বরিশাল বিভাগীয় প্রতিনিধিঃ শিক্ষক সমিতি মোটা অংকের টাকা নিয়ে নির্ধারিত প্রকাশনির সহায়ক নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এতে লেখাপড়ার প্রকৃত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠার পাশাপাশি ওই সকল গাইড কিনতে অভিভাবকরা দিশেহারা হয়ে পরেছে। জানা যায়, এ উপজেলায় ১শ’ ৮২টি প্রাথমিক ও ৬৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে।
এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর প্রধানদের নির্দেশে শিক্ষার্থীদের সহায়ক ও নিষিদ্ধ গাইড বই কেনার জন্য নির্ধারিত প্রকাশনীর তালিকা ধরিয়ে দেয়া হয়। যদি কোন শিক্ষার্থী নির্ধারিত তালিকার বাইরে অন্যকোন প্রকাশনার গাইড ক্রয় করে তাহলে তাকে আবারো নতুন করে গাইড কিনতে বাধ্য করা হয়।
এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষক সমিতির নেতাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের প্রকাশনী সংস্থার লোকজন প্রতি বছর মোটা অংকের টাকা ডোনেশন দেয়।
ওই সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয় তাদের পছন্দের জননী, অগ্রযাত্রা, প্রগতি, পাঞ্জেরি, লেকচার, অনুপম, কাজল ব্রাদার্স, জুপিটার্স, মল্লিক ব্রাদার্স প্রকাশনীর নিষিদ্ধ গাইড বই।
এদিকে এনসিটিবি প্রণীত ও অনুমোদিত পাঠ্যপুস্তকের বাইরে এসব সহায়ক ও নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা সদরের এক অভিভাবক জানান, তার দুই সন্তানের জন্য গাইড বই কিনতে খরচ হয়েছে ৩ হাজার ১০০ টাকা। কলারদোয়ানিয়া গ্রামের এক অভিভাবক জানান, তার ছেলের জন্য সহায়ক বই কিনতে ১হাজার ৮শ’ টাকা লেগেছে। তারা জানান, নির্ধারিত প্রকাশনীর সহায়ক বই ও নিষিদ্ধ গাইড না কিনলে সংশ্লিষ্ট স্কুলে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে হেনস্থা করা হয়।
অভিযোগ আছে, দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রকাশনীর নিষিদ্ধ গাইড কিনতে বাধ্য করছেন শিক্ষকরা। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে জননী, অগ্রযাত্রা, প্রগতি, পাঞ্জেরি, লেকচার, অনুপম, কাজল ব্রাদার্স, জুপিটার্স, মল্লিক ব্রাদার্স প্রকাশনীর গাইড কেনার জন্য শিক্ষার্থীদের হাতে তালিকা ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
এ সব প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধিরা স্কুল প্রধানসহ সমিতির নেতাদের বিভিন্ন ধরনের উপঢৌকন ও মোটা অংকের টাকা দিয়ে প্রকাশনীর সহায়ক ও নিষিদ্ধ গাইড বই বিক্রির ব্যবস্থা করেন।
অভিভাবকরা জানান, যেখানে সরকার সহায়ক বইয়ের প্রতি শিক্ষার্থীদের নিরুৎসাহিত করছে, সেখানে সহায়ক ও নিষিদ্ধ গাইড বই কিনতে ১ হাজার টাকা থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা লাগছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছু এক প্রকাশনী সংস্থার বিক্রয় প্রতিনিধি জানান, এ উপজেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে কয়েকটি প্রকাশনীর গাইড চলছে। তাদের প্রতিযোগিতার মাধ্যমে বাজারে টিকে থাকতে হয়। যে প্রকাশনী সংস্থা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোকে বেশী ডোনেশন দেয়, সেই প্রকাশনীর গাইড ওই প্রতিষ্ঠান তাদের বুকলিষ্টে রেখে শিক্ষার্থীদের কিনতে বাধ্য করে। উপজেলার দিঘীরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তার প্রকাশনীর গাইড তালিকাভুক্ত করার জন্য তিনি ওই প্রতিষ্ঠানকে ২লাখ টাকা দিতে চেয়েছিলো কিন্তু তারা অন্য প্রকাশনী থেকে ২লাখ ২০হাজার টাকা নিয়ে তাদের গাইড তালিকাভুক্ত করেছেন। তবে কয়েক বছর ধরে প্রাথমিক সেক্টর একমাত্র অগ্রযাত্রা প্রকাশনীর দখলে রয়েছে। ওই সংস্থার বিক্রয় প্রতিনিধি এ উপজেলার এক সহকারী শিক্ষা অফিসারকে ম্যানেজ করে এ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষায় অগ্রযাত্রার গাইড থেকে হুবহু প্রশ্ন করা হয়। যাতে করে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকরা ওই প্রকাশনীর গাইড বইয়ের প্রতি বেশী আকৃষ্ট হয়। এ জন্য ওই শিক্ষা অফিসারকে আলাদা ভাবে খুশি করা হয় ওই প্রকাশনী সংস্থাকে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কথা হলে দিঘীরজান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, তাদের বিদ্যালয়ের বুকলিষ্টে কোন গাইড বই তালিকাভুক্ত করা হয়নি। বিদ্যালয়ে গাইড পড়ানোও হয়না। শিক্ষার্থীরা বাড়ীতে পড়লে তাদের কি করার আছে।
নাজিরপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শিকদার আতিকুল ইসলাম জুয়েল বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রদের নোট বা গাইড বই কিনতে কেউ বাধ্য করতে পারবে না। আইনত এসব নিষিদ্ধ। তার পরেও গাইড বই না পড়ানোর জন্য প্রত্যেক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে লিখিত নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মাহিদুল ইসলাম জানান, গাইড বিক্রি বন্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কড়া নির্দেশনা রয়েছে। তারপরও শিক্ষকরা ডোনেশন নিয়ে শিক্ষার্থীদের গাইড কিনতে বলছেন। কারা গাইড বই কিনতে বলে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সেই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। (তথ্যসূত্রঃঃ সাউথবাংলা)