সরকারি-বেসরকারি খাতের যৌথ প্রচেষ্টায় দেশের অর্থনীতি একটি শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষ বণিক সমিতি এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ।
তিনি জানান, অর্থনীতি ভালো অবস্থানে থাকায় মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১১৯০ ডলারে। মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ।
মঙ্গলবার দুপুরে অফিসার্স ক্লাবে এফবিসিসিআইয়ের বার্ষিক সাধারণ সভায় অর্থনীতির এ ভালো অবস্থানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশের শিল্পায়নের স্বার্থে সুদের হার যৌক্তিক হারে নিয়ে আসার জন্য এফবিসিসিআই প্রতিনিয়ত আহ্বান জানাচ্ছে। এফবিসিসিআইয়ের প্রচেষ্টায় সুদের হার বর্তমানে কমে আসছে। এ সুদের হারকে আরো সহনীয় পর্যায়ে অর্থাৎ সিঙ্গেল ডিজিটে নিয়ে আসার জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ছাড়াও ফরমালিনের অপব্যবহার রোধ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, জাল নোটের ব্যবহার রোধ, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নে এফবিসিসিআই গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এফবিসিসিআইয়ের প্রচেষ্টায় সরকার ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়ন করেছে।’
কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহসভাপতি মনোয়ারা হাকিম আলী, সহসভাপতি হেলাল উদ্দিন, এফবিসিসিআই পরিচালকবৃন্দ এবং এফবিসিসিআই সাধারণ পরিষদ সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়াতে ব্যবসা-বান্ধব ও বাস্তবায়নযোগ্য মূসক আইন প্রণয়নের জন্য এফবিসিসিআই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। মূসক আইন বিষয়ে এফবিসিসিআইয়ের প্রস্তাবগুলো ইতিবাচকভাবে উপলব্ধি করে সরকার একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করেছে। সরকার ও এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত এ কমিটি সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কাজ করছে। আশা করা যাচ্ছে, মূসক আইনের সংস্কার বিষয়ে এ কমিটি বাস্তবসম্মত সুপারিশমালা প্রণয়ন করবে। আইন পাশ হওয়ার পরও তা সংশোধনের বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা একটি ব্যতিক্রমধর্মী প্রয়াস। এফবিসিসিআইয়ের অব্যাহত প্রচেষ্টার কারণেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।’
এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরেন। তিনি জানান, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ ও মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১১৯০ মার্কিন ডলারে। জিডিপিতে সেবাখাতের অবদান ৫৪ দশমিক ৫ শতাংশ, শিল্প খাতের ২৯ দশমিক ৬১ শতাংশ এবং কৃষিখাতের অবদান ১৬ দশমিক ৩৩ শতাংশ। রেমিটেন্স এসেছে ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হয়েছে প্রায় ২২ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দেশে মোট ৪৯৮৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগের মধ্যে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ৩৭২০২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরে মোট রপ্তানি ছিল ৩০ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে রপ্তানি হয়েছে ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরে মোট আমদানি ছিল ৪০ দশমিক ৬২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি ১৯ দশমিক ১৭ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) আমদানি হয়েছে ১৩ দশমিক ৮০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ২১ শতাংশ।
এফবিসিসিআইয়ের সাধারণ পরিষদ সদস্যবৃন্দ মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বাধ্যতামূলক সদস্যপদ নিশ্চিত করার মাধ্যমে এফবিসিসিআইয়ের অধিভূক্ত বিভিন্ন জেলা চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনগুলোর ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এ ছাড়া সদস্যবৃন্দ শিল্পায়নের লক্ষ্যে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের জন্য এফবিসিসিআইয়ের মাধ্যমে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। এ ছাড়া এফবিসিসিআইসহ অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনের সংস্কার, দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির জন্য পর্যাপ্ত কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন, বিনিয়োগ বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়ে সদস্যগণ তাদের মতামত তুলে ধরেন।