ডেস্ক | অবরুদ্ধ জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে কাপুরুষ আখ্যায়িত করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। শুক্রবার এ উপলক্ষে মুজাফফরাবাদে বিশাল এক র্যালিতে তিনি বক্তব্য রাখেন। এ সময় ইমরান খানের কণ্ঠে ঝরে পড়ে ক্ষোভ। ৪০ দিনের ওপরে অবরুদ্ধ কাশ্মীরিদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করে তিনি জ্বালাময়ী বক্তব্য রাখেন। এতে কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি। তিনি বলেন, আমি কাশ্মীরি জনগণের একজন দূত। এ জন্যই যে, আমি একজন পাকিস্তানি, একজন মুসলিম এবং একজন মানুষ। কাশ্মীর ইস্যু এখন মানবিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইমরান খানের ওই র্যালিতে জনতার ঢল নেমেছিল। সেখানে তাকে স্বাগত জানানোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন ইমরান। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডন।
কাশ্মীরি জনগণের দুর্দশা, তাদের ওপর নির্যাতনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির উদ্দেশে ইমরান বলেন, মানবজাতির বিরুদ্ধে এমন নিষ্ঠুরতা চালাতে পারে শুধু একজন কাপুরুষ। দখলীকৃত কাশ্মীরে জনগণের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালাচ্ছে ভারতের ৯ লাখ সেনা সদস্য। একজন সাহসী মানুষ কখনো এটা করতে পারেন না। আপনারা যে মাত্রায়ই অবিচার করুন না কেন তাতে কিছু এসে যায় না। শেষ পর্যন্ত কখনোই আপনারা সফলকাম হবেন না। কাশ্মীরি জনগণ- হোন তিনি নারী, শিশু বা বয়স্ক, তারা এখন আর মৃত্যুকে ভয় পান না।
নরেন্দ্র মোদির পূর্ব ইতিহাস তুলে ধরে ইমরান বলেন, আমাদের সবার জানা উচিত যে, শৈশব থেকেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) একজন সদস্য ছিলেন মোদি। আরএসএস হলো একটি হিন্দুত্ববাদী উগ্র গ্রুপ। তারা মুসলিম, খ্রিস্টান এবং সব সংখ্যালঘুদের ঘৃণা করে। তারা বিশ্বাস করে হিন্দু আধিপত্য। মুসলিমদের তারা ঘৃণা করে। কারণ, মুসলিমরা শত শত বছর ধরে ভারত শাসন করেছেন। হিটলারের নাৎসী বাহিনী যে পথে হেঁটেছে ঠিক সেই একই পথে হাঁটছে তারা। নাৎসী বাহিনী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালিয়েছিল। আরএসএস গঠন হওয়ার সময় থেকেই তারা মুসলিম জাতিকে (ভারতে) নিধন করতে চেয়েছে। তারা ভারতকে মুসলিমমুক্ত করতে চেয়েছে। এসবই তাদের পরিকল্পনামতো করা হয়েছে।
ইমরান খান আরো বলেন, এখন কাশ্মীর ইস্যু আন্তর্জাতিকীকরণ করা হয়েছে। ৫০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো কাশ্মীর ইস্যুতে জরুরি বৈঠক হয়েছে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে। প্রথমবারের মতো ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন বলেছে, জাতিসংঘের রেজ্যুলুশন অনুযায়ী কাশ্মীর সমস্যার সমাধান হওয়া উচিত। ওআইসি কাশ্মীর থেকে কারফিউ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে বলেছে, ভারতের উচিত কারফিউ প্রত্যাহার করা। বৃটেনে কমপক্ষে ৪০ জন এমপি কাশ্মীর ইস্যু উত্থাপন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটররা এ ইস্যুতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি লিখেছেন। ওই চিঠিতে তারা ট্রাম্পকে কাশ্মীর ইস্যুতে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ জন্য আমি সন্তোষ প্রকাশ করছি। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যাচ্ছি আমি। কাশ্মীরি জনগণকে আমি হতাশ করবো না। প্রতিটি আন্তর্জাতিক প্লাটফরমে এই ইস্যু উত্থাপন করবো। যদি সম্ভব হয়, তাহলে শনিবার আল জাজিরা টেলিভিশনে প্রচারিত আমার সাক্ষাতকার দেখুন।
ইমরান খান আরো বলেন, প্রথমেই আমি ভারতকে বলতে চাই, আপনারা মানুষকে কট্টরপন্থার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। যদি আপনারা আমার প্রতি অবিচার করেন, আমার পরিবারের নারী ও শিশুদের প্রতি অবিচার করেন, আমি তার বিরুদ্ধে লড়াই করবো। কারণ, আমাকে তখন ভাবতে হবে জীবনের চেয়ে মৃত্যু অধিকতর উত্তম। এটা শুধু কাশ্মীরিদের জন্য নয়, সব মানুষের জন্যই প্রযোজ্য। ইমরান খান ভারতের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনারা এসবের মধ্য দিয়ে ভারতের মুসলিমদের কাছে কি বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন? তাদেরকে কি বলতে চাইছেন ভারতে তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকের মতো, প্রাণীদের মতো বাঁচতে হবে? আপনারা কি তাদেরকে বলতে চাইছেন, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি অঞ্চলে ৯ লাখ সেনা মোতায়েন করে তাদেরকে নিষ্পেষণ করতে পারেন, যে সেনারা শিশুদের অন্ধ করে দিচ্ছে, নারী ও বয়স্কদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছে?
এদিন বক্তব্য দিতে গিয়ে ইমরান খানের কণ্ঠ অগ্নিঝরা হয়ে ওঠে। তিনি বলেন, বিশ্বের ১২০ কোটি মুসলিম কাশ্মীর পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে আছে। তাদেরকে উগ্রপন্থার দিকে ঠেলে দেয়া হবে এর মাধ্যমে। ইসলাম অর্থ শান্তি। আমরা শান্তিপূর্ণ মানুষ। কিন্তু যখন আপনি দেখবেন আপনার লোকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে আর বিশ্ব নীরব, তখন আপনাকে রুখে দাঁড়াতে হবে। তিনি আরো বলেন, যখন কাশ্মীরি এক যুবক নিজেকে উড়িয়ে দিয়েছিল তখন এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল ভারত। কারণ, ভারত বিশ্বকে এ কথা বলতে চায়নি যে, ভারত সরকারের বর্বরতা কাশ্মীরিদের উগ্রবাদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। ইমরান খান বলেন, এর জন্য তারা আমাদেরকে দায়ী করে। তাদের যুদ্ধবিমান পাঠায়। তাদের যুদ্ধবিমানকে তখন আমাদের বিমানবাহিনী ভূপাতিত করেছে। আটক করেছিল তাদের পাইলটকে। তাকে আমরা ফেরত দিয়েছি। কারণ, আমরা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান চেয়েছি। জবাবে ভারত বলেছে আমরা নাকি ভয় পেয়েছিলাম। তাই তাদের পাইলটকে ফেরত দিয়েছি। বিশ্বাসীরা কখনো মৃত্যুকে ভয় পায় না। ভারতকে উদ্দেশ্য করে ইমরান বলেন, আপনাদের ভয়ে আমরা ওই পাইলটকে ফেরত দিইনি। তারা আবার একটি প্রচারণা শুরু করেছে। বলছে, পাকিস্তান নাকি ভারতে জঙ্গি পাঠাচ্ছে। আমি এর আগেও বলেছি। আবারও বলছি প্রতিটি বিষয়ে জবাব দেব। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি এই ভারতীয় হিটলারকে থামানোর জন্য।
ইমরান খান আরো বলেন, আমরা চাই কাশ্মীর সমস্যার সমাধান জাতিসংঘ রেজ্যুলুশনের অধীনে। কাশ্মীরি জনগণ কি চান তাদের সেটা বেছে নেয়ার অধিকার আছে গণভোটের মাধ্যমে। কাশ্মীরিদের এই চাওয়া-পাওয়ার বিষয়ে আমরা তাদেরকে সমর্থন করবো। আজাদ কাশ্মীরে সমবেত যুব সম্প্রদায়ের উদ্দেশে বক্তব্যের শেষে ইমরান খান বলেন, আমি জানি তোমরা নিয়ন্ত্রণ রেখার দিকে অগ্রসর হতে চাও। কিন্তু আমি না বলা পর্যন্ত এটা করবে না। প্রথমে আমাকে জাতিসংঘে যেতে দাও। সেখানে কাশ্মীর নিয়ে লড়াই করতে দাও।
উল্লেখ্য, ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বেশ কিছু সেলিব্রেটিও। এর মধ্যে রয়েছেন শেহজাদ রয়, ফকির মেহমুদ, জাভাইদ শেখ, হুমায়ুন সাঈদ পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেট অধিনায়ক শাহিদ আফ্রিদি প্রমুখ।