মাত্র ৬ হাজার টাকার জন্য বগুড়ার শিবগঞ্জের আলোচিত চার খুন হয়েছে বলে দাবী করেছে পুলিশ। ঘটনার এক সপ্তাহ পর মুল কিলার জুয়েল শেখসহ ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভূঞা সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়ে তিনজনকে গ্রেফতারের কথা জানান।
নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরি প্রেসব্রিফিংয়ে পুলিশ সুপার জানান, চাঞ্চল্যকর চার খুনের সাথে সরাসরি জড়িত তিন জনকে রোববার দিবাগত রাতে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স এর ইন্টেলিজেন্স উইং এর সহযোগিতায় বগুড়া জেলা পুলিশ চাঞ্চল্যকর চার খুনের সাথে জড়িত এই তিন আসামীকে ধরতে সক্ষম হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হলো- বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার কাঠগড়া চকপাড়া গ্রামের রফিকুল শেখের ছেলে জুয়েল শেখ (২৫), চন্দনপুর তালুকদারপাড়ার আব্দুস সামাদের ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৪৮) এবং ডাবইর গ্রামের মৃত আবু বক্করের ছেলে রুবেল।
এদের মধ্যে জুয়েল শেখ নিজহাতে জাকারিয়াকে গলা কেটে হত্যা করে বলে পুলিশের নিকট স্বীকারোক্তি দিয়েছে।
পরে র্যাব-১২, বগুড়া ক্যাম্পের এক প্রেস রিলিজে আরো দুইজনকে আটকের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সোমবার বেলা আড়াইটায় বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ থানার ভাইয়ের পুকুর বাজারে অভিযান পরিচালনাকালে চাঞ্চল্যকর শিবগঞ্জ থানার ফোর মার্ডারের সন্দিগ্ধ আসামী শিবগন্জের বাদলাদিঘি গ্রামের মৃত রোস্তম আলীর ছেলে মোঃ আবু বক্কর প্রামাণিক (৫০) ও কাঠপাড়ার মৃত আব্দুস ছাত্তারের ছেলে মোঃ জাহিদুল ইসলাম ওরফে টেরা (৪৮) কে গ্রেফতার করেছে। তাদেরকে শিবগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সুপার জানান, খুনের সাথে মোট ৯ জন জড়িত। মূলত মাদক বিক্রির টাকা নিয়েই চাঞ্চল্যকর খুন সংঘটিত হয়েছে বলে গ্রেফতারকৃতদের দেয়া তথ্য থেকে জানা গেছে।
মাদকের টাকা নিয়ে নিহত জাকারিয়া ও সাবরুলের সাথে জুয়েল শেখের বিরোধ ছিল। জুয়েলের নিকট থেকে ৬ হাজার টাকা পাওনা ছিল জাকারিয়া ।
ঘটনার ২-৩ দিন আগে জুয়েল শেখ সহ অন্যান্য খুনিরা খুনের পরিকল্পনা করে। এরপর ঘটনার রাতে জুয়েল শেখ ফোন করে জাকারিয়াকে টাকা নেয়ার জন্য তার কাছে যেতে বলে। সাথে সাবরুলকেও নিয়ে আসতে বলে। পাওনা টাকা পাওয়ার আশায় জাকারিয়া তার বন্ধু সাবরুলকে সাথে নিয়ে জুয়েল শেখের নিকট যাওয়ার পথে মাঠের মধ্যে তাদেরকে আটকে দুজনকেই গলা কেটে হত্যা করা হয়।
জুয়েল শেখ নিজে জাকারিয়াকে গলা কেটে খুন করে। সাবরুলকে খুন করে অন্যজন। এসময় সেই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় খুনিদের নজরে পড়ে হেলাল ও খবির। খুনের ঘটনা দেখে ফেলার অপরাধে পরে ওই দুজনকেও গলা কেটে হত্যা করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে- হেলাল এবং খবিরকে হত্যার কোন টার্গেট তাদের ছিলো না। দুজনকে হত্যার ঘটনা দেখে ফেলার কারনেই তাদেরকে হত্যা করা হয়। নিহত হেলাল এবং খবিরও মাদক ব্যবসায়ী ছিল। তারা ঘটনার সময় মাদকদ্রব্য নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে হত্যাকান্ডের শিকার হয় ।
এদিকে শিবগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, পুলিশ সুপার জেলা পুলিশের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা ও প্রধান আসামী জুয়েল শেখ কে নিয়ে বিকেলে ঘটনাস্থলে যান। এরপর পুলিশের সাথে জুয়েল শেখ ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যাকান্ডের বর্ণনা দেন। এরপর তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। প্রয়োজনে গ্রেফতারকৃতদের রিমান্ডে নেয়া হতে পারে বলেও পুলিশ সুপার জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৭ মে বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার একটি ধান ক্ষেত থেকে চার যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকান্ডের শিকার তিন যুবক হলো- উপজেলার আটমুল ইউনিয়নের কাঠগাড়া গ্রামের আছির উদ্দিনের ছেলে পানের দোকানী সাবরুল ইসলাম (৩৫) ও একই গ্রামের রঙ মিস্ত্রি জহুরুল ইসলামের ছেলে জাকারিয়া ইসলাম (৩২) এবং জয়পুরহাট জেলার কালাই উপজেলার পুনট ইউনিয়নের পাঁচপাইকার চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের আজাহার উদ্দিনের ছেলে হেলাল উদ্দিন (৩৬) ও একই এলাকার খবির হোসেন। নিহতদের প্রত্যেকের গলাকাটা ছিলো। এরমধ্যে দুইজনের হাত পিঠমোড়া করে বাঁধা ছিল। আর একজনের একটি পা কাটা ছিল।