ডেস্ক: ভূমধ্যসাগরে নৌডুবিতে নিহত ৬০ অভিবাসীর মধ্যে বেশির ভাগই বাংলাদেশী। প্রায় ৭৫ জন অভিবাসী নিয়ে বৃহস্পতিবার একটি বোট ইতালির উদ্দেশে যাওয়ার সময় তা তিউনিশিয়া উপকূলে ডুবে যায়। জীবিত উদ্ধার করা অভিবাসীরা বলেছেন, ৭৫ জন অভিবাসীর মধ্যে ৫১ জনই ছিলেন বাংলাদেশী। তারা সবাই পুরুষ। তার মধ্যে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ১৪ বাংলাদেশীকে জীবিত উদ্ধার করেছে রেড ক্রিসেন্ট। বাকিরা নিহত হয়েছেন বলে অনুমান করা হচ্ছে। যদি তাই হয় তাহলে নিহত বাংলাদেশীর সংখ্যা ৪০ এর কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে। তবে নিহত বাংলাদেশীর বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারে নি ত্রিপোলিতে বাংলাদেশ দূতাবাস।
গত রাতে দূতাবাসের শ্রম বিষয়ক কাউন্সেলর এএসএম আশরাফুল ইসলাম মিডিয়াকে বলেছেন, তাৎক্ষণিকভাবে আমরা পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারি নি। এ জন্য আমাদের সময়ের প্রয়োজন। অভিবাসন বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) এ ঘটনাকে জানুয়ারির পর সবচেয়ে ভয়াবহ বলে আখ্যায়িত করেছে। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে মিডিয়ায় গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ প্রচার করা হয়েছে।
তিউনিশিয়ার রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে ওই অভিবাসীরা লিবিয়ার জুয়ারা ছাড়েন একটি বড় বোটে করে। এ সময় তাতে বিভিন্ন দেশের প্রায় ৭৫ জন অভিবাসী ছিলেন। পরে তাদেরকে একটি ছোট্ট বোটে তোলা হয়। গাদাগাদি করে তাতে অবস্থান করছিলেন তারা। এর ১০ মিনিট পরেই ওই বোটটি প্রচণ্ড ঢেউয়ের তোড়ে ডুবে যায় বলে জানিয়েছেন তিউনিশিয়া রেড ক্রিসেন্টের কর্মকর্তা মঙ্গি স্লিম। আশপাশে থাকা তিউনিশিয়ার জেলেরা উদ্ধার করেন ১৬ জনকে। তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় জারজিস উপকূলে। এ সময় জীবিত উদ্ধার হওয়া অভিবাসী বলেছেন, তারা সমুদ্রের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পানিতে পড়ে ছিলেন ৮ ঘন্টা। তারপর তাদেরকে দেখতে পান জেলেরা। তারাই তিউনিশিয়ার কোস্ট গার্ডদের এলার্ট করেন।
জীবিত ওইসব অভিবাসী তিউনিশিয়ার রেড ক্রিসেন্টকে বলেছেন, তাদের মধ্যে ছিলেন ৫১ জন বাংলাদেশী, তিনজন মিশরীয়, মরক্কোর বেশ কয়েকজন নাগরিক, কানাডিয়ান ও অন্যরা আফ্রিকার। রেড ক্রিসেন্ট বলেছে, যাদেরকে উদ্ধার করা হয়েছে তার মধ্যে ১৪ জন বাংলাদেশী নাগরিক। মঙ্গি স্লিম বলেছেন, যদি জেলেরা জীবিত অভিবাসীদের দেখতে না পেতেন তাদেরও সলিল সমাধি হতো। সেখানে যে নৌডুবি হয়েছে এ কথা আমরা কখনো জানতেও পারতাম না।
ওদিকে ইতালিতে অবৈধ অভিবাসী প্রবেশ প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশটির উগ্র ডানপন্থি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তিও সালভিনি। তিনি আরোপ করেছেন ‘ক্লোজড পোর্টস’ পলিসি। এর অর্থ হলো, সমুদ্রে উদ্ধার হওয়া কোনো অভিবাসীকে তার দেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না।
শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনএইচসিআর ভূমধ্যসাগরে এমন ভবিষ্যত ট্রাজেডি এড়ানোর জন্য অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছে। ভূমধ্যসাগর বিষয়ক ইউএনএইচসিআরের বিশেষ দূত ভিনসেন্ট কোচেটেল বলেছেন, ওই অঞ্চলে আমাদের অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান জোরদার করা জরুরি। যদি এখনই আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ না নিই তাহলে কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে আরো এমন ট্রাজেডি দেখতে হবে আমাদের।