রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে আফসোস জাগানিয়া হার

Slider খেলা


ডেস্ক: ব্যাটিংয়ে আর যদি ২০-৩০টা রান বেশি হতো; মুশফিক যদি টেইলরের রান-আউটটা মিস না করতেন, মিসফিল্ডিং যদি না হতো; ৫০-৫০ চান্সগুলো যদি নিজেদের পক্ষে নেওয়া যেত- এমন অনেকগুলো আক্ষেপ আজ জড়িয়ে রইল টাইগারদের পরাজয়ে। মাত্র ২৪৪ রানের পুঁজি নিয়েও যে শেষ পর্যন্ত লড়াই করা যায়; তার সাক্ষর আজ রেখেছে টাইগাররা। নিউজিল্যান্ড জয় পেয়েছে ২ উইকেটে। এজন্য ৪৭.১ ওভার পর্যন্ত তাদের লড়তে হয়েছে। দিনশেষে অধিনায়ক মাশরাফির একটা কথারই প্রতিধ্বনি শোনা যাবে- পরাজয় ১ রানের হোক আর ১০০ রানের হোক- তাতে কিছু যায় আসে না; পরাজয় তো পরাজয়ই।

লন্ডনের দ্য ওভালে বাংলাদেশের দেওয়া ২৪৫ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে মাশরাফিকে বাউন্ডারি মেরে ইনিংস শুরু করেন মার্টিন গাপটিল। ১৪ বলে ২৫ রান করে ফেলা এই মারকুটে ওপেনারকে থামান সাকিব। তার বলে ক্যাচ নেন তামিম ইকবাল। অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন নামার পরেই জোড়ালো লেগ বিফোর উইকেটের আবেদন হয়। বাংলাদেশ রিভিউও নেয়। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায় সেটা আউট ছিল না। অপর ওপেনার মুনরোকেও (২৪) আউট করেন সাকিব। তার বলে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন মেহেদী মিরাজ।

কম পুঁজি নিয়ে লড়াইয়ে জোড়া উইকেট নিয়ে সাকিব আল হাসান যখন কিউইদের চেপে ধরেছেন; তখনই রান-আউটের সুবর্ণ সুযোগ মিস করেন মুশি! রস টেইলর তখন ক্রিজের অনেক দূরে, তামিমের থ্রো থেকে মুশফিকের হাতে বল চলে এসেছে; কিন্তু তিনি বল দিয়ে স্টাম্প ভাঙার আগে হাত দিয়েই ভেঙে দেন। প্রচণ্ড হতাশ হয়ে বোলার সাকিব আল হাসান মাথায় হাত দিয়ে ফেললেন। কিন্তু তামিম ইকবাল প্রচণ্ড রেগে তেড়ে এলেন মুশফিকের দিকে! কড়া কড়া কিছু কথা শোনালেন সতীর্থকে। এই সময় মোসাদ্দেক এসে হতভম্ব মুশফিককে স্বান্ত্বনা দেন।

মাশরাফির বলে উইলিয়ামসনকে রান-আউটের আরও একটি অপেক্ষাকৃত কঠিন সুযোগ মিস করেন মুশফিক। এরপর উইকেটে জাঁকিয়ে বসেন উইলিয়ামসন-টেইলর জুটি। ৮ রানে জীবন পাওয়া সেই টেইলর ৪০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। মিরাজের বলে মোসাদ্দেকের তালুবন্দি হয়ে কেন উইলিয়ামসনের (৪০) ফিরলে ভাঙে ১০৫ রানের এই জুটি। একই ওভারের শেষ বলে তিনি বিপজ্জনক ল্যাথামকে (০) তুলে নেন। মোসাদ্দেক হোসেনের ঘূর্ণিতে শেষ হয় টেইলরের ৯১ বলে ৮২ রানের ইনিংস। সেই মুশফিকই টেইলেরর ক্যাচ নিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করেন।

সেই মুশফিকেরই চোখ ধাঁধানো এক ক্যাচে সাইফউদ্দিনের বলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম (১৫)। কিউইদের ৬ষ্ঠ উইকেটের পতন হয়। পরের ওভারে মোসাদ্দেকের বলে সৌম্য সরকারের দারুণ ক্যাচে পরিণত হন বিপজ্জনক জিমি নিশাম (২৫)। ততক্ষণে বলের সঙ্গে রানের ব্যবধান অনেকটা কমে এসেছিল। নিউজিল্যান্ড যখন জয় থেকে ৭ রান দূরে; সাইফউদ্দিনের ফুলটস বলে স্টাম্প উড়ে যায় হেনরির (৬)। ওই ওভারেই সেই সাইফউদ্দিনই পরপর দুটি ওয়াইড আর বাউন্ডারি পাইয়ে দেন কিউইদের।

এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৯.২ ওভারে ২৪৪ রানে অল-আউট হয় বাংলাদেশ। কিন্তু যথারীতি বাংলাদেশকে দারুণ সূচনা এনে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রানের খাতা খোলেন তামিম। আজ শুরু থেকেই নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলছিলেন দেশসেরা ওপেনার। দুজনের স্বচ্ছন্দ্য ব্যাটিংয়ের মাঝেই ছন্দপতন। ২৫ বলে ৩ বাউন্ডারিতে ২৫ রান করা সৌম্য সরকারকে বোল্ড করে দেন আগের ওভারে দুই বাউন্ডারি খাওয়া ম্যাট হেনরি। দলীয় ৪৫ রানেই ভাঙে ওপেনিং জুটি।

সাকিবের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে ব্যক্তিগত ২১ রানেই আউট হতে পারতেন তামিম; তবে বল ঠিক জায়গায় না আসায় সে যাত্রায় রান-আউট থেকে বাঁচেন তিনি। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি। ৩৮ বলে ২৪ রান তুলে ফার্গুসনের বলে ক্যাচ তুলে দেন ট্রেন্ট বোল্টের হাতে। আবারও দলের হাল ধরেন সাকিব-মুশফিক জুটি। এই জুটির দারুণ ব্যাটিংয়ে ২২.৩ ওভারে একশ ছাড়ায় বাংলাদেশ। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝির শিকার হয়ে রান-আউট হয়ে যান মুশফিক (১৯)। আবারও বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ!

এসময় চাপ কাটাতে হাত খুলে মারতে থাকেন সাকিব আল হাসান। ৫৪ বলে ৫ বাউন্ডারিতে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৪৪তম হাফ সেঞ্চুরি। এরপর আরও দুই চারে ৬৪ রান করে গ্র্যান্ডহোমের বলে ল্যাথামের গ্লাভসে ধরা পড়েন। ১২১ রানে চতুর্থ উইকেট হারালে বাংলাদেশের চাপ আরও বেড়ে যায়। নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ পেয়ে আবারও ব্যর্থ মিঠুন। ৩৩ বলে ২৬ রান করে ফিরেন ম্যাট হেনরির বলে ক্যাচ দিয়ে। প্রয়োজনের সময় বহুবার ঝলসে উঠেছে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট। আজ তিনি ২০ রান করে স্যান্টনারের শিকার হন।

দলকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব কাঁধে নেন দুই তরুণ মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আর মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। বিশেষ করে সাইফউদ্দিন ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন। মোসাদ্দেক আজ জ্বলে উঠতে পারেননি। ২২ বলে ১১ রান করে বোল্টকে ছক্কা মারতে গিয়ে গাপটিলের তালুবন্দি হন। ২৩ বলে ২৯ রান করা সাইফউদ্দিনকে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে বোল্ড করেন হেনরি। মিরাজ (৭) এবং মাশরাফি (১) কিছুই করতে পারেননি। ৪৯.২ ওভারে ২৪৪ রানে অল-আউট হয় বাংলাদেশ। ৪ উইকেট নিয়েছেন ম্যাট হেনরি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *