খালেদের অভ্যুত্থানের ডাক, যুবরাজ মোহাম্মদের নীরবতা নিয়ে বাড়ছে সন্দেহ!

Slider সারাবিশ্ব

104620_bangladesh_pratidin_bdp-prince-dkk

মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ দেশ সৌদি আরব। দেশটিতে রাজপরিবারই সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী।

রাজনীতি, অর্থনীতি, প্রতিরক্ষা সবক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ করে রাজকীয় সৌদ পরিবার। আর এ সৌদ পরিবারের বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের ডাক দিয়েছেন জার্মানিতে নির্বাসিত যুবরাজ খালেদ বিন ফারহান আল সৌদ।
বাদশাহের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ, ‘খামখেয়ালীপূর্ণ’ শাসনের কারণে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আর এ অভ্যুত্থানের ডাক দেওয়ার ফলে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের বেঁচে থাকা নিয়ে শঙ্কা বাড়ছে। কারণ গত ২১ এপ্রিল সৌদি রাজ প্রাসাদের কথিত ‘অভ্যুত্থান’ ঘটনার পর থেকে সালমানকে কোনও রাষ্ট্রীয় বা সাধারণ অনুষ্ঠান ও মিডিয়াতে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি। আর নতুন করে যুবরাজ খালেদ বিন ফারহানের অভ্যুত্থানের ডাক এ শঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আইকে দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘যুবরাজ মুকরিন এবং আহমেদ যদি ঐক্যবদ্ধ হয় তাহলে তারা রাজপরিবার, নিরাপত্তা বাহিনী এবং সেনাবাহিনীর ৯৯ শতাংশ সমর্থন পাবেন। ’

খালেদ আরও বলেন, ‘রাজপরিবারের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ রয়েছে। আমি এই তথ্য পাওয়ার পর বাদশাহ সালমানের উচ্চশিক্ষিত দুই ছেলে আমার চাচাত ভাই আহমেদ এবং মুকরিন; যারা ভালো বুদ্ধিমান এবং আরও ভালো পরিবর্তন আনতে সক্ষম তাদের অনুরোধ জানিয়েছি।

আমি বলেছি, আমরা সবাই তাদের সঙ্গে আছি এবং তাদের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। ’
এর আগে গত মাসের ২১ এপ্রিল দেশটি এক সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়। ওই সময় বর্তমান যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে বিভিন্ন খবরে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরান ভিত্তিক গণমাধ্যম ‘কায়হান’ এবং রুশ মিডিয়ার যুবরাজ সালমান মারা গেছেন বলেও দাবি করা হয়েছে। ওই ঘটনার পর থেকেই যুবরাজ সালমানকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। পরে সৌদি রাজপরিবারের পক্ষ থেকে এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। রাজপরিবার জানিয়েছে, যুবরাজ বর্তমানে মিশরে রয়েছেন।

এদিকে সোমবার ইরানের ফার্স নিউজ জানিয়েছে, মালিক (রাজা) আব্দুল আজিজ অফিসার একাডেমি নামে সৌদি আরবের একটি সামরিক একাডেমির এক অনুষ্ঠানে যোগ দেননি যুবরাজ ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিন সালমান। অথচ আগের বছরগুলোতে এই অনুষ্ঠানে প্রতিরক্ষামন্ত্রী যোগ দিয়েছেন।
বিন সালমানের পরিবর্তে রবিবারের অনুষ্ঠানটিতে প্রধান অতিথি ছিলেন রিয়াদের গভর্নর ফয়সাল বিন বন্দর বিন আব্দুল আজিজ। এই ঘটনাটি সৌদির সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিটির শারিরীক অবস্থা নিয়ে সন্দেহ আরো ঘনীভূত করেছে।

প্রসঙ্গত, অভ্যুত্থানের ডাক দেওয়া যুবরাজ প্রিন্স খালেদ বিন ফারহান ২০১৩ সাল থেকে জার্মানিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন।

উল্লেখ্য, সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ গত বছর জুনে তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে যুবরাজ ঘোষণার পর থেকে রক্ষণশীল এ মুসলিম দেশটি বড় ধরনের পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। ৩২ বছর বয়সী যুবরাজ মোহাম্মদ সৌদি আরবের তেলনির্ভর অর্থনৈতিক কাঠামো সংস্কারের পাশাপাশি সাংস্কৃতিকভাবে তার দেশকে আরও বেশি উন্মুক্ত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কিন্তু সরকারের সমালোচনার সুযোগও দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে আসছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ছেলের অবস্থান সংহত করতে গিয়ে সৌদি আরবে প্রশাসন ও সেনাবাহিনীতে কয়েক দফা বড় ধরনের রদবদল এনেছেন বাদশাহ সালমান। যুবরাজের নেতৃত্বে চালানো ‘দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে’ বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, প্রিন্স আর ধনকুবেরকে কারাগারে যেতে হয়েছে। অবশ্য তাদের অধিকাংশকেই পরে ছেড়ে দেয়া হয়েছে মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সৌদি প্রিন্সসহ সরকারি আমলা ও কর্মকর্তাদের ওপর যুবরাজের এমন হস্তক্ষেপের পরিণতি ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির দিকে যেতে পারে। আর ক্রাউন প্রিন্স সালমানের গত ১ মাস ধরে জনসম্মুখে না আসা প্রশ্ন তুলছে সেদিকেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *