ঢাকা: বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনে কাজ করার জন্য দলের কিছু নেতা মনোনয়ন জমা দেননি বলে জানিয়েছেন বিএনপি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান।
আজ নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের দলের প্রধান খালেদা জিয়া এবার জেলে। নির্বাচনে সকলের জন্য কাজ করেন তিনি নিজেই। এবার সেই কাজটা আমাদের সকলকে মিলে করতে হবে। যারা জমা দেননি তারা প্রত্যেকে যোগ্য নেতা। আমি নিজে মনোনয়নের দরখাস্ত করিনি। রুহুল কবির রিজভী সাহেব দরখাস্ত করেননি।
বলতে পারেন এটা আমাদের নির্বাচনী কৌশল।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি কোন যুদ্ধাপরাধীকে আমরা প্রতীক দেব না। জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে শুধু যুদ্ধাপরাধী নয় অনেক মুক্তিযোদ্ধাও আছে। লিখিত বক্তব্যে নজরুল ইসলাম খান বলেন, তিন মাস আগে মিথ্যা ও গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারান্তরীণ তেজগাঁও ছাত্রদলের নেতা আব্দুল্লাহ আল তামিম গাজীপুর জেলে গতকাল মৃত্যুবরণ করেছে। কারা কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও সরকারের নির্যাতনেই তার মৃত্যু হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে জোর করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পর এবছর আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন করতে বর্তমান আওয়ামী ভোটারবিহীন সরকার। এই জন্য বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারান্তরীণ করার মহাতৎপরতা চালাচ্ছে। ভীষণ অসুস্থ হলেও জেলখানায় তিলে তিলে শেষ করার জন্য বিএনপির নেতাকর্মীদের কোন চিকিৎসা দেয়া হয় না। এভাবে চিকিৎসা না পাওয়ায় আওয়ামী শাসনামলে বিএনপির তৎকালীন ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুসহ বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর জেলখানায় করুণ মৃত্যু হয়েছে। আর গতকাল গাজীপুর কারাগারে এই ধরণের নির্মম ও করুণ মৃত্যুর আরেকজন শিকার হলো তেজগাঁও ছাত্রদলের নেতা আব্দুল্লাহ আল তামিম। জেলখানায় আব্দুল্লাহ আল তামিমের মৃত্যুতে আমি গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি, তার বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি ও শোকাহত পরিবারবর্গের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা।
তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এর শাহজাহানপুরস্থ বাসা সার্বক্ষনিক ঘিরে রেখেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। মির্জা আব্বাস এর বাসায় ঢোকা ও বেরুনোর সময় নেতাকর্মীদেরকে লাগাতার গ্রেপ্তার করছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। গত পরশু থেকে এপর্যন্ত পল্টন থানা ১৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক মো: মুন্না, মো: বেলাল হোসেন, কামাল, শরীফ খান, মুগদা থানা যুবদল য্গ্মু আহবায়ক মেহরাজ উদ্দিন মিল্লাত, মিথুন মোল্লা, বাবু, শাহবাগ থানা প্রেসক্লাব ইউনিট বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শিপন, শাহবাগ থানা জাসাস এর সাংগঠনিক সম্পাদক মো: শরীফ পাঠান, ঢাকা মেডিকেল ইউনিট ছাত্রদল সভাপতি মো: আজিম, পল্টন থানা ছাত্রদল নেতা নোমানসহ সারা এলাকা থেকে কমপক্ষে ৫০/৬০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক মির্জা আব্বাস সাহেবের বাসা সর্বক্ষণ ঘিরে রাখার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বাসার সামনে থেকে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
ভোলা জেলার তজুমুদ্দিন উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার নিকট বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অবঃ) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম এর পক্ষে মনোনয়ন পত্র জমা দিয়ে ফিরে আসার সময় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডার’রা সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল নেতা মামুন, যুবদল নেতা ইব্রাহিমসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে প্রচন্ড মারধর করে। সন্ত্রাসীদের অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত অবস্থায় কয়েকজন নেতাকর্মী স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে। এর পরে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে এবং এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে পুলিশ ও আওয়ামী গুন্ডারা কয়েক ঘন্টাব্যাপী হামলা চালায় এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা সমগ্র লালমোহন ও তজুমুদ্দিন উপজেলায় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আমি সন্ত্রাসীদের এধরণের বর্বরোচিত ও ন্যাক্কারজনক ঘটনায় নিন্দা জানাচ্ছি, ধিক্কার জানাচ্ছি। অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি। এছাড়া তজুমুদ্দিন থানা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদত পাটোয়ারীকে গত মধ্যরাতে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি তার নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে সারাদেশের ন্যায় নরসিংদীতেও নির্বাচনী আচরণবিধি তোয়াক্কা করছে না সরকার দলীয় প্রার্থীরা। বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপি’র সভাপতি খায়রুল কবির খোকন এর নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করে তাকে নির্বাচন থেকে দুরে রাখার ষড়যন্ত্র চলছে। জেলাব্যাপী পুলিশ প্রশাসন সরকারী দলের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছে। আমি এধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
গতকাল রাত ১০টায় আদাবর থানা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক কামালকে সাদা পোশাকধারীরা তুলে নিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত তার কোন হদিস দিচ্ছেনা তারা। এ বিষযে বারবার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কামালকে আটকের বিষয়টি অস্বীকার করছে। বিষয়টি চলমান গুম ও অদৃশ্য করারই ধারাবাহিকতা। আমরা অবিলম্বে কামালকে সুস্থ অবস্থায় তার পরিবারের নিকট ফিরিয়ে দেয়ার জোর দাবি জানাচ্ছি।
তেজগাঁও থানা ২৬ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি সাফিজ উদ্দিন ভুইয়া, সহ-সভাপতি মো: আবুল হাশেম, যুগ্ম সম্পাদক ইব্রাহিম পাটোয়ারী, বিএনপি নেতা নান্নু, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ইলিয়াস, শিল্পাঞ্চল থানা মহিলা দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক আসমা আক্তারসহ আরও কয়েকজনকে গতকাল গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি তার নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিএনপি নেতা নান্নু, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ইলিয়াস, শিল্পাঞ্চল থানা মহিলা দলের সহ-সাধারণ সম্পাদক আসমা আক্তারসহ আরও কয়েকজনকে গতকাল গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি তার নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
হাতিরঝিল থানা মহিলা দলের সভাপতি সালমা কামালের বাসায় তল্লাশীর নামে ব্যাপক ভাংচুর চালিয়েছে পুলিশ। ঢাকা-১২ আসনে বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় প্রত্যেক নেতাকর্মীর বাড়ীতে বাড়ীতে তল্লাশীর নামে ব্যাপক তান্ডব চালাচ্ছে পুলিশ। আমি পুলিশের এই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তা বন্ধের আহবান জানাচ্ছি।
এছাড়া ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আলী মামুন এবং লালবাগের জাসাস নেতা শহীদুল ইসলাম শহীদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আমি তাদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।
সরকারের অবসরপ্রাপ্ত উপ-সচিব নিয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়াকে এক ঘন্টা কথা বলার নাম করে গত পরশু রাত ১০টায় র্যাব-২ অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়। দুই দিন নিখোঁজ রাখার পর বর্তমানে তাকে আইসিটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। নিয়ামত উল্লাহ সাহেব বিএনপি’র নির্বাচনী টিমে কাজ করেন বলেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। আরেকটি একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে বর্তমান ভোটারবিহীন সরকারের এটি আরও একটি নগ্ন বহি:প্রকাশ। আমি অবসরপ্রাপ্ত উপ-সচিব নিয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত আইসিটি মামলা প্রত্যাহার এবং অবিলম্বে নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।
কুমিল্লা-৬-আসনে বিএনপি’র মনোনীত প্রার্থীর নোমিনেশন পেপার জমা দেয়ার সময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে দুর্গাপুর (দক্ষিণ) ইউনিয়ন মহিলা মেম্বার ও ইউনিয়ন মহিলা দলের সভাপতি মনোয়ারা বেগম ও কোতোয়ালী থানা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হান উপস্থিত থাকাকে অপরাধ মনে করে আওয়ামী ক্যাডাররা তাদের ওপর আক্রমণ চালায়। মনোয়ারা বেগমের বাড়িতে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ককটেল চার্জ করে অনেককে গুরুতর আহত করে। সন্ত্রাসীদের হামলায় মনোয়ারা বেগম এবং বিএনপি নেতা রায়হানসহ আরও কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। কেন তারা ধানের শীষের প্রার্থীর মনোনয়ন পত্র জমা দেয়ার সময় মিছিলে অংশগ্রহণ করেছে, এজন্য দাম্ভিকতার সাথে সন্ত্রাসীরা তাদের ওপর হামলা চালিয়েছে ও বাড়ীতে ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটিয়েছে। আমি আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার ও সমুচিত শাস্তির জোর দাবি করছি। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন – বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ দপ্তর সম্পাদক বেলাল আহমেদ প্রমুখ।