গাজীপুর: : আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘দল ভারী করার জন্য খারাপ লোকদের কেউ দলে আনবেন না। এই খারাপ লোকেরা বসন্তের কোকিল। বসন্ত আসলে আসবে, ক্ষমতা চলে গেলে ৫ হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও এদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে গাজীপুর শহরের রথখোলায় শহীদ বরকত স্টেডিয়ামে গাজীপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে দিক নির্দেশনা মূলক বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সুবিধাবাদীদের দল নয়। আওয়ামী লীগ আর্দশের দল। কমিটি করতে গিয়ে পকেট কমিটি গঠন করবেন না। ত্যাগী কর্মীদের বঞ্চিত করবেন না।’
নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, আপনারা ধৈর্য ধরে দলের জন্য কাজ করুন। দল কাউকে বঞ্চিত করবে না। পর্যায়ক্রমে সকলে দলের সুবিধা ভোগ করবেন।
“আমার আরও বহু আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কথা ছিল। আমি হতাশ হইনি। ধৈর্য ধরে কাজ করেছি; জাতির জনকের কন্যা ঠিকই আমাকে এতো বড় একটি দলের মহান দায়িত্ব দিয়েছেন। এই দলের সাধারণ সম্পাদক হওয়া অনেক বড় ব্যাপার। অনেক সম্মানের বিষয়।”
তিনি বলেন, আপনারা দলের জন্য ধৈর্য সহকারে কাজ করে যান। মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করুন। দেশে অনেক উন্নয়ন হচ্ছে- এই উন্নয়নের কোনও দাম নেই, মূল্য নেই মানুষের সাথে ভালো আচরণ না করলে।
“ঘরের মধ্যে ঘর করবেন না। মশারির ভেতর মশারি টানাবেন না। সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দলের জন্য কাজ করুন। আদর্শের শিকলে থাকলে আওয়ামী লীগ বাঁচবে, মানুষ বাঁচবে।”-বলেন কাদের।
পরিবহন মালিক-শ্রমিক অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ জানিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী বলেন, “সড়কের যে আইন করা হয়েছে, সে আইনটি আপনারা মেনে চলুন। সড়কে-পরিবহনে শৃঙ্খলা দরকার। কাউকে শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়, সড়কে শৃঙ্খলার জন্য আমরা এ আইন করেছি। শেখ হাসিনা আইন করেছেন কাউকে শাস্তি দিতে নয়, সড়কে-পরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য। আইন প্রয়োগে বাড়াবাড়ি হবে না।”
তিনি বলেন, ‘আপনাদের অনুরোধ করবো- ধর্মঘট করে মানুষকে কষ্ট দেবেন না। আইন মেনে চলুন। এ আইন কারো ক্ষতি করবে না। এ আইন জনস্বার্থে করা হয়েছে।’
কাদের বলেন, ‘বিএনপির আজ আর কোনো ইস্যু নাই। বিএনপির এখন বেলা শেষ। শেষ বেলায় বিএনপি নেতারা ইস্যু খুঁজে বেড়াচ্ছেন। একটার পর একটা ইস্যু খুঁজে বেড়াচ্ছে। শেখ হাসিনা সঙ্গে সঙ্গে অ্যাকশন নিচ্ছেন, ঘরের লোকের বিরুদ্ধেও। কাজেই বিএনপির হাতে কোনো ইস্যু আমরা দেব না, দেব না।’
তিনি দ্রব্যমূল্যে বৃদ্ধির বিষয়ে বলেন, পিঁয়াজের দাম ইতোমধ্যে নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। লবণের দাম বাড়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। কেউ যদি সিন্ডিকেট করে লবণের দাম বাড়াতে চায় সেই সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এবার ভারত সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী সমঝোতা স্মারকে সই করেছেন। কোনও চুক্তি হয়নি। বিএনপি মনে হয় চুক্তি ও সমঝোতার পার্থক্য বুঝে না। চুক্তি ও সমঝোতা এক নয়।’
“ভারতের আনুগত্যের জন্য বিএনপি বার বার ভিক্ষা চেয়েছে। আমরা ভারতের আনুগত্য চাই না। ভারতের সঙ্গে আমরা বন্ধুত্ব করেছি।”
বিএনপি ক্ষমতার জন্য বিদেশে ঘুরছে জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বিদেশে ঘুরে নয়, দেশের মানুষের পিছনে ঘুরে পুনরায় ক্ষমতায় আসবে।
ওবায়দুল কাদের নিজের অসুস্থ্যতার কথা মনে করিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী অভিভাবক হয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমি হয়তো আপনাদের মাঝে আর ফিরে আসতে পারতাম না। দেশের প্রত্যেকটি মসজিদ, গির্জার আমার সুস্থ্যতার জন্য দোয়া হয়েছে। সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
প্রতিনিধি সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজ্জামেল হক। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম।
সভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ-প্রচার সম্পাাদক মো. আমিনুল ইসলাম, ইকবাল হোসেন অপু এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্যাহ খান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, সিমিন হোসেন রিমি এমপি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ এমপি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, মহিলা শ্রমিক লীগের কার্যকরি সভাপতি শামসুন্নাহার এমপি।