পদত্যাগ করলেই যদি পিয়াজের দাম কমে যায়, তবে তার মন্ত্রিত্ব ছাড়তে এক সেকেন্ডও লাগবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চায়? এক সেকেন্ড লাগবে না আমার পদত্যাগ করতে। কোনো সমস্যা নেই আমার। তবে তাতে কি পিয়াজের দাম কমবে?
আজ রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধকল্পে ব্যবসায়ী সমাজের করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন। আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটি এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আজকেও যারা পিয়াজ আমদানি করছেন, তাদের আমদানিকৃত পিয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৫০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। আগামী ৩ বছরের মধ্যে পিয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। এরপর আমদানি বন্ধ করে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, আমাদের একটু কষ্ট করতে হবে। আমরা এই বিপদটাকে সম্পদে পরিণত করবই করব।
খুব বেশি দিন লাগবে না, আমাদের দেশ এই প্রডাকশনে সেলফ সাফিসিয়েন্ট হবেই হবে।
সংকট মোকাবিলায় পিয়াজ আমদানিতে যাওয়া ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ ও এস আলম গ্রুপের পিয়াজ বাজারে ঢুকতে শুরু করেছে জানিয়ে তিনি বলেছেন, আগামী ৪০ দিনের মধ্যে এক লাখ টন পিয়াজ বাজারে আসবে।
পিয়াজে কোনো মুনাফা না করার প্রতিশ্রুতি দেয়া এই প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি খরচের যে হিসাব দিয়েছে, তাতে কেজিপ্রতি পিয়াজের ব্যয় ৪২ টাকা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। অথচ তা কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। বলেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছি, দরকার হলে আমাগী ৪০ দিনের মধ্যে এক লক্ষ টন পিয়াজ আমি ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাজারে নিয়ে আসব। গত ছয় দিন ধরে মিশর ও তুরস্ক থেকে পিয়াজ ঢুকতে শুরু করেছে। সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ-তারা বলেছে ৫০ হাজার থেকে ৬০ হাজার টন মাল দেবে। সবচেয়ে আনন্দের কথা তারা বলেছে, তারা এক টাকাও প্রফিট করবে না। যত কোটি টাকা লাগে ইনভেস্ট করবে। গত তিন দিন ধরে তারা টিসিবিকে যা দিয়েছে সেটা সর্বমূল্যে খরচ পড়েছে সাড়ে ৪২ টাকা। সেই দামের কস্ট প্রাইসের কাগজ পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছে। তবে সমস্যাটা হয়েছে এই পরিমাণ যথেষ্ট নয় আমাদের বাজার সার্ভ করার জন্য। আমাদের আরো পিয়াজ দরকার।
যৌক্তিক লাভ রেখে বাজারে পিয়াজ ছাড়তে ব্যবসায়ীদের মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, সিটি বা মেঘনা গ্রুপ যে পিয়াজ দিচ্ছে, এর বাইরেও কিছু কিছু পিয়াজ চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ঢুকছে। তার মূল্যও কিন্তু কোনো অবস্থায় ৪০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু তারা তো বিক্রি করছে বেশি, আপনাদের সেই মানবিক মুল্যবোধটা কোথায়?
একটাই পথ সেটি হচ্ছে যথেষ্ট পরিমাণে আমদানি করে এই ধরনের মুনাফা লোভী; যারা দুর্ভিক্ষের সামনে, ক্রাইসিসের সামনেও নিজেদের মূল্যবোধকে জাগ্রত করে না, তারা ব্যবসায়ী হতে পারে না। দেশের মানুষকে অভুক্ত রেখে, ক্রাইসিসে রেখে আপনারা প্রফিট করেন সমস্যা নাই, লজিক্যাল প্রফিট করেন। ৫ টাকা লাভ রেখে বাজারে পিয়াজ ছাড়েন। এরপরও বাজারে পিয়াজের কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা হবে।
ঢাকার বাজারে দেশি পিয়াজের পাশাপাশি মিশর, তুরস্ক, চীন ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করা পিয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। দেশি পিয়াজের কেজি আড়াইশ টাকার আশপাশে, আর এসব পিয়াজের কোনোটাই দেড়শ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। পিয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির পেছনে ব্যবসায়ীদের আরো সুযোগ নেয়ার কথা জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২৯শে সেপ্টেম্বর যখন ভারত পিয়াজ বন্ধ করে দিল, সেদিন সন্ধ্যার সময়ে ঢাকার বাজারে পিয়াজের দাম বাড়ার কথা নয়। পিয়াজ তো তখন স্টকে ছিল, কোনো কোনো ব্যবসায়ী সঙ্গে সঙ্গে সেই সুযোগটা নিয়ে নিয়েছে।