ঢাকা:১০২ দিন কারাবন্দী থাকার পর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী ড. শহিদুল আলম। তার জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল যথাযথ (অ্যাবসিলিউট) ঘোষণা করে গতকাল বিচারপতি শেখ আবদুল আউয়াল ও বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। এই মামলায় কারাগারে যাওয়ার ৩ মাসের কিছু বেশি সময় পর উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেলেন তিনি। আদালতে শহিদুল আলমের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সারা হোসেন।
সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী জোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। আইনজীবী সারা হোসেন জানান, হাইকোর্টের এই আদেশের ফলে শহিদুল আলমের কারামুক্তিতে কোনো বাধা নেই। অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আমরা হাইকোর্টের এই আদেশ স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে যাবো।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় উস্কানিমূলক গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গত ৫ই আগস্ট দৃক গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতা শহিদুল আলমকে ধানমন্ডির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় ৬ই আগস্ট তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সেই থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।
গতকাল শহিদুল আলমের জামিনের আদেশ শেষে তার আইনজীবী সারা হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আদালত বলেছেন, যেহেতু উনাকে অনেকদিন ধরে আটক রাখা হয়েছে, ১০২ দিন হয়ে গেছে এবং রিমান্ডে নেয়ার পরও তিনি (শহিদুল আলম) বলেন নি যে এ ধরনের কোনো বক্তব্য তিনি দিয়েছেন। এ ছাড়া তদন্ত প্রক্রিয়াও অনেকদিন ধরে পড়ে আছে। ১০২ দিন পরেও তা সম্পন্ন হয়নি। এই সব গ্রাউন্ডে আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘যে বক্তব্য উনি দিয়েছেন বলা হচ্ছে এবং আদালতে যে তথ্য প্রমাণ দেয়া হয়েছে সেই তথ্য প্রমাণ মিলে না।’ সারা হোসেন বলেন, ‘উনি (শহিদুল আলম) একজন নামকরা আলোকচিত্রী, সারা উপমহাদেশে এবং সারা পৃথিবীতে তিনি নামকরা- এ বিষয়টিও আদালত বিবেচনায় নিয়েছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে শহিদুল আলমের মুক্তি পেতে কোনো বাধা থাকবে না। শহিদুল আলমের স্ত্রী রেহনুমা আহমেদ বলেন, ‘বিচার বিভাগের প্রতি আবারো আস্থা ফিরে পেয়েছি। জামিন আগেই হওয়া উচিত ছিল। আশা করি তার কারাগার থেকে বের হওয়া নিয়ে আর কোন তালবাহানা হবে না। আমি খুশি।’
এর আগে গত ১১ই সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ইমরুল কায়েস শহিদুল আলমের জামিন আবেদন নাকচ করেন। পরে আইনজীবীদের মাধ্যমে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন তিনি। শুনানি নিয়ে গত ৭ই অক্টোবর এক আদেশে শহিদুল আলমকে কেন জামিন দেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন বিচারপতি একেএম আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।