মিরপুরে ফ্ল্যাটে মা ও ২ মেয়ের গলাকাটা লাশ : হত্যা না আত্মহত্যা!

Slider বিচিত্র

314880_178

রাজধানীর মিরপুর বাংলা কলেজের পাশের সরকারি কলোনির একটি ফ্যাট থেকে এক মহিলা (৩৫) ও তার দুই শিশু সন্তানের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সন্ধ্যার পর পাইকপাড়ার ফ্যাটের দরজা ভেঙে পুলিশ লাশ তিনটি উদ্ধার করে। এ সময় হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছোরা উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় ওই এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

এ দিকে ‘ত্রিপল মার্ডারের’ সংবাদ পাওয়ার পরই পুলিশ, র‌্যাব, ডিবি ছাড়াও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ওই ফ্যাট এবং আশপাশের এলাকা ঘিরে ফেলে। সিআইডি ক্রাইম সিনের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোরা রক্তসহ বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ ও ফ্যাটের বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার নিহতরা হচ্ছেন- মা জেসমিন আক্তার (৩৫), তার দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে হাসিবা তাসসিন হিমি (৯) ও ছোট মেয়ে হাদিবা তাসসিন হানি (৬)।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিহত জেসমিন আক্তারের স্বামী দাবি করেছেন, তার স্ত্রী অসুস্থতা থেকে মানসিক সমস্যায় ভুগছিলেন। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তদন্তের পরই বলা যাবে তারা তিনজনই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন কি না?
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিহত জেসমিন আক্তার ঢাকার খামার বাড়িতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে চাকরি করতেন। আর তার স্বামী হাসিবুল ইসলাম হাসান সংসদ সচিবালয়ে চাকরি করতেন। দুই মেয়ে ও স্বজনদের নিয়ে তারা ওই কলোনির ফ্যাটে বসবাস করতেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বাংলা কলেজের উত্তর পাশের টোলারবাগ এলাকার সরকারি স্টাফ কোয়ার্টারের সি-টাইপ ভবনের চতুর্থ তলার জেসমিনের ফ্যাটের দরজার নিচ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। এটি দেখে পাশের ফ্যাটের প্রতিবেশীরা আঁতকে ওঠেন। তারা বিষয়টি প্রতিবেশীদের জানান। এরপর তার স্বামী এবং স্বজনসহ অন্যদের জানানো হলে তাদের মাধ্যমে দারুস সালাম থানার পুলিশ হাজির হয়। পুলিশ ওই ফ্যাটে এসে অনেকক্ষণ ধাক্কাধাক্কি আর ডাকাডাকির পরও সাড়া না পেয়ে একপর্যায়ে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় বদ্ধ ওই ঘরে শিশু দু’টির লাশ ফোরে আর মায়ের লাশ খাটের ওপরে পড়ে থাকতে দেখেন। লাশের পাশেই হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি ছুরি দেখতে পায়। জিয়াসমিনের গলায় কাটা জখম ও পেটে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। আর দুই মেয়ের গলা কাটা ছিল। দুই শিশুর হাতের কব্জি কাটা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম রয়েছে।

ঘটনাস্থলে নিহতের স্বামী হাসিবুল ইসলাম হাসান দারুস সালাম থানার সাব ইন্সপেক্টর রুহুল আমিনকে জানান, তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডের মোটিভ দেখে পুলিশের প্রাথমিক ধারনা, মা জেসমিন তার দুই মেয়েকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।
তবে দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিমুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, তদন্তসাপেক্ষে বলা যাবে নিহত তিনজনই কি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে কি না। আমরা লাশগুলো সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ঘটনার পরপরই পুলিশ স্বামী হাসানকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
এ দিকে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, বিকেল ৫টায় জেসমিনের স্বামী হাসিব কর্মস্থল থেকে ফিরে তাদের শোবার ঘর ভেতর থেকে বন্ধ দেখতে পান। বেলা ৩টায় দুপুরের খাবার খেয়ে দুই মেয়েকে নিয়ে শোবার ঘরে ছিলেন জেসমিন। অন্য ঘরে জেসমিনের ভাইসহ অন্য স্বজনেরা ছিলেন।

ঘটনাস্থল প্রাথমিকভাবে খতিয়ে দেখে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, যেখানে হত্যার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে বাইরে থেকে এসে কোনো লোক দিয়ে ঘটনা ঘটার আশঙ্কা খুবই কম।

পরিবারের সদস্যদের উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, জেসমিন আক্তারের মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে, কিছুদিন আগে ভারত থেকে চিকিৎসা করিয়ে আনা হলেও কোনো উন্নতি হয়নি। পাশাপাশি এক মাস আগে তার মা মারা যায়। এরপর তিনি আরো হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তিনি সব সময় বলতেন, নিজে না থাকলে মেয়েদের কে দেখবে। মানসিক সমস্যার কারণে জেসমিন ২৫ দিন আগে মেয়েদের অতিরিক্ত ঘুমের বড়ি খাওয়াতে গিয়েছিলেন বলে পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে জানিয়েছে। সব মিলিয়ে এই মৃত্যুর ঘটনাটি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান পুলিশের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
নিহত জেসমিন আক্তারের গ্রামের বাড়ি ঠাকুরগাঁও। তার স্বামীর গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড়ের ভজনপুর গ্রামের বাসিন্দা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *