গাজীপুরে স্প্রীড গভর্নর সিষ্টেমের অপপ্রয়োগ! বিশ বছরের সড়ক দূর্ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন

Slider গ্রাম বাংলা টপ নিউজ

গাজীপুর: বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা(বিআরটিএ) গাজীপুর সার্কেলে স্প্রীড গভর্নর সিষ্টেম প্রয়োগ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। গাড়ি পরীক্ষা না করে স্প্রীড গভর্নর সিল দেয়ায়, গাড়ি যাচাই হচ্ছে না। এই ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত ফি ৫০ টাকা হলেও ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। গাড়িতে স্প্রিড গভর্নর সিস্টেম যথাযথভাবে না থাকায় সড়ক দূর্ঘটনায় বেপরোয়া যানচলাচল নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে গেছে। ফলে বাড়ছে সড়ক দূর্ঘটনা। একই সঙ্গে স্প্রীড গভর্নর সিষ্টেমের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় রুলও জারী করেছে উচ্চ আদালত।

আজ রোববার বিআরটিএর গাজীপুর সার্কেলে খোঁজ নিয়ে এই তথ্য জানা যায়।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এই সার্কেলে স্পিড গভর্নর সিল দেয়ার জন্য একজন লোক নিয়োগ করা আছে। সিল কন্ট্রাক্টর পদের এই লোক নিয়োগ করে বিআরটিএ। বিআরটিএ এর গাজীপুর সার্কেলে মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন নামে একজন কর্মরত আছেন। প্রায় দুই যুগ ধরে তিনি এ পদে আছেন। তার চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ নিয়ে নানা গুঞ্জন আছে।

এ বিষয়ে বিআরটিএ’র গাজীপুর সার্কেলের সহকারী পরিচালক মোঃ এনায়েত হোসেন মন্টু উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, জাহাঙ্গীর হোসেনের মেয়াদ বৃদ্ধি হয়েছে কি না! তবে শেষে তিনি বলেন, সিল কন্ট্রাক্টর জাহাঙ্গীর হোসেন। তবে বিআরটিএ’র একটি সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে জাহাঙ্গীরের চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তিনি সিল কন্ট্রাক্টর। ৫০ টাকা ফি নিয়ে স্পিড গভর্নর সিল দেন। তবে সিল না মেরে ৩ হাজার টাকা নেয়ার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন। কিন্তু এ মাসে কতগুলো গাড়িতে তিনি স্পিড গভর্নর সিল দিয়েছেন তা বলতে পারেননি। গাড়িগুলোর নম্বর চাইলে জাহাঙ্গীর বলেন ঈদের পর দেয়া যাবে।

বিআরটিএ’র গাজীপুর সার্কেলে উপস্থিত ভূক্তভোগীরা জানান, টাকা দিলে সব হয়। পরীক্ষা বা সিল লাগে না। তবে এখন একটু কড়াকড়ি মনে হয়।

এমতাবস্থায়, ‘স্পিড গভর্নর সিষ্টেমের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় গত বিশ বছরে গাজীপুরে বা বিআরটিএ’র গাজীপুর সার্কেলের নম্বর নিয়ে চলা যে কোন গাড়ির বেপরোয়া গতির ফলে সৃষ্ট সড়ক দূর্ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, আইন মেনে ‘স্পিড গভর্নর সিষ্টেমের যথাযথ প্রয়োগ করলে হয়ত দূর্ঘটনা কম হতো।

প্রসঙ্গত: দেশের সব জাতীয় মহাসড়কের যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণের সিদ্ধান্ত রয়েছে। এ জন্য গাড়িতে ‘স্পিড গভর্নর’ নামের একটি যন্ত্র বসানো হবে। ওই যন্ত্রে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করে দেয়া থাকবে। এই গতিসীমা অতিক্রম করে চালক গাড়ি চালাতে পারবে না।
এ বিষয়ে ৭ আগষ্ট মহামান্য হাইকোর্ট “আইজিপিসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল” জারী করেন।

এ সংক্রান্ত খবরে বলা হয়, দেশের সব যানবাহনে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র স্থাপন না করায় আইজিপি, বিআরটিএর চেয়ারম্যান ও স্বরাষ্ট্র সচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

খুলনার জৈনক নাসির উদ্দিন বাচ্চুর দায়ের করা আদালত অবমাননার রিটের প্রেক্ষিতে বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্ট প্রথমে রুল এবং পরে শুনানি শেষে রায় দেন।

রায়ে সারা দেশে প্রতিটি গাড়িতে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র স্থাপনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কিন্তু সেই রায় ঘোষণার ১০ বছরেও নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক (পরবর্তীকালে প্রধান বিচারপতি) ও বিচারপতি আবদুল আউয়ালের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই বছরের ১০ মার্চ রায় দেন।

রায়ে বলা হয়, আগামী এক বছরের মধ্যে দেশের সব গাড়িতে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র স্থাপন এবং কেন্দ্রীয়ভাবে তা পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সব ট্রাফিক হেডকোয়ার্টারে গতি নিয়ন্ত্রক মনিটরিং ব্যবস্থা স্থাপন করতে হবে।

একই সময়ের মধ্যে যেসব গাড়িতে ওই নিয়ন্ত্রক যন্ত্র স্থাপন করা হবে না তার মালিকদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। এ ব্যবস্থা কার্যকর করতে সংস্থাপন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও নিয়োগের ব্যবস্থা করতে এবং প্রয়োজনীয় অর্থ দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন আদালত।

এছাড়া এসব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়কে আদেশ কার্যকর করতে ও বিআরটিএকে সব ধরনের সহায়তা দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু হাইকোর্টের দেয়া সময়সীমা পার হয়ে ১০ বছর কেটে গেলেও কোনো মন্ত্রণালয়ই ওই আদেশ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করেনি।

চলবে–

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *