রেলের ৮৬৫ খালাসি নিয়োগপ্রক্রিয়া ঢাকায় রেলমন্ত্রীর বাসায় চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে শ্রমিক–কর্মচারী সংগ্রাম পরিষদ। সংবাদ সম্মেলনে ওই নিয়োগ নিয়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগও তোলা হয়েছে।
আজ রোববার বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ তোলে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়কারী মোখলেছুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন রেলওয়ে রানিং স্টাফ শ্রমিক-কর্মচারী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, পরিষদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবদুস ছবুর, কাজী আনোয়ারুল হক, মো. ফারুক আলম ও রফিক চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে মোখলেছুর রহমান অভিযোগ করেন, বতর্মানে ৮৬৫ জন খালাসি নিয়োগপ্রক্রিয়া রেলমন্ত্রীর ঢাকার বাড়িতে চূড়ান্ত করা হচ্ছে। নিরাপদ ট্রেন চলাচল মনিটরিং (তদারক) উপেক্ষা করে কোটি কোটি টাকার নিয়োগ–বাণিজ্যের জন্য রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) এবং নিয়োগ কমিটির অন্য সদস্যদের দিনরাত মন্ত্রীর বাসায় ব্যস্ত রাখা হয়েছে। অথচ এই নিয়োগ কার্যক্রম চট্টগ্রামে হওয়ার কথা।
সংবাদ সম্মেলনে ওঠা এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক মুঠোফোনে বলেন, যাঁরা নিয়োগের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তাঁরা জামায়াত-শিবিরের লোক। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রেলপথ মন্ত্রণালয় সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের লোকজন ঈর্ষান্বিত হয়ে মিথ্যা অভিযোগ করছে। আর যিনি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রেখেছেন, তিনি রেলের চাকরিতে আর নেই।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘রেলওয়ের নীতিমালার আলোকে খালাসিসহ সব নিয়োগ হচ্ছে। এঁরা (সংবাদ সম্মেলন আহ্বানকারী) নিজেদের কিছু লোক নিয়োগের জন্য তদবির করেছিলেন। তাঁদের তদবির শোনা হয়নি বলে এখন অভিযোগ করছেন। কিন্তু শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে এই নিয়োগপ্রক্রিয়া চলছে। রেলে জনবলের সংকট রয়েছে। আমরা দ্রুত খালাসি নিয়োগ দিয়ে রেল খাতকে আরও গতিশীল করতে চাই।’
মন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘রেলের চাকরি থেকে ২০১০ সালে আমি অবসরে যাই। শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের অধিকারের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন করছি। ছোটবেলা থেকে আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক। এখন লুটপাট ও নিয়োগ–বাণিজ্যের কথা বলছি বলে মন্ত্রী মহোদয় আমাকে জামায়াত বানিয়ে দিলেন। আমি দীর্ঘদিন রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি ছিলাম। আমার নেত্রী শেখ হাসিনা যে উদ্দেশ্যে রেল খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন, তা তছরুপ হচ্ছে বলে জাতির সামনে খণ্ডিত চিত্র তুলে ধরেছি।’
খালাসি রেলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদ। রেলের ইঞ্জিন ও কোচ পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্ব খালাসির। মোখলেছুর রহমান জানান, ২০১৫ সালে এই পদে ৮৬৫ জন নিয়োগে বাছাই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। মামলার কারণে প্রায় দুই-আড়াই বছর পরও নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করা যায়নি। এ বিষয়ে মামলার বাধা আপাতত দূর হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, এরপরও মন্ত্রী নিয়োগপ্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার ব্যবস্থা না নিয়ে নিয়োগ–বাণিজ্য করতে সময়ক্ষেপণ করছেন। মন্ত্রীর আশপাশের লোকজনের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি সিন্ডিকেট পুরো নিয়োগ–প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করছে। সব নিয়োগ এই সিন্ডিকেটের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এখন নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। রেলের ট্রেড অ্যাপ্রেনটিস পদে লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কারণে দীর্ঘসূত্রতা অবলম্বন করা হয়। বিতর্কিত সেই পরীক্ষা এক বছর পর বাতিল করা হলেও প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার টাইপিস্ট এবং ম্যাটেরিয়াল চেকার পদের প্রশ্নপত্র ফাঁস হতো না।