শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চান্দনি গ্রামে ইয়াকুব ছৈয়াল (৫৫) নামে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের আরশেদ আলী ছৈয়ালের ছেলে। সোমবার সকাল নয়টার দিকে তাকে কুপিয়ে আহত করা হয়। চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেয়ার পথে দুপুরে তার মৃত্যু হয়।
ওই ব্যক্তি স্থানীয় চান্দনি বাজারের ইট-বালুর ব্যবসায়ী ছিলেন। এলাকার আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করেছে বলে অভিযাগ পাওয়া গেছে।
নড়িয়া থানা ও গ্রামবাসী সূত্র জানায়, নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর ইউনিয়নের একটি গ্রাম চান্দনি।
ওই গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় ছৈয়াল বংশ ও ঢালী বংশের মানুষের মধ্যে দীর্ঘদিন যাবৎ বিরোধ রয়েছে। প্রায়ই দুুই বংশের মানুষদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটত। সর্বশেষ গত এপ্রিল মাসে ঢালী বংশের সালামত ঢালী, আবু সিদ্দিক ঢালী ও আবু আলেম ঢালীকে কুপিয়ে আহত করা হয়। ওই ঘটনায় করা মামলার প্রধান আসামী ছিলেন ইয়াকুব ছৈয়াল। হামলার পর ঢালী বংশের মানুষ প্রতিশোধ নেয়ার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। ইয়াকুব ছৈয়াল চান্দনি বাজারে ইট-বালুর ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি ছৈয়াল বংশের রাজনীতিকে নেতৃত্ব দিতেন। সোমবার সকাল নয়টার দিকে চান্দনি কীর্তিনাশা নদীর তীরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে মোটর সাইকেল নিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন ইয়াকুব। যাওয়ার পথে চান্দনি-ভোজেশ্বর বাইপাস সড়কে ঢালী বংশের লোকজন তার মোটর সাইকেল গতিরোধ করেন।
ইয়াকুব ছৈয়ালের পরিবারের অভিযোগ, নাসির ঢালীর নেতৃত্বে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী তাকে কুপিয়ে আহত করে এবং তারা এলাকায় আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য ৪-৫টি ককটেল বোমার বিস্ফারণ ঘটায়। ইয়াকুবকে বাঁচাতে ছুটে আসেন তার স্ত্রী শিরিন বেগম। সন্ত্রাসীরা তাকেও কুপিয়ে আহত করে। গ্রামবাসী ইয়াকুবকে উদ্ধার করে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পর অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকায় নেয়ার পথে মুন্সিগঞ্জের নিমতলা এলাকায় পৌঁছলে দুপুর ১টার দিকে তিনি মারা যান।
ইয়াকুব ছৈয়ালের ভাই সোহরাব আলী ছৈয়াল বলেন, ”আমার ভাই ব্যবসা-বাণিজ্যর পাশাপাশি এলাকার শান্তি শৃংখলার জন্য বিচার-সালিশ করতো। বিভিন্ন অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করত। ওই কারণে ছৈয়াল বংশের মানুষরা আমাদের উপর ক্ষুব্ধ ছিল। তাদের ‘শেল্টার’ দিতেন ভোজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলী আহম্মেদ সিকদার। সোমবার পরিকল্পিতভাবে আমার ভাইয়ের মোটর সাইকেল থামিয়ে সারা শরীর জুড়ে কুপিয়ে আহত করে। তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য শরীরের উপর চারটি ককটেল বোমারও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। ” তার দাবি, নাসির ঢালীর নেতৃত্বে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী আমার ভাইকে হত্যা করেছে।
অভিযুক্ত নাসির ঢালীকে এলাকায় পাওয়া যায়নি। ইয়াকুব ছৈয়ালের মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে ঢালী বংশের অধিকাংশ পরিবার এলাকা থেকে পালিয়েছে।
ভোজেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল হক বেপারী বলেন, সকাল ১০টার দিকে ইয়াকুব আলী ছৈয়াল তার বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে কলাবাগান যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে আবু সিদ্দিক ঢালীর বাড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ইয়াকুব ছৈয়ালের মোটরসাইকেলের গতি রোধ করে তাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে প্রতিপক্ষের লোকজন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। ঢাকা নেয়ার পথে ইয়াকুব আলী ছৈয়াল মারা যান।
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মঞ্জুরুল হক আকন্দ বলেন, ছৈয়াল বংশ ও ঢালী বংশের মধ্যে পূর্ব থেকেই বিরোধ ছিল। দুপক্ষের বিরুদ্ধেই থানায় মামলা রয়েছে। পূর্ব শত্রুতার জেরেই ইয়াকুব ছৈয়ালকে হত্যা করা হয়েছে। অভিযুক্তদের আটক করার জন্য পুলিশ চেষ্টা করছে। এখনো থানায় কোন মামলা করা হয়নি। ইয়াকুবের লাশ শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।