তিস্তা পানিবণ্টন নিয়ে আবার মোদির আশ্বাস

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি সারাদেশ

b87e2f41eec097f66346aa3557e77047-5addf360b0d90

নয়াদিল্লি: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ প্রতিনিধিদের ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, বাংলাদেশের সুখে-দুঃখে ভারত সব সময় পাশে থাকবে।

আজ সোমবার বিকেলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন সেতুমন্ত্রী ওয়ায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে সফররত প্রতিনিধিদলকে এ কথা জানিয়ে মোদি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকে যে সম্পর্কের শুরু, আজ তা এক অনন্য উচ্চতায় স্থাপিত। ভারত ও বাংলাদেশের এই সম্পর্ক কালের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ।

ভোটের আগে বাংলাদেশের কাছে যে বিষয় সবচেয়ে স্পর্শকাতর, সেই তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে আধা ঘণ্টার ওই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে মোদি আশ্বাস দেন। বলেন, ‘আমরা দ্রুত এর সমাধান করতে আগ্রহী।’ রোহিঙ্গা প্রসঙ্গেও তিনি বলেন, বাংলাদেশের ভূমিকা ভারত সমর্থন করে। ভারত চায় দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হোক।

বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক রাম মাধবের আমন্ত্রণে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের ২০ জনের এই প্রতিনিধিদল গত রোববার তিন দিনের সফরে দিল্লি আসেন। রাজঘাটে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে সোমবার তাঁরা ভারতীয় সংসদ ভবন ঘুরে দেখেন। বিকেল সোয়া চারটায় বৈঠক হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। প্রতিনিধিরা এরপর যান দীনদয়াল উপাধ্যায় মার্গে বিজেপির নতুন সদর দপ্তরে। দলের সভাপতি অমিত শাহর অনুপস্থিতির দরুন অন্য শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাঁদের বৈঠক হয়। রাতে তাঁরা যোগ দেন রাম মাধবের দেওয়া নৈশভোজে। কাল মঙ্গলবার প্রতিনিধিরা ঢাকা ফিরে যাচ্ছেন।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী, মোদিকে তা ব্যাখ্যা করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। বাংলাদেশ হাইকমিশনের মিনিস্টার প্রেস ফরিদ হোসেন বৈঠক শেষে জানান, এ আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। তাঁর নেতৃত্বে দেশ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে দ্রুত উন্নতি করছে।’ মোদি বলেন, ‘সফল নেতৃত্ব একটা দেশকে কোথায় এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, বাংলাদেশ তার প্রমাণ। তুলনা টেনে তিনি বলেন, আজ কোথায় পাকিস্তান, আর কোথায় বাংলাদেশ!’
বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এই প্রথম আওয়ামী লীগের এত বড় এক প্রতিনিধিদলের দিল্লি আসা।এই সফর আরও গুরুত্বপূর্ণ বছর শেষে বাংলাদেশের ভোটের দরুন। গতবার সংসদীয় ভোটে বিএনপি অংশ নেয়নি। এবারের ভোটে তারা কী করবে তা এখনো অজানা। সে দলের নেত্রী খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় জেলবন্দী। তাঁর জামিন এখনো কার্যকর হয়নি। এই রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত থাকলে এবং ভোট হলে তার প্রতিক্রিয়া ভারতে কী হতে পারে, তা জানা-বোঝাও এই প্রতিনিধিদলের অন্যতম উদ্দেশ্য। আগের ভোটের ‘প্রশ্নবিদ্ধতাকে’ গুরুত্ব না দিয়ে শুরু থেকেই বাংলাদেশের শাসক দলের পাশে দাঁড়িয়ে ভারত সেই ভোটকে মান্যতা দিয়েছে। ভারতের মান্যতার প্রয়োজনীয়তা বাংলাদেশের কাছে অনস্বীকার্য।
ঐতিহাসিক কারণে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সম্পর্ক সুবিদিত। ভারতে পালাবদলের পর বিজেপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক কেমন হবে, তা নিয়ে একটা সংশয় ছিল। গত চার বছরে সেই সংশয় শুধু ঘুচেই যায়নি, বিজেপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক ক্রমশ জমাট বেঁধেছে। পারস্পরিক নির্ভরতাও সৃষ্টি হয়েছে। গত রোববার বাংলাদেশ হাইকমিশনে এক নৈশভোজে প্রতিনিধিদলের এক শীর্ষ নেতা এই পারস্পরিক নির্ভরতার প্রসঙ্গে বলেন, ‘সম্পর্কের ধারাবাহিকতা রক্ষায় দুই দেশের শাসক দলই সচেষ্ট। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের এই সম্পর্কের ভিত্তি।’
সম্প্রতি কংগ্রেসের আমন্ত্রণে দলের প্লেনারি অধিবেশনে আওয়ামী লীগের নেত্রী দীপু মনির নেতৃত্বে তিন সদস্যের এক প্রতিনিধিদল দিল্লি এসেছিল। বিজেপির আমন্ত্রণে আসা প্রতিনিধিদের সংখ্যা সেই তুলনায় বহুগুণ বেশি। সংখ্যার এই হেরফেরের মধ্য দিয়েও সম্পর্কের গভীরতা বোঝানোর এক প্রচ্ছন্ন চেষ্টা রয়েছে বলে কূটনৈতিক মহলের ধারণা। বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গতি-প্রকৃতি নিরীক্ষণকারী এক সাবেক কূটনীতিকের মতে, এত বড় প্রতিনিধিদল নিয়ে এই সফরে আসার অন্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রতিপক্ষকে বোঝানো, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ধারাবাহিকতা অব্যাহতই শুধু নেই, আরও দৃঢ় হয়েছে। সাবেক ওই ভারতীয় কূটনীতিকের মতে, ‘বিএনপির বোঝা উচিত, জামায়াতের সঙ্গে তারা এখনো সম্পর্ক ছিন্ন করেনি। তা না করলে ভারতের কোনো রাজনৈতিক দলের নেকনজরে তারা আসতে পারবে না।’
বাংলাদেশের জনগণ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শুভেচ্ছাবার্তা নরেন্দ্র মোদিকে পৌঁছে দেন প্রতিনিধিদলের নেতা ওবায়দুল কাদের। তিনি ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেন পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমান। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সৈয়দ মুয়াজ্জেম আলীও এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছাড়া ভারতের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখেল, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব শ্রীপ্রিয়া রঙ্গনাথন ও মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবিশ কুমার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *