আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি এক লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এই ঘাটতি মেটানোর জন্য বৈদেশিক সহায়তা ও ঋণ পাওয়ার আশা করা হচ্ছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। আর অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মাত্র ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়া হবে। বাকি অর্থ ব্যাংক বহির্ভূত ঋণ ও সঞ্চয়পত্র থেকে সংগ্রহ করা হবে। আর এতে ঘাটতি থাকবে জিডিপির অংশ হিসেবে শতকরা ৫ শতাংশ। এই হিসাবে আগামী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হচ্ছে ৪ লাখ ৬০ হাজার ২০২ কোটি টাকা। অর্থ বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গত বৃহস্পতিবার অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে কো-অর্ডিনেশন ও সম্পদ কমিটির বৈঠকে নতুন অর্থবছরের বাজেটের আকার ঠিক করা হয়েছে। এই আকার থেকে কিছুটা যোগ-বিয়োগ করে আগামী ৭ জুন বাজেট পেশের কয়েক দিন আগে আগামী অর্থবছরের সামগ্রিক ব্যয় (বাজেট) নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, আগামী অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হচ্ছে সাত দশমিক ৮ শতাংশ, চলতি অর্থবছরে যা ছিল সাত দশমিক ৪ শতাংশ। কিন্তু পরিকল্পনা কমিশন ইতোমধ্যে বলেছে, জিডিপির প্রবৃদ্ধি হবে সাত দশমিক ৬৫ শতাংশ। অন্য দিকে আগামী অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ২ লাখ ৪৮ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে এনবিআর বহির্ভূত আয় ধরা হয়েছে ১১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৮ হাজার ৬৫৬ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে কর ব্যতীত প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে ৩১ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে এক লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে যা রয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরের এডিপির মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে জোগান দেয়া হবে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে প্রাক্কলন করা হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরে বাজেট ইতোমধ্যে সংশোধন করা হয়েছে। আশানুরূপ রাজস্ব না হওয়ায় ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকার মূল বাজেট থেকে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করা হয়েছে। ফলে চলতি ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে সংশোধিক বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে বাজেটে কমেছে সাত দশমিক ১৮ শতাংশ, যা বিগত চার অর্থবছরের সবচেয়ে বেশি।
বিভিন্ন বছরের বাজেট ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে বাজেট কাটছাঁট করা হয়েছিল প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে যা ছিল ২৬ হাজার কোটি টাকা। এবং ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বাজেট কাটছাঁটের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার কোটি টাকা। আর এবার এই হার বেড়ে হয়েছে প্রায় ২৮ হাজার ৭৭১ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার বড় অঙ্কের বাজেট সংশোধনের মূল কারণ লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে ব্যর্থতা। চলতি অর্থবছরে বাজেটে রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে দুই লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে দুই লাখ ৫৯ হাজার ৪৫৪ কোটি টাকা। রাজস্ব প্রাপ্তির মধ্যে এনবিআরের জন্য লক্ষ্য নির্ধারিত রয়েছে দুই লাখ ৪৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছর শেষে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না- এই পূর্বাভাসের কারণে এনবিআর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা।