পুষ্টি বিষয়ে ১০টি ভুল ধারণা দূর করুন

লাইফস্টাইল

image_159599.imagesখাদ্য ও পুষ্টি নিয়ে মানুষের মাঝে বেশ কিছু ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এসব ভুল ধারণা গড়ার পেছনে অনেকাংশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের হাত রয়েছে। এ লেখায় থাকছে তেমন কয়েকটি ভুল ধারণা।
১. ডিম অস্বাস্থ্যকর
প্রচলিত একটি ভুল ধারণা হলো ডিম অস্বাস্থ্যকর খাবার। অনেকেই ডিমের কোলেস্টরেলের কারণে একে অস্বাস্থ্যকর ও হৃৎপিণ্ডের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেন। কিন্তু গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, ডিমের কোলেস্টরেল রক্তের কোলেস্টরেল মাত্রা বাড়ানোর জন্য দায়ী নয়। আর ডিম বিশ্বের অন্যতম পুষ্টিকর খাবারও বটে।
২. দ্রবীভূত ফ্যাট ক্ষতিকর
বেশ কয়েক দশক ধরে প্রচলিত বিশ্বাস যে, দ্রবীভূত ফ্যাটযুক্ত খাবার ক্ষতিকর। একে হৃদরোগের কারণ হিসেবেও অনেকে দাবি করেন। যদিও ২০১০ সালের এক বিস্তারিত গবেষণায় বিষয়টি ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ফলে মাংস, নারিকেল তেল, পনির, বাটার ইত্যাদি প্রাকৃতিক খাবারে দ্রবীভূত ফ্যাট স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
৩. অতিরিক্ত প্রোটিনে হাড় ও কিডনির ক্ষতি
মানবদেহে অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণকে ক্ষতিকর বলেই মনে করেন অনেকে। যদিও এর কোনো ভিত্তি পাওয়া যায়নি। অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ করা হলে হাড়ে প্রাথমিকভাবে কিছুটা বেশি ক্যালসিয়ামের উপস্থিতি দেখা যায়, যদিও দীর্ঘমেয়াদে তা একই থাকে। প্রোটিন হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় এবং তা হাড় মজবুত করে। অন্যদিকে কিডনির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ খাবারের মধ্যেও প্রোটিনের নাম পাওয়া যায় না।
৪. কম ফ্যাটযুক্ত খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো
খাবার থেকে ফ্যাট সম্পূর্ণ বাদ দিলে তা অনেকটা কাগজের মতোই বিস্বাদ হয়। আর খাবার প্রস্তুতকারকরা এটা জানে। তাই ফ্যাট বাদ দিয়ে যেসব খাবার প্রস্তুত করা হয় সেগুলোতে বেশি করে কৃত্রিম চিনিসহ নানা ক্ষতিকর উপাদান সংযোজন করে তারা। ফলে বাস্তবে কম ফ্যাটযুক্ত খাবারগুলো স্বাস্থ্যের জন্য বেশি ক্ষতিকর হয়।
৫. দিনে কয়েকবার ভাগ করে খাওয়া উচিত
বিপাক ক্রিয়া উন্নত করার জন্য দিনে অনেকবার করে অল্প পরিমাণে নাস্তা খাওয়া উচিত বলে অনেকেই মনে করেন। বাস্তবে কয়বারে খাওয়া হয়েছে তার চেয়ে মোট খাবারের পরিমাণ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, দিনের তিনটা বড় খাবার যদি ছয় ভাগে বিভক্ত করে খাওয়া হয় তাহলে তা অপর্যাপ্ত খাবার গ্রহণের অনুভূতি দেয়।
৬. কার্বোহাইড্রেট প্রধান খাবার হওয়া উচিত
প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, কার্বোহাইড্রেট থেকে আমাদের প্রধান ক্যালরি গ্রহণ করা উচিত এবং এর পরিমাণ হতে পারে ৫০ থেকে ৬০ ভাগ। এ ধরনের খাবারে থাকে দানাদার খাবার, চিনি ও মাংস বা ডিম। এ ধরনের খাবার কম ওজনের মানুষের জন্য উপযুক্ত হলেও যাদের ওজন বেশি বা ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
৭. ওমেগা-৬ সিড ও ভেষজ তেল স্বাস্থ্যকর
এটা সত্য যে, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। কিন্তু এ ধরনের সবকিছুই যে স্বাস্থ্যের জন্য ভালো তা নয়। যেমন ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি কমায়। তবে তার মানে এই নয় যে, এগুলো ইচ্ছেমতো খাওয়া যাবে। এসবের মাত্রা বেশি হলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
ওমেগা-৬-এর বড় উৎস হলো সয়াবিন, কর্ন ও সূর্যমুখির মতো ভেষজ তেল। এগুলো অনেকাংশে হৃদরোগের জন্যও দায়ী।
৮. কম কার্বহাইড্রেটযুক্ত খাবার বিপজ্জনক
কম কার্বহাইড্রেটযুক্ত খাবারকে অনেকেই বিপজ্জনক বলে মনে করেন, যদিও এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই। কম কার্বহাইড্রেটযুক্ত খাবার বাস্তবে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি এবং এতে বেশকিছু রোগের ঝুঁকিও কমানো সম্ভব।
৯. চিনি ক্ষতিকর, কৃত্রিম চিনি ভালো
অনেকেরই ধারণা রয়েছে চিনি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কারণ এতে মাত্রাতিরিক্ত খালি ক্যালরি রয়েছে। এটি সত্য যে, চিনি দেহের ওজন বাড়ায়। কিন্তু তার মানে এটা নয় যে, চিনির তুলনায় কৃত্রিম চিনি ভালো। বাস্তবে কৃত্রিম চিনি বেশি ক্ষতিকর।
১০. চর্বি খেলে দেহের চর্বি বাড়ে
বেশি করে চর্বি খেলে দেহে চর্বির পরিমাণ বাড়বে, অনেকেই এমনটা বিশ্বাস করেন। যদিও বাস্তবতা অতোটা সহজ নয়। এটা সত্য যে, ফ্যাটে কার্বহাইড্রেট ও প্রোটিনের তুলনায় বেশি ক্যালরি রয়েছে। কিন্তু তার পরেও বেশি ফ্যাট গ্রহণ করলে দেহের চর্বি সে অনুপাতে বাড়বে না। ওজন কমানোর জন্য উচ্চমাত্রায় ফ্যাট ও কম কার্বহাইড্রেটযুক্ত খাবারও কার্যকর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *