বিশেষ প্রতিবেদন: ভেজাল বিরোধী অভিযানে যেন ভেজাল না থাকে

Slider টপ নিউজ বাংলার আদালত

FB_IMG_15274202120599437

গাজীপুর: ভেজাল বিরোধী অভিযান নির্ভেজাল হওয়া উচিত। ভেজাল বিদায় করতে গিয়ে যেন নতুন ভেজাল না হয়, সে দিকে বিশেষ নজর রাখা দরকার। সম্প্রতি বেশ কিছু ভেজাল বিরোধী অভিযানের কিছু কিছু বিষয় নিয়ে বিচ্ছিন্ন অভিযোগ উঠছে। এ সকল বিষয় সম্পর্কে সতর্ক না থাকলে ভেজাল আরো বেড়ে যাবে।

পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, কিছু কিছু ভেজাল বিরোধী অভিযানের পর পুনরায় একই অপরাধ সংঘটিত হয়। যেমন, ফুটপাত উচ্ছেদ করার পিছন দিয়ে আবার ফুটপাত বসে যায়। আবাসিক হোটেলে অভিযান পরিচালনার পর আবার অবৈধ ব্যবসা শুরু হয়ে যায়। হোটেল সিলাগালা করার পরও আবার কাজ শুরু হয়। অভিযান পরিচালনার পর অভিযুক্ত হোটেলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের বা মামলা দায়েরে বিলম্ব হওয়ার ফলে আবার অবৈধ ব্যবসা শুরু হয়ে যায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, কিছু সংখ্যক প্রতারক ভেজাল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে ফায়দা হাসিল করতে গিয়ে বাঁধাপ্রাপ্ত হলে ফোনে বা লিখিতভাবে অভিযোগ করেন প্রশাসনের নিকট । এরপর ভ্রাম্যমান আদালত গিয়ে জড়িমানা করে। ফলে অভিযুক্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কথিত সুবিধাবাদী চক্রকে নিয়মিত সুবিধা দিতে বাধ্য হয়। এই অবস্থা চলছে অনেক দিন। কেউ মুখ খুলছে না, প্রতারক চক্রের ভয়ে। কারণ প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে জড়িমানার মাত্রা বেড়ে যেতে পারে এই ভয় রয়েছে ভুক্ত ভোগীদের।

সাধারণ মানুষের অভিমত, কারো বিরুদ্ধে দন্ড হলে মামলা দায়েরের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করা উচিত। একই সাথে অভিযোগকারীদের ধরণ ও প্রকৃতি বিবেচনা করে অভিযানে যাওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন সহ ভ্রাম্যমান আদালত সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা, কাজে লাগিয়ে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করলে ভেজাল বিরোধী অভিযানে ভেজাল হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস পেতে পারে।

37031077_1974443596179772_6428727806229741568_n

প্রসঙ্গত: বুধবার (১১ জুলাই) দুপুরে মহানগরীর জোড়পুকুর সড়কে অবস্থিত স্বপ্ন সুপার শপের ওই শাখায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের গাজীপুরের সহকারি পরিচালক রিনা বেগম এ অর্থদণ্ড দেন।

তিনি গ্রামবাংলানিউজকে বলেন, এক আম ক্রেতার অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তবে তাকে রাখা অবশিষ্ট আম জব্দ করা হয়নি।

আমের ক্রেতার পরিচয় জাইতে চাইলে তিনি বলেন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জীব কুমার দেবনাথ স্যার আমাকে অভিযান করতে পাঠিয়েছেন। কয়েকদিন আগে একজন অভিযোগ দিয়েছিল।

ক্রেতা কত কেজি আম কিনেছিল জানতে চাইলে সহকারি পরিচালক বলেন, “স্বপ্নের লোকেরাও তো সব স্বীকার করেছে। আম খেয়ে অভিযোগকারীর বাচ্চার শরীর ফুলে গেছে। কয়েকদিন আগে এখান থেকে আমিও এমন আম কিনেছিলাম। আমার একই সমস্যা হয়েছিল।”

স্বপ্নের বিক্রয় কর্মীরা নাম গোপনের শর্তে গ্রামবাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন, এক ক্রেতা গত ৬ জুলাই ১ কেজি ৬০০ গ্রাম ফজলি আম ৫২ টাকা কেজি দরে ক্রয় করেন। পাঁচদিন পর আম খেয়ে তার মেয়ের ঠোঁট ফুলে গেছে বলে জানান।

তাদের অভিযোগ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অভিযান পরিচালনার প্রায় দুঘণ্টা আগে স্বপ্নের এই শাখায় ক্যামেরা হাতে সাংবাদিক পরিচয়ে দুই প্রতারক ঢুকেন। তখন তারা একটি স্যাটেলাইট টিভির (খবরের চ্যানেল) সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেন। এসময় এক বিক্রয়কর্মী পরিচিত একজন সাংবাদিককে বিষয়টি ফোন করে জানালে দুই প্রতারক দ্রুত চলে যান।

এ বিষয়ে রিনা বেগম বুধবার রাত সাড়ে ৮টায় দিকে বলেন, স্বপ্নের লোকরা বিষয়টি আমাকে বলেনি। বললে অন্যভাবে বিবেচনা করতাম। ফুটেজ দেখতাম। বরং অভিযোগকারী পাল্টা বলতেছিল স্বপ্নে আম ফেরত দিতে গেলে তাকে বারবার হুমকি দেওয়া হয়েছে। অভিযোগকারীর নাম অফিসের ফাইলে আছে। তিনি মূলত ডিসি অফিসেই অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলেন।

আমের সমস্যা কোন পদ্ধতিতে পরীক্ষা করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমটা দেখেছি অপরিপক্ক। নষ্ট টাইপেরও কিছু আম ছিল। সার্বিক দিক বিবেচনা করেই জরিমানা করা হয়েছে। তবে কোনো আম জব্দ করা হয়নি বলেও তিনি স্বীকার করেন।

আম হাতে ধরে বা খালি চোখে দেখে পরীক্ষা করেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে দেখেই সনাক্ত করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *