গাজীপুর: গাজীপুরের অনুর্ধ ১৮ ক্রিকেট দলের অধিনায়কসহ সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত দু’এসএসসি পরীক্ষার্থীর লাশের ময়নাতদন্ত দেরী হওয়ার অভিযোগে নিহতদের বন্ধু-বান্ধব ও স্বজনরা মঙ্গলবার দুপুরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসককে লাঞ্চিত করেছে। তারা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের অফিসের জানালার কাঁচসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করেছে।
এ ঘটনার জেরে ক্ষুব্ধ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী-কর্মচারীরা নিহতের স্বজনদের মারধর করেছে। এতে নিহত ক্রিকেটারের চাচা মানিক চন্দ্র দেবনাথসহ দু’জন আহত হয়েছেন। হামলাকালে তিন বহিরাগত হামলাকারীকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ভোগড়া বাইপাস মোড় সংলগ্ন পেয়ারা বাগান এলাকায় সোমবার দুপুরে লরি চাপায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন মোটর সাইকেল আরোহী গাজীপুরের অনুর্ধ ১৮ ক্রিকেট দলের অধিনায়ক জয়দেব নাথ (১৮) ও তার বন্ধু সজিব হাসান (১৮)। তারা দু’জনই স্থানীয় আব্দুল মজিদ মডেল স্কুলের এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। ওই দিন দুপুরে পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পরদিন মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ২০ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও ময়না তদন্ত সম্পন্ন না হওয়ায় নিহতদের লাশ মর্গে পড়ে থাকে।
এতে লাশ গ্রহণের জন্য হাসপাতালের সামনে অপেক্ষমাণ নিহতদের বন্ধু বান্ধব ও স্বজনরা ক্ষুব্ধ হয়। এসময় তারা দ্রুততম সময়ে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন না করার অভিযোগে হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে থাকে। একপর্যায়ে কিছু যুবক উত্তেজিত হয়ে ওই হাসপাতাল ভবনে প্রবেশ করে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস জানান, সোমবার দুপুরে হাসপাতালের মর্গে দুটি লাশ ময়নাতদন্তের জন্য আসে। বিষয়টি তিনি মঙ্গলবার সকালে জানতে পারেন। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে তিনি ওই লাশ দু’টির ময়নাতদন্তের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এসময় ২০-২৫ জন বহিরাগত যুবক এসে এক সঙ্গে তার অফিস কক্ষে প্রবেশ করে ডাক্তার খুঁজতে থাকে। আগত যুবকদের তিনি নিজেকে ডাক্তার পরিচয় দিলে ওই যুবকরা কিছু বুঝে উঠার আগেই মারধর শুরু করে। কেউ কেউ লাঠি সোটা খুঁজতে থাকে।
হাসপাতালের কর্মচারীরা জানান, হামলাকারীরা আবাসিক চিকিৎসকের অফিস কক্ষের টেবিল ভাংচুর ও কাগজপত্রসহ বিভিন্ন মালামাল তছনছ করে। হামলাকারীরা এসময় অফিস সহায়ক জাহিদকেও মারধর করে। একপর্যায়ে উত্তেজিত যুবকদের হাত থেকে রক্ষা পেতে তিনি দৌড়ে দ্বিতীয় তলায় অধ্যক্ষের অফিস কক্ষে গিয়ে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা তার পিছু নিয়ে সেখানেও গিয়ে তাকে লাঞ্চিত করে এবং অধ্যক্ষের অফিসের জানালা, ফুলের টবসহ বিভিন্ন মালামাল ভাংচুর করে। পরে তিনি একটি কক্ষে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে রক্ষা পান।
এদিকে বহিরাগতরা হাসপাতালে হামলা চালিয়ে চিকিৎসক ও কর্মচারীকে লাঞ্চিত এবং কলেজের আসবাবপত্র ভাংচুরের খবর পেয়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাশ ছেড়ে বেরিয়ে আসে। শিক্ষার্থীরা ধাওয়া দিয়ে বহিরাগত তিন হামলাকারীকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। এরা হলো- অন্তর (১৭), শান্ত (২০) ও বোরহান (১৮)।
নিহতদের স্বজনরা জানান, ঘটনার পর মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের কয়েক শিক্ষার্থী ও কর্মচারী মর্গের সামনে গিয়ে লাশ গ্রহণের জন্য অপেক্ষমাণ নিহতদের কয়েক স্বজনকে মারধর করে। এতে নিহত ক্রিকেটারের চাচা মানিক চন্দ্র দেবনাথসহ দু’জন আহত হন। খবর পেয়ে সদর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জিএমপি’র সদর থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, সোমবার সড়ক দূর্ঘটনায় নিহত দু’স্কুল ছাত্রের লাশের ময়না তদন্ত করতে দেরী হওয়ার অভিযোগে তাদের বিক্ষুব্ধ স্বজনরা হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসকের উপর হামলা চালিয়েছে। এ সময় মেডিকেল কলেজের ছাত্র-কর্মচারী ও দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা হামলাকারী তিন যুবককে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।
এ ব্যাপারে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।