হাসানুজ্জামান হাসান,লালমনিরহাটঃ তামাক আবাদে অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত লালমনিরহাটে এখন চা চাষে প্রতিনিয়ত আগ্রহী হচ্ছে কৃষকরা।
দেশের অন্যান্য জেলার মত সীমান্তবর্তী এ জেলা চা শিল্পে এগিয়ে যাচ্ছে। তামাকসহ অন্য ফসলের চেয়ে কম পরিশ্রম ও বেশি লাভ জনক হওয়ায় এখন চা চাষ করছেন এ জেলার বেশিরভাগ কৃষকরা।
জেলায় ৭২.৮২ একর জমিতে চা বাগান গড়ে তুলেছেন ৫২ জন কৃষক। আরো ২০ জন কৃষক চা বাগান গড়ে তুলতে চা বোর্ডে চা চাষী হিসেবে নিবন্ধন করেছেন। সব মিলে এ পর্যন্ত জেলায় ৭২ জন কৃষক চা চাষে এগিয়ে এসেছেন।
এতে গত ২০১৮ সালে মাত্র ৬৩ টন সবুজ কাঁচা চা পাতা উৎপাদন হলেও ২০১৯ সালে তা ৫ গুন বাড়িয়ে ৩ শত ১৫ টন কাঁচা চা পাতা উৎপাদন হবে বলে বাংলাদেশ চা উন্নয়ন বোর্ড ধারণা করছেন। এ ছাড়া জেলায় নতুন করে আরো ২ শত একর জমিতে চা বাগান তৈরী প্রক্রিয়া চলছে।
তবে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংকের সহযোগিতায় জেলার হাতীবান্ধায় ‘সোমা টি প্রসেসিং লিমিটেড’ নামে একটি প্রসেসিং কারখানা গড়ে উঠলেও বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজের অজুহাতে তা বন্ধ থাকায় চা পাতা বিক্রিতে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে কৃষকদের।
ফলে পঞ্চগড় জেলায় গিয়ে চা পাতা বিক্রি করতে হচ্ছে ওই সব কৃষকদের।
জানা গেছে, বাংলাদেশ চা উন্নয়ন বোর্ড কৃষকদের প্রতি চা চারা নাম মাত্র ২ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এ জন্য জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী গ্রামে চা উন্নয়ন বোর্ড গড়ে তুলেছে বিশাল চা চারার নার্সারী।
সেই নার্সারী থেকে কৃষকদের চা চারা সরবরাহ করা হচ্ছে। তাছাড়া চা উন্নয়ন বোর্ড কৃষকদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা ও পরামর্শ দিচ্ছেন।
বর্তমানে চা চাষিরা প্রতি কেজি সবুজ কাঁচা চা পাতা ৩৪ টাকা দরে কারখানায় বিক্রি করছেন।
বাংলাদেশ চা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি বিঘা জমিতে চায়ের চারা রোপন করতে মোট খরচ হয় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা।
লালমনিরহাট জেলায় ১ বছরের মধ্যেই ওই চা গাছ থেকে চায়ের কাঁচা পাতা সংগ্রহ করা সম্ভব। ফলে প্রতি বিঘায় ১ম বছর ৪ হাজার টাকা, ২য় বছর ১৬ হাজার টাকা, ৩য় বছর ৩৪ হাজার টাকা, ৪র্থ বছর ৪৮ হাজার টাকা ও ৫ম বছর ৬৮ হাজার টাকার সবুজ কাঁচা চা পাতা বিক্রি করা সম্ভব।
এক গাছে কমপক্ষে ৫০ থেকে ৫৫ বছর ধরে চা পাতা উৎপাদন সম্ভব। প্রতিবছর এক সাথে প্রতি বিঘায় ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা খরচের পর পরবর্তী প্রতিবছর আয়ের ২০ শতাংশ পরিচর্যাসহ বিভিন্ন খাতে খরচ হবে।
এতে হিসাব মিলে দেখা যায়, ১ম বছর থেকে ৫৫ বছর পর্যন্ত গড়ে প্রতি বিঘায় বছরে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকার সবুজ কাঁচা চা পাতা বিক্রি সম্ভব।
হাতীবান্ধা উপজেলার সিঙ্গিমারী গ্রামের চা চাষী আবু বক্কর বলেন, আগে এসব জমিতে তামাক ও ভুট্ট্রা চাষ করতাম। তামাক চাষে অনেক শ্রম ও টাকা খরচ করতে হতো কিন্তু চা বাগানে একবার চারা রোপন করে পরিচর্যা করলেই কম খরচে অনেক মুনাফা অর্জন করা সম্ভব।
তাই তামাক চাষ ছেড়ে প্রাথমিকভাবে ৫০ শতক জমিতে চা বাগান করেছি। আশা করছি এ বছরেই আমি চা পাতা বিক্রি করতে পারব।
পারুলিয়া এলাকার চা বাগান মালিক বদিউজ্জামান ভেলু ও গোতামারী এলাকার বিশ্বজিত জানান, কম পরিশ্রমে ও কম খরচে চা চাষ করে অধিক মুনাফা পাওয়া যায়। তবে জেলার হাতীবান্ধায় টি প্রসেসিং কারখানাটি বন্ধ থাকায় চা পাতা বিক্রিতে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে।
‘সোমা টি প্রসেসিং’ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফেরদৌস আলম জানান, প্রথমত বিদ্যুতের লো-ভোল্টেজ সমস্যার কারণে কারখানাটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
এছাড়া কারখানাটি তৈরীর সময় বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক মোট খরচের ৪৯ শতাংশ ব্যয়ের দায়িত্ব নিয়ে ২ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকা ঋণ দেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। মালিক পক্ষ ব্যয় করবেন ৫১ শতাংশ টাকা। কিন্তু পরবর্তী ১ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা ঋণ দেয় শিল্প ব্যাংক। বাকি ৪২ লক্ষ টাকা ঋণ দেয়া হয়নি তাকে। ফলে অর্থের অভাবে ‘টি প্রসেসিং’ কারখানাটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
বাংলাদেশ চা বোর্ডর লালমনিরহাট জেলা প্রকল্প পরিচালক আরিফ খান জানান, এ এলাকার চাষিদের চা চাষে আগ্রহ দেখে বাংলাদেশ চা বোর্ডের উদ্যেগে ২ বছর আগে সিঙ্গিমারী বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় একটি নার্সারী করা হয়েছে। এখান থেকে চাষিদের স্বল্পমূল্যে চায়ের চারা সরবরাহ করছি এবং চাষিদের চারা রোপন ও পরিচর্যাসহ সকল প্রকার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
এ নার্সারী থেকে আমরা ৪ লক্ষ ১১ হাজার চারা বিক্রি করেছি। এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার ৪১ শতাংশ সম্পন্ন করতে পেরেছি আশা করছি আগামী অর্থবছরে আমাদের লক্ষমাত্রা পূরন করতে পারব। এ লক্ষ্যমাত্রা পূরন করতে পারলে এ অঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে।
তবে হাতীবান্ধায় প্রসেসিং কারখানাটি বন্ধ থাকায় চা পাতা বিক্রিতে ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। ফলে পঞ্চগড় জেলায় গিয়ে চা পাতা বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের।