কলকাতা: সপ্তম দফা নির্বাচনের চার দিন আগে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে নির্বাচন পর পর কঠোর সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেছেন। সন্ধ্যায় দিল্লিতে উপ-মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র সচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। এখন থেকে স্বরাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন রাজ্যের মুখ্য সচিব মলয় দে। নির্বাচন কমিশনের কাজে অনাকাক্সিক্ষত হস্তক্ষেপ করার অভিযোগেই স্বরাষ্ট্র সচিবকে অপসারণ করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে আইপিএস অফিসার রাজীব কুমারকে সিআইডি এডিজির পদ থেকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালেই তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে যোগ দিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে মঙ্গলবার কলকাতায় বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর রোড শোকে কেন্দ্র করে হামলার যে ঘটনা ঘটেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে নজিরবিহীনভাবে নির্বাচনী প্রচারের সময়সীমাও কার্যত কমিয়ে দেয়া হয়েছে। সাধারণভাবে নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টা আগে সমস্ত ধরনের নির্বাচনী প্রচার বন্ধ থাকে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ভারতে এই প্রথম কোনো রাজ্যে ৩২৪ ধারা প্রয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকেই রাজ্যে কোনো নির্বাচনী প্রচার করা যাবে না। আগামী রোববার সপ্তম দফায় পশ্চিমবঙ্গের ৯টি কেন্দ্রে ভোট হওয়ার কথা। বুধবারই দিল্লিতে বিজেপি সভাপতি রোড শোতে হামলার পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন কমিশন নীরব দর্শক হয়ে রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, এটা রাজনৈতিক অভিসন্ধি।
নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের স্বরাষ্ট্র সচিব অত্রি ভট্টাচার্য গত সোমবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্য নির্বাচনী অফিসার আরিজ আফতাবকে এক চিঠি লিখে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কাজ নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সেইসঙ্গে বলা হয়েছিল, ভোট পরিচালনার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন এবং রাজ্য প্রশাসনের উভয়ের হাতে ন্যস্ত। তাই এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র সচিব কিছু প্রস্তাব দিয়েছিলেন নির্বাচন কমিশনকে। এই চিঠিকেই কমিশন নির্বাচন পরিচালনার কাজে অবৈধ হস্তক্ষেপ বলে মনে করেছেন। তারপরই তাকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে শেষ দফার নির্বাচন আইপিএস অফিসার রাজীব কুমার দায়িত্বে থাকলে সুষ্ঠুভাবে হওয়ার ব্যাপারে আশঙ্কা প্রকাশ করেই তাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে রাজীব কুমারকে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছিল। এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ এই অফিসারকে রাজ্য থেকেই সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এই পর পর কঠোর সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে তৃণমূল কংগ্রেসের কোনো প্রকিক্রিয়া এই খবর লেখা পর্যন্ত পাওয়া যায় নি। তবে মঙ্গলবারের বিজেপি নেতা অমিত শাহর রোড শো নিয়ে হামলা ও পাল্টা হামলার অভিযোগে রাজ্য রাজনীতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। বুধবার রাজ্য জুড়ে তৃণমূল কংগ্রেস বিজেপির বিরুদ্ধে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার অভিযোগ এনে প্রতিবাদ মিছিল করেছে। মমতার নেতৃত্বে কলকাতাতেও প্রতিবাদ যাত্রা হয়েছে। তবে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ এবং নরেন্দ্র মোদি অভিযোগ করেছেন, তৃণমূল কংগ্রেস পরিকল্পিতভাবে রোড শোর ওপরে হামলা করেছে। রাজ্যের উত্তেজনাকর পরিবেশের কারণেই নির্বাচন কমিশন ভোট প্রচারের সময় আরো একদিন কমিয়ে দিয়েছে।