যখন রাস্তায় কোনো কারণে দাঁড়িয়ে থাকি, আমার ভয় হতে থাকে যে, কোনো ছেলে হয়তো শিস দেবে বা জিজ্ঞাসা করবে, ‘তোর রেট কত? চল…’
কখনো আবার মনে হয় কেউ আমার পা ছুঁয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ চাইবে। কেউ আমাকে পরিবারের কলঙ্ক বলে, কেউ আবার মনে করে আমি দেবী। বেশ্যা তো অনেকেই বলে আমাকে। কিন্তু রুপেশ থেকে রুদ্রাণী হয়ে ওঠায় আমার কোনও লজ্জা নেই।
বাড়িতে আমিই সবার বড় ছিলাম। কিন্তু কখনো আমার শরীর নিয়ে সহজ হতে পারতাম না। নিজেকে মনে হতো একটা ছেলের শরীরে যেন বন্দি হয়ে আছি।
আমার হাবভাব সবই মেয়েদের মতো ছিল; সাজতে ভালোবাসতাম খুব। ওই শরীরে বন্দি হয়ে থাকাটা আমাকে পাগল করে দিত, কিন্তু আমি কখনো হেরে জেতে চাইনি।
আমি কনভেন্ট স্কুলে পড়াশোনা করেছি। ছেলেদের ইউনিফর্ম পড়েই স্কুলে যেতে হতো আমাকে। জামা-প্যান্ট বা জিন্স পরে আমি কখনোই সহজ হতে পারতাম না। দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ওই একই কনভেন্ট স্কুলে পড়েছি। ওখানেও সবাই আমাকে নিয়ে মজা করত, হেনস্থাও হতে হয়েছে। তাই কলেজে পড়তে যেতে ইচ্ছা করে নি আমার।
ধীরে ধীরে মানুষের সঙ্গে মেলামেশা বাড়াতে লাগলাম। পরিচিতি বাড়তে লাগল। আমি রূপান্তরকামী নারী এটা জানার পরে ধীরে ধীরে মডেলিংয়ের অফার পেতে শুরু করলাম। অভিনয়ও শুরু করি তখন থেকেই। বিদেশ থেকেও মডেলিংয়ের অফার পেতে শুরু করলাম।
এখন ছোট হলেও আমার নিজের একটা বাড়ি আছে। নিজের হাতে সাজিয়েছি ঘরটা। আজ রুদ্রাণী নিজের পরিচয়েই পরিচিত হয়েছে। সমাজ থেকেও সম্মান পাই। লোকে আমার ব্যবহার পছন্দ করে।
তবে একটা বিষয় অধরাই থেকে গেছে সেক্স বদল করার পরেও। এ ব্যাপারটা আমাকে সবসময়ে নাড়া দেয়। আমার জীবনে অনেকে আসে, আর চলে যায়। কেউ আমার জীবনসঙ্গী হতে চায় না। কারণ আমি নারী হয়ে উঠলেও কখনও মা হতে পারব না।