বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে হঠাৎ রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে গত মঙ্গলবার বিকেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষের পরই শুরু হয়েছে ধরপাকড়। ওই দিন সন্ধ্যার পর থেকেই দলের নেতাকর্মীদের বাসায়-বাসায় তল্লাশি চালায় আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী। এ ঘটনায় দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেককে নিজের বাসাবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র কাটাতে হচ্ছে। তবে বিএনপি নেতাদের অভিযোগ- দলের সক্রিয় নেতাদের টার্গেট করে নতুন মামলা দেয়া হচ্ছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের। তাদের পুরনো মামলায় অজ্ঞাত আসামির স্থানে নাম ঢুকিয়ে গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে।
যদিও এই গ্রেফতারকে আলাদা করে দেখতে চাইছেন না বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, খালেদা জিয়ার রায় ঘিরে সরকার মারমুখী অবস্থানে যেতে পারে এটা সরকারি দলের লোকজন এবং অনেক মন্ত্রীর বক্তব্যে আঁচ করা গিয়েছিল। এত কিছুর পরও গতকাল বুধবার খালেদা জিয়ার আদালতে যাওয়া-আসার সময় হাইকোর্ট এবং প্রেস কাব এলাকায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি উৎসাহপ্রদ। সরকারের এ ধরনের বেপরোয়া আচরণ বিএনপি গণতান্ত্রিকভাবেই মোকাবেলা করবে বলে একাধিক নেতা জানান।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আদালতে হাজিরাকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট মোড়ে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ এবং দুই নেতাকে প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়। এ ঘটনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং সহসাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতসহ ৭০ জনের বেশি নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের প্রায় অর্ধশত নেতার বাসায় রাতভর তল্লাশি চালানো হয়।
বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, সরকার ৮ ফেব্রুয়ারি ঘিরে বেপরোয়া আচরণ শুরু করেছে। তারা শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতিকে উসকানি দিয়ে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। তবে এসব করে সরকার খুব বেশি ফায়দা করতে পারবে না। বর্তমান পরিস্থিতি বিএনপির অনুকূলেই যাচ্ছে। ধরপাকড়ের মাধ্যমে রায় পে নিয়ে সরকার একতরফা নির্বাচন করতে চাইলে বিএনপির দাবিই সত্য বলে প্রতীয়মান হবে।
জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরনয়া দিগন্তকে গতকাল বুধবার বলেন, বর্তমানে একটি ফ্যাসিস্ট সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। যারা ১০ বছর ধরে জনগণের ওপর তাদের দমননীতি প্রয়োগ করছে। কিন্তু জনগণ আমাদের সাথে আছেন। আমরা জনগণকে সাথে নিয়েই গণতান্ত্রিকভাবে এসব প্রতিরোধ করব।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, এই সরকার তাদের পুরনো সর্বনাশানীতি গ্রহণ করেছে। আমরা তাদের এ ধরনের বেপরোয়া আচরণ এবং আক্রমণে ভীত নই। কেননা এই ফ্যাসিস্ট সরকার দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে সহ্য করতে পারছে না। নেতাকর্মীদের বাসা-বাড়িতে গিয়ে তল্লাশির নামে হয়রানি করছে। এত কিছুর পরও নেতাকর্মীরা বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরের সাথে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হেঁটেই চলেছেন। দেশনেত্রীর জনপ্রিয়তায় ঘাটতি নেই। আমরা জানি আমাদের ওপর আরো নিপীড়ন নির্যাতন হবে। আমরা আতঙ্কিত নই। কিন্তু আমরা আমাদের জীবন থাকতে শেষপর্যন্ত প্রতিরোধ করে যাবো। হয় গণতন্ত্রের বিজয় হবে নয়তো তারা থাকবে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে গতকাল পর্যন্ত বিএনপির প্রায় পৌনে দুই শ’ নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক ও গ্রেফতার করেছে বলে তিনি জানান।
এ দিকে বেগম জিয়ার রায়কে ঘিরে বিএনপির তৃণমূলেও কঠোর বার্তা দিয়েছে বিএনপি। রায়ের দিন ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। ঢাকার পার্শবর্তী জেলাগুলোর নেতাকর্মীদের ঢাকায় আসার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তৃণমূলের একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন তারা প্রস্তুত রয়েছেন। কেন্দ্র থেকে যে নির্দেশনা দেয়া হবে তা পালন করা হবে। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান জানান, এই সরকার রাষ্ট্রীয় খরচে এক দিকে নৌকায় ভোট চাচ্ছে, অন্য দিকে আমাদের জেল-জুলুমের মুখে ঠেলে দিতে চাইছে। তারা চায় বিএনপি যাতে ভোটে না আসে। কিন্তু আমরা এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
প্রসঙ্গত, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের জন্য আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি ধার্য করেছেন আদালত। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের সময়ে দায়ের করা এ মামলায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ছাড়াও বাকি আসামিরা হলেন- মাগুরার সাবেক এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমান।