নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশের বেসরকারি বিমান সংস্থা ইউএস–বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স নেপালের সেনাবাহিনীর একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে এ কথা জানিয়েছে। তবে বার্তা সংস্থা এএফপি বলেছে, কমপক্ষে ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। তবে নিহতদের মধ্যে কতজন বাংলাদেশি তা এখনো জানা যায়নি।
নেপালের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস জানিয়েছেন, বিমানে মোট যাত্রী ছিলেন ৬৭ জন। ৪ জন ক্রু। ৩২ জন বাংলাদেশি। ১ জন মালদ্বীপের। একজন চীনের। বাকিরা নেপালি। ৪৯ জন নিহত হয়েছেন। কতজন নেপালি, কতজন বাংলাদেশি তা আমরা এখনো নিশ্চিত না। ১০ জন বাংলাদেশি জীবিত আছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। আমাদের কর্মকর্তাদের সাথে তাদের কথা হয়েছে। আরো চারজন বাংলাদেশিকে চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’
দুর্ঘটনার কারণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মাশফি বিনতে শামস বলেন, ‘কারণ তদন্ত হবে। নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি করেছে। ওদের ক্যাবিনেট থেকেও একটি কমিটি হবে। এরপর কারণ জানা যাবে।’
জানা যায়, সোমবার দুপুর ১২টা ৫১ মিনিটে ৭১ জন যাত্রী নিয়ে নেপালের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ে ইউএস বাংলার ড্যাশ এইট কিউ ফোর হানড্রেড মডেলের এই বিমানটি। দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। সাথে সাথে রানওয়ে থেকে ছিটকে বিমানটি পাশের খালি মাঠে গিয়ে পড়ে। দুই ইঞ্জিনের বিমানটি ভেঙ্গে কয়েক টুকরো হয়ে পড়ে। বিক্ষিপ্ত অংশগুলোতে লাগা আগুনের কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় গোটা বিমানবন্দর।
নেপালের পুলিশ বিবিসিকে জানিয়েছে, ৩১ জন ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। আরো ৯ জন পরে হাসাপাতালে মারা গেছেন। এখনও আটজন নিখোঁজ রয়েছে। বাকিদেরকে হাসপাতালে চিকিৎসা করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই গুরুতর। বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের একজন নেপালের একটি সংবাদপত্রকে বলেছেন, বিধ্বস্ত বিমানটির জানালা দিয়ে তিনি বের হয়ে আসেন। এবং তিনি নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করছেন। দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি।
আমি ভাগ্যবান : দুর্ঘটনার বিবরণ দিলেন বেঁচে যাওয়া বিমান-যাত্রী
কাঠমান্ডুতে ইউএস বাংলা বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী বসন্ত বোহরা বলেছেন, সৌভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে গেছেন। সোমবার ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ওই দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বেশ কয়েকজন যাত্রী হতাহত হয়েছে বলে কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে।
বসন্ত বোহরা এবং আরো ১৫ জন নেপালি আরোহী ছিলেন বিমানটিতে। তারা রাস্তবিতা ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস-এর পক্ষ থেকে তারা বাংলাদেশে এসেছিলেন প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে।
বসন্ত বলেন, ঢাকা থেকে বিমানটি উড্ডয়নের সময় সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিমানটি অদ্ভূত আচরণ করছিল।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে বিমানটি প্রবলভাবে ঝাঁকুনি দেয়। তারপরই হয় প্রচণ্ড শব্দ। আমার আসনটি ছিল বিমানের কাছে। আমি জানালা ভেঙে বের হতে পেরেছিলাম। তিনি এখন থাপাথালিভিত্তিক নরভিক হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নেপালে ইউএস-বাংলা বিমান বিধ্বস্ত
বাংলাদেশের ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি বিমান আজ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে ত্রিভূবন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে (টিআইএ) বিধ্বস্ত হয়েছে। কাঠমান্ডু পোস্ট এ খবর জানায়।
ইউএস -বাংলা জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং সাপোর্ট এন্ড পিআর) কামরুল ইসলাম এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি দুঘর্টনার কয়েক মিনিট পরেই বাসসকে জানান, আমরা কাঠমান্ডু টিআইএ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। সেখানে উদ্ধার অভিযান চলছে।
নেপালের একটি অনলাইন পত্রিকা বিমান বন্দর মুখপাত্র প্রিম নাথ ঠাকুরের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, বিমানটি অবতরণ করার সময় বিমান বন্দরের পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। এস২-এজিইউ নামের এ বিমানটি ঢাকা থেকে ছেড়ে যায় এবং স্থানীয় সময় দুপুর ২ টা ২০ মিনিটে টিআইএ অবতরণ করে।
বিধ্বস্ত হবার পর বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। বিমানবন্দরের উদ্ধারকারী দল এবং নেপাল সেনাবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছেন। বিমানের যাত্রীদের অবস্থা সম্পর্কে এখনো কিছু জানা যায়নি।