পরিবর্তিত গণতন্ত্রে ক্ষমতাসীন দলের প্রধানের সঙ্গে বিরোধী দলের সরাসরি সংলাপ এটাই প্রথম বলা যায়। তবে এই সংলাপে সাবেক সরকার প্রধান অনুপুস্থিত থাকলেও তার দল কৌশলে সংলাপে আসছে, এটা নি:সন্দেহে একটি ভাল লক্ষন। সংলাপের সিদ্ধান্ত হওয়ার পর সংলাপে অংশ গ্রহনকারী জোটের প্রধান দলের প্রধানের বর্ধিত সাজা ও ধরপাকড় একটি অন্য সংকেত দেয়। জনগণ মনে করেছিলেন, মেঘহীন আকাশ থেকে হঠাৎ গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ায় চাতক পাখিরা উল্লাসে পড়ে গেছে। গণতন্ত্রের বাস্তবতা ও প্রাতিষ্ঠানিকরুপ দানের সংকটে পড়া জনগন এখন চাতক পাখি। কখন বৃষ্টি হবে আর চাতক পাখি বৃষ্টির পানি পান করে আবার জিঁইয়ে উঠবে, সেই আশায় আলোর ঝলকানী দিল। গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি যেন আসল বৃষ্টি হয়ে পড়ে, সেই দিনের অপেক্ষায় চাতক পাখিরা।
পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, জতাীয় পার্টির আমলে আওয়ামীলীগ যখন এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করে তখনও এরশাদ-হাসিনার মধ্যে সরাসরি কোন সংলাপ হয়নি। ৯৬ সালে বিএনপি সংলাপ না করে একতরফা নির্বাচন করে ১৫দিন ক্ষমতায় থাকে। আওয়ামীলীগ-বিএনপির মধ্যে সংলাপ হয়েছে দল দুটোর দ্বিতীয় ক্ষমতাধর নেতাদের মধ্যে, যা সফল হয়নি। ২০০৬ সালে সংলাপ সংলাপ করতে করতে সংবিধানই স্থগিত করে চলে আসে বে-আইনী সরকার। ২০১৪ সালে সরকার প্রধানের আহবানে অনুষ্ঠিত হয়নি সংলাপ। ২০১৪ সালে আওয়ামীলীগ সংলাপের আহবান করে প্রয়োজনীয় সাড়া না পাওয়ায় হয়নি সংলাপ আর সংলাপ না হওয়ায় অনুষ্ঠিত হয় একতরফা নির্বাচন। এতে আওয়ামীলীগ একতরফাভাবে নির্বাচন করে ৫বছর ক্ষমতায় আছে।
২০১৪ সালের ৫জানুয়ারী একতরফা নির্বাচনের পর সরকারী দল আওয়ামীলীগ কর্তৃক সাবেক সরকারী দল বিএনপি এখন কোনঠাসা। বিএনপির দলীয় প্রধান ও প্রধানের ছেলে সহ অসংখ্য নেতা-কর্মী দন্ডিত। অনেকে মারা গেছেন, অনেকে নিঁখোজ। বর্তমানে বিএনপির প্রায় সকল নেতা-কর্মীর নামে মামলা। ধরা যায় বিএনপি এখন অন্ধকারে।
সংলাপের সংস্কৃতি রীতি না হওয়ায় পরস্পর আক্রমনাত্বক হয়ে প্রতিহিংসার রাজনীতি তৈরী করেছে। এই প্রতিহিংসার রাজনীতির যাঁতাকলে পড়ে রাষ্ট্রের মালিক জনগন নিজের অধিকার প্রয়োগ করতে ভোট দিতে গিয়ে লাশ হয়েও ফিরে এসেছে। কেন্দ্রও পুঁড়ে গেছে। খুন হয়েছেন বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ যারা রাষ্ট্রের মালিক ছিলেন। কাজেই এমন ভোট যেন সংলাপের মাধ্যমে না আসে, যে ভোট ভোটারদের লাশ করে ঘরে ফিরে দেয়। তাই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে মেঘহীন আকাশ যেখানে ছিদ্র হয়ে গেছে, সেখানে বৃষ্টি পড়ার ব্যবস্থাটা যেন হয়ে যায়, সে আশা সকলের।
এই অবস্থায় বিএনপি সহ ঐক্য ফ্রন্টের সঙ্গে সরকার প্রধানের সংলাপ কি দিবে বা দিবে না সেটা নয়, তবে আশার আলো জাগিয়েছে এটা সঠিক। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি যদি বৃষ্টি হয়ে আসে তবে ধন্যবাদ পাবেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন সহ সকল দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক অংশিজনেরা।
সাধারণ মানুষ মনে করেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এই বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধভাবে যেন চলমান না থাকে, এই আশায় বুক বেঁধে আছে ভোটাররা। আর এই আশার সঞ্চার হওয়ায় চাতক পাখির মত অসহায় জনগন চেয়ে আছে সংলাপের সফলতার দিকে। যদি সংলাপ সফল হয়, তবে অনেক দিন পর বাংলাদেশ বসন্তের আমেজ উপভোগ করতে পারবে, এটাই এখন সকলের প্রত্যাশা।
লেখক
ড. এ কে এম রিপন আনসারী
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী
[email protected]