রাতুল মন্ডল,শ্রীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরে শিল্পের আগ্রাসণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে একের পর এক খাল-নদী ফসলি জমি। জেলার শ্রীপুরে প্রাচীন লবলঙ্গ ও গড়গড়িয়া খালসহ আশে পাশে ধানি জমি ভরাট করে অসংখ্য শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হচ্ছে। যার ফলে এই উপজেলায় পৌরসভাসহ, পাথার, নয়নপুর, ধনুয়া, বহেরারচালা, বেলতলী, নগরহাওলাসহ প্রায় ৫০টি গ্রামের ৪ লাখ মানুষের ভোগান্তি দিন দিন বেড়েই চলেছে। পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ, বিভিন্ন শিল্প কারখানার অপরিশোধিত রাসায়নিক মিশ্রিত পানি,দূষণ ও জলাবদ্ধতার কারণে সারা বছরই জলযট-দূষণ লেগেই থাকে। এবং প্রায় এক হাজার কৃষি ধানি জমি বিলপ্তির পথে।
ঐতিহ্যবাহী লবলঙ্গ খালটি ময়মনসিংহের ভালুকা পারুলিয়া নদী হতে শুরু করে শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ও মাওনা ইউনিয়ন এবং শ্রীপুর পৌরসভার মধ্যে দিয়ে প্রভাহিত হয়ে গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর বাজারের পাশে তুরাগ নদী, গাজীপুরের কালিয়াকৈর ফুলবাড়ীয়া হতে গোয়ালো নদী ও মাওনা ইউনিয়নের শেষ প্রান্ত বদনীভাঙ্গা হতে সালদহ্ নদী ৩টি নদীর মহনায় হাজার বছরের ইতিহাসের অংশ গাজীপুরের ,শ্রীপুরের লবলঙ্গ খাল মিলিত হয়েছে। কয়েক বছর আগেও প্রায় ৮০ কি.মি দৈর্ঘ্য লবলঙ্গ খালের দুই পাশে ছিল কৃষি আবাদি নিচু জমি প্রায় ২৫ হাজার একর (৩,৩৩৪ হেক্টর)। এসব জমিতে বৎসয়ে প্রায় ৫০ হাজার ম্রে্রঃ টন) ধান চাষ করে ঘরে তুলতেন কৃষক। বর্তমানে লবলঙ্গ খাল ভরাট সহ আশেপাশে ধানি ফসলী জমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কারণে খালটি প্রায় ভরাট হয়ে মৃতপ্রায় বন্ধ হয়ে গেছে পানি নিষ্কাশনের পথ। বর্তমানে পৌরসভার ময়লা আবর্জনা ফেলে খালটির পানি আরও দূষিত হয়ে যাচ্ছে। গত ৫ বৎসরে প্রায় ২ হাজার হেক্টর ফসলী ও ধানী জমি বিলপ্তি হয়ে গেছে।
শুক্রবার স্বরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, লবলঙ্গ গড়গড়িয়া খালের দুই পাশে অসংখ্য শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দখল ও ভরাট করে কৃষি জমিতে নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে পড়ছে। কারখানার বিষাক্ত বর্জ্য মিশ্রিত পানি সরাসরি ওই খালে গিয়ে পড়ছে। যার ফলে কৃষকের আবাদি জমি, পাট, বিভিন্ন তরিতরকারী ও কৃষকের চাষ করা খামারের মাছ ও গবাদিপশু বিনষ্ট হচ্ছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঘেঁষা শ্রীপুর পৌরসভার গড়গড়ীয়া মাষ্টারবাড়ী ব্রীজের পাশে গড়গড়ীয়া খাল এবং মহাসড়কের পাশে পৌরসভার ময়লা ফেলা হচ্ছে। এক দিকে শিল্প কারখানার বর্জ্য আরেক দিকে পৌরসভার ময়লার সংমিশ্রনে খালের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে।
এই ব্যাপারে গড়গড়িয়া মাস্টার বাড়ী বসবাসকারী এ.কে মেমোরিয়াল হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডাঃ সফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, চর্ম রোগ. শ্বাস কষ্ট, লান্সের সমস্যা সহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে অত্র এলাকার জনসাধারন।
এ দিকে আনসার রোড ধরে তিন কিলোমিটার ভেতরে ঢুকলে দেখা মিলে লবলঙ্গ খালের উপর ‘এক্স সিরামিক্স’ নামে একটি লিল্প প্রতিষ্ঠানের বাউন্ডারী ওয়াল। খোঁজ নিয়ে জানা যায় কিছুদিন পূর্বে খাল দখলের দায়ে ওই প্রতিষ্ঠানকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন গাজীপুর জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ দিকে এক্স সিরামিক্স কারখানার ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান খাল দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন,‘খালের দু’পাশের জমিই আমাদের। এই কারখানায় পাঁচ বছর আগে যখন যোগদান করি তখন এটি ছিল একটি মরা খাল। নক্সা অনুযায়ী খালের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়েই আমরা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছি।
লবলঙ্গ খালের দু’পাশে নির্মিত, সেলবো ক্যামিকেল, ডেকো ফ্যাশন, ক্রাউন কটন, রিদিশা, জারবা-১, জারবা-২, এশিয়া কম্পোজিট, হাছিন সুয়েটার ও ওয়াসিংসহ প্রায় ২৫টি কারখানার অপরিশোধিত রাসায়নিক মিশ্রিত দূষিত কালো রং এর পানির ওই খালে এসে মিশেছে। মাওনা বাজার ব্রিজ থেকে ধনুয়া সাতআনি ব্রিজ পর্যন্ত বিশাল ধানী জমি পাথার নামে পরিচিত। আর এই পাথারের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে লবলঙ্গ খাল। দখল আর দূর্ষণে দুই দিকে ফসলি জমিতে প্রবেশ করে রাসানিক মিশ্রিত পানি।
সরকার কৃষি জমিতে স্থাপনা নির্মান সম্পূর্ন নিষিদ্ধ করে কৃষি জমি সু-রক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন ২০১১- এর খসরা তৈরী করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, কৃষিজমি নষ্ট করে বাড়িঘর, শিল্পকারখানা,ইট খলা এবং অন্যান্য অকৃষি স্থাপনা নির্মান করা যাবে না। কেই আইন অমান্য করলে সর্বোচ্চ দুই বৎসরের কারাদন্ড অথবা সর্বনিম্ব ৫০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ড দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। অথচ উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় নির্বাচিত পৌরসভার মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গণ, ট্রেড লাইসেন্স অনা আপত্তি পত্র শিল্প কারখানার মালিকগন কে প্রদান করছেন। ফলে উক্ত উপজেলার কৃষি জমি দারুণভাবে ব্যহত হচ্ছে।
এই ব্যপারে শ্রীপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার শেখ মো. শামছুল আরিফিন বলেন, শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নদী-খাল দখল করে শিল্প প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুয়ীদুল হাসান বলেন, মাওনা পাথার লবলঙ্গ খাল ও গড়গড়ীয়া খালের দু পাশে ৩,৩৩৪ হেক্টর কৃষি আবাদি জমি রয়েছে। প্রায় এক হাজার হেক্টর কৃষি ধানি জমি শিল্পকারখানা ও ভরাট করে বিলপ্তির পথে। এই সকল শিল্পকারখানা বন্ধ করার জন্য উপজেলার সমন্বয় সভায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছি। যেহেতু ব্যাপারটি প্রশাসনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
এ দিকে এক্স সিরামিক্স কারখানার ব্যবস্থাপক হাবিবুর রহমান খাল দখলের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন,‘খালের দু’পাশের জমিই আমাদের। এই কারখানায় পাঁচ বছর আগে যখন যোগদান করি তখন এটি ছিল একটি মরা খাল। নক্সা অনুযায়ী খালের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিয়েই আমরা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করছি।
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুস ছালাম জানান,‘গড়গড়িয়া ও লবলঙ্গ খালের উপর ময়লা ফেলা এবং শিল্পপ্রতিষ্ঠানের তরল বর্জ্য সরাসরি খালে ফেলার বিষয়টি দেখবো। আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’