রাতুল মন্ডল শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি:
গাজীপুরের শ্রীপুরে তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কারন দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।বুধবার নোটিশটি দেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাযায়,শিক্ষার্থীদের টাকা দিয়ে ও অনেককে ইচ্ছার বিরুদ্ধে মানববন্ধনে আসতে বাধ্য করার অভিযোগের প্রেক্ষিতে বুধবার কারন দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। চিটিতে আগামী ৩দিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার দুপুরের পর শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী মনসুর মানিক ও সহকারী শিক্ষক মনিরুজ্জামান এই মানববন্ধনের আয়োজন করেছিলেন। ওইদিন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা না করেই মানবন্ধনের আয়োজন করা হয় করা হয় বলে বিভিন্ন পর্যায় থেকে অভিযোগ উঠেছে।
উল্লেখ্য গত ৭ই ফেব্রুয়ারি (বুধবার) বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে বিদ্যালয়ের বাইরে কয়েকজন ছাত্র মারামারিতে লিপ্ত হয়। এঘটনার জের ধরে, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল মনসুর মানিক দশম শ্রেণীর এ শিক্ষার্থীকে অফিস কক্ষে নিয়ে চারঘন্টা আটকিয়ে মারধর করেন। এ ঘটনায় ছাত্রী ঘটনার বিচার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর গত ১১ ফেব্রুয়ারী লিখিত অভিযোগ করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।
অফিস কক্ষে চার ঘন্টা আটকে রেখে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের নামে শ্রীপুর থানায় মামলা করেছে নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীর বাবা। গত সোমবার রাতে মামলা হওয়ার পর উভয় শিক্ষক গা ঢাকা দিয়েছে।
এদিকে প্রধান শিক্ষক নিজেকে বাঁচাতে ১৩ ফ্রেব্রয়ারী দু দফা চেষ্টার পর মঙ্গলবার দুপুরে শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে। প্রায় ২০ কিলোমিটার দুর হতে পরিবহনযোগে কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীদের দিয়ে মানববন্ধন করানোর কারনে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
যদিও বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর সপ্তম শ্রেণীর মীম আক্তার জানান, মানববন্ধনের জন্য শিক্ষকরা আমাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে গাড়ী ভাড়া বাবদ ২শ টাকা করে নিয়েছেন।
মানববন্ধনে অংশ নেয়া ৬ষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাইম হাসান জানান, সকালে পাঠনিতে আমরা বিদ্যালয়ে আসি। এসময় শিক্ষকরা জানিয়েছেন শ্রীপুরে যেতে হবে পরে আমাদের বিভিন্ন স্লোগান শিখিয়ে দেন। তবে কি কারণে শ্রীপুর এসেছ সাংবাদিকদের এমন জবাবে এর কোন উত্তর ছিল না তার কাছে।
৬ষ্ঠ শ্রেণীর অপর শিক্ষার্থী শহীদউল্লাহ জানান,আমরা শুনেছি প্রধান শিক্ষকের নামে মামলা হয়েছে এজন্য অন্যান্য শিক্ষকরা আমাদের জানিয়েছেন শ্রীপুরে গেলে মামলা থেকে স্যারের নাম বাদ দিবেন তাই আমরা শ্রীপুরে এসেছি।
অভিভাবকদের না জানিয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রীপুরে নিয়ে আসার বিষয়ে বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল্লাহ হক জানান,প্রধান শিক্ষকের নামে মামলা হওয়ায় শিক্ষার্থীদেরও একটা ভূমিকা থাকে। এটা তারই অংশ।
দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী নাহিদ জানান, গতকাল মানববন্ধন করার কথা বলে আমাদের সন্ধ্যা পর্যন্ত বিদ্যালয়ে আটকিয়ে রাখা হয়েছিল। আজ সকাল দশটায় বিদ্যালয়ে আসলে জানানো হয় আজ মানববন্ধন হবে। পরে বিদ্যালয় মাঠে পাঁচটি বাসযোগে আমরা শ্রীপুর আসি।
বিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর অভিভাবক লিটন মিয়া জানান, অভিভাবকদের না জানিয়ে শিক্ষার্থীদের শ্রীপুর নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় আমরা সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্ধিগ্ন ছিলাম। পরে বিকেলের দিকে তারা বাড়িতে ফেরে। দুর থেকে মানববন্ধনে অংশ নিয়ে অনেক শিক্ষার্থী ক্লান্ত হয়ে যান
এবিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম জানান, শিক্ষার্থীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে মানববন্ধনে বাধ্য করা বিধি বহিভর্’ত কাজ।এ ছাড়া মানববন্ধনে আসতে উৎসাহ দেওয়ার বিষটিও বৈধ হয়নি।এ বিষয়ে শিক্ষককে কারন দর্শানোর চিটি দেওয়া হয়েছে।
মামলার বিষয়ে শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক(এসআই) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দুই শিক্ষকের নামে মামলা রজু হওয়ার পর তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হয়েছে। গা ঢাকা দেওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না।