চলে আসেন, তাহলে লাশ উদ্ধার পর্যন্ত সাড়ে তিন ঘণ্টা তাঁর অবস্থানের কোনো খবর পাওয়া যাচ্ছে না।