কূটনৈতিক প্রতিবেদক: মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুই দফা ভিডিও কনফারেন্স করে ঢাকা-নয়াদিল্লি সম্পৃক্ততা ও সম্পর্কের উষ্ণতার আরেক দফা বহিঃপ্রকাশ দেখালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাঁরা ঢাকা ও নয়াদিল্লিতে বসে যৌথভাবে মৈত্রী পাইপলাইন ও ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেলওয়ে প্রকল্প উদ্বোধন করেন। নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘মাত্র ১০ দিনেই আমরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাঁচটি প্রকল্প শুরু করেছি। এই গতি, অগ্রগতি, আপনার (শেখ হাসিনার) শক্তিশালী এবং দক্ষ নেতৃত্ব ছাড়া সম্ভব ছিল না।’
মোদি আরো বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আগামী দিনগুলোতে ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আমরা এমন মনোভাব নিয়েই কাজ করব।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতের অব্যাহত সহযোগিতা চেয়েছেন। অভিন্ন বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন। দুটি প্রকল্প উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিশ্চিত যে আগামী দিনগুলোতে আমাদের জনগণের কল্যাণে আমরা এ ধরনের অনেক আনন্দের অনুষ্ঠান করতে পারব।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে তাঁর জন্মদিনের (১৭ সেপ্টেম্বর) শুভেচ্ছা জানান। নরেন্দ্র মোদিও শেখ হাসিনাকে তাঁর জন্মদিনের (২৮ সেপ্টেম্বর) আগাম শুভেচ্ছা জানান।
এদিকে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি শিলিগুড়ি থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার (ভারতে পাঁচ কিলোমিটার, বাংলাদেশে ১২৫ কিলোমিটার) দীর্ঘ ‘বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইন’ নামে যে আন্তর্দেশীয় পাইপলাইন নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেছেন তার মাধ্যমে জ্বালানি খাতে দুই দেশের সহযোগিতার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হলো। ২২ ইঞ্চি ব্যাসের ওই পাইপলাইন দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে তুলনামূলক কম দামে বছরে ১০ লাখ টন জ্বালানি তেল সরবরাহ করা যাবে। ৫২০ কোটি টাকার ওই প্রকল্পে ভারত ৩০৩ কোটি রুপি মঞ্জুরি সহায়তা দেবে। বাকি ১৫০ কোটি টাকা দেবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)।
গতকালের অনুষ্ঠানে ভারতীয় ঋণের টাকায় বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-টঙ্গী সেকশনের তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েলগেজ লাইন এবং টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পও উদ্বোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এবং পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানও বক্তব্য দেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছুদিনের ব্যবধানে এটি আমাদের দ্বিতীয় ভিডিও কনফারেন্স। আমাদের যোগাযোগ সহজ হওয়ার কারণ প্রযুক্তিই শুধু নয়; বরং এর পেছনে আছে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের অবাধ গতি ও প্রবৃদ্ধি।’ তিনি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে পারিবারিক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘ভৌগোলিকভাবে আমরা প্রতিবেশী দেশ। কিন্তু চিন্তায় আমরা পরিবার। আমরা একে অন্যের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করি, একে অন্যের উন্নয়নে সহযোগিতার হাত বাড়াই।’
মোদি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে আমরা বিশ্বকে দেখিয়েছি, দুই দেশের বাসিন্দারা কী করতে পারে। দশকের পুরনো সীমানা বিরোধ হোক কিংবা উন্নয়ন সহযোগিতা প্রকল্প—আমরা সব বিষয়ে অবিস্মরণীয় অগ্রগতি করেছি।’
নরেন্দ্র মোদি এ জন্য শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। ১৯৬৫ সালের আগের দুই দেশের মধ্যে সংযোগগুলো পুনঃস্থাপনে শেখ হাসিনার লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করে মোদি বলেন, এটি ভারতকে অনুপ্রেরণা দেয়।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরো বলেন, ‘আমাদের দুই দেশের জনগণের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সড়ক ও রেল যোগাযোগসহ নতুন নতুন খাতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে।’
প্রকল্পগুলোতে সহায়তার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের মধ্যে এই যোগাযোগ বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যমান সহযোগিতার বন্ধনকে নিশ্চিতভাবে আরো সুদৃঢ় করবে।’
২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর থেকে ভারতের সঙ্গে সব ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে বিভিন্নমুখী উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী পাইপলাইনকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ইতিহাসে ‘মাইলফলক’ হিসেবে অভিহিত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এ ধরনের আরো প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়ন সম্ভাবনার দিগন্ত আরো সম্প্রসারিত হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণ সব সময়ই ভালো প্রতিবেশী।