আশির দশকে উপমহাদেশের আকাশে যে তারা জ্বলজ্বল করে জ্বলে উঠেছিল তার আলো এখনো একটুও কমেনি, বরঞ্চ এই সময়টাতে যেন একটু বেশিই আলো ছড়াচ্ছে। সালমানের ক্যারিয়ারকে একবাক্যে এভাবে প্রকাশ করা যায়।
কেননা তিনি সালমান। বলিউড সাম্রাজ্যের শীর্ষ আসনে অনেকের সাথে অংশীদারত্ব করলেও কখনো বিচ্যুত হননি। ৫২ বছরেও অবিবাহিত এই ব্যাচেলর বলিউড নক্ষত্র। সালমান শুধু অভিনেতা নন- তিনি স্টাইল আইকন। পর্দায় তার স্টাইল সব সময় তরুণ প্রজন্ম গ্রহণ করত। প্রভাবিত করত তরুণদের।
১৯৬৫ সালের ২৭ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে জন্মগ্রহণ করেন সালমান খান। সালমানের পুরো নাম আবদুল রশিদ সেলিম সালমান খান। তার জন্মের সময় বড়সড় এ নাম রেখেছিলেন তার বাবা সেলিম খান ও মা সুশীলা চরক।
এবার ৫২ বছরে পা দিয়েছেন সুপারস্টার।
ভাগ্যশ্রীর সাথে ‘ম্যায়নে পেয়ার কিয়া’তে সালমানের রসায়ন এখনো মিস করে উপমহাদেশের দর্শকরা
ক্যারিয়ারের ২৯ বছরের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন বলিউডে। এই সময় প্রায় শতেকের বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন সালমান। এর মধ্যে বেশির ভাগই ব্যবসাসফল ও জনপ্রিয়। ছোট পর্দার ‘বিগ বস’ অনুষ্ঠানও সালমানকে এনে দিয়েছে তুমুল জনপ্রিয়তা। তবে জনপ্রিয়তা ছাপিয়ে অনেকবার সমালোচনার শিকার হয়েছেন তিনি। সালমান পরোপকারী হলেও এক ব্যক্তিকে গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা করার অভিযোগে তিনি মামলার মুখোমুখি হওয়ায় অনেকখানি সমালোচনার কালি তাকে গায়ে মাখতে হয়েছে।
তিনি বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন বিবি হো তো অ্যায়সি চলচ্চিত্রে একটি গৌণ ভূমিকায় অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে ১৯৮৮-তে। তাঁর অভিনীত প্রথম ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র ‘ম্যায়নে পিয়ার কিয়া’ ১৯৮৯ সালে মুক্তি পায়; এ জন্যে তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ নবাগতর পুরস্কার লাভ করেন। এরপর নব্বইয়ের দশকে তিনি বলিউডে বেশ কিছু ব্যবসাসফল হিন্দি চলচ্চিত্র উপহার দেন, যেমন সাজান (১৯৯১), হাম আপকে হ্যায় কৌন..! (১৯৯৪), করণ অর্জুন (১৯৯৫), জুড়ুয়া (১৯৯৭), পেয়ার কিয়া তো ডারনা কিয়া (১৯৯৮) বিবি না. ১৯৯৯।
২০০৩ সালে মুক্তি পাওয়া সালমানের ‘তেরে নাম’ ছবির স্টাইল ছিল উন্মাদনার নাম, উপমহাদেশের তরুণদের ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে ছবিটি
শূন্য দশকেও সালমানের জনপ্রিয়তা কমেনি। বরঞ্চ নতুন প্রজন্মের কাছে এক নতুন নায়ক হিসেবেই তিনি পরিচিতি পান। ২০০৩ সালে ‘তেরে নাম’ ছবিটি সুপার ডুপার হিট হয়। ২০০৫ সালে ম্যায়নে পেয়ার কিউ কিয়া, ২০০৭ সালে পার্টনার, ২০০৮ সালে ওয়ান্টেড, ২০০৯ সালে আজাব প্রেম কি গাজাব কাহানি, ২০১০ সালে দাবাং ও ২০১১ সালে বডিগার্ড তুমুল হিট হয়। ২০১২ সালে দাবাং টু, ২০১৫ সালে বজরঙ্গি ভাইজান, ২০১৬ সালে সুলতান এবং ২০১৭ সালে টিউবলাইট দারুণ ফ্লপ হলেও টাইগার জিন্দা হ্যায় দিয়ে সে হিসেব পুষিয়ে দিচ্ছেন সালমান।
সালমান এখনো বিয়ে করেননি। এ বিষয়ে বলিউডে নানারকম কথা প্রচলিত আছে। প্রিয় মানুষটিকে হারানোর ক্ষত এখনো সেরে ওঠেনি বলে মন্তব্য সমালোচকদের। পাকিস্তানি অভিনেত্রী সোমি আলির সাথে প্রেমের অবসানের পর পরই ১৯৯৯ সালে ‘হাম দিল দে চুকে সনম’-এর সেটে নির্মল ভালোবাসা গড়ে উঠেছিল সালমান-ঐশ্বরিয়া রাইয়ের মধ্যে। কিন্তু ঐশ্বরিয়ার সাথে সালমানের প্রেম পরিণতি পায়নি। হয়তো এটাই ছিল পরিণতির চূড়ান্ত মাইলস্টোন। যেটা ভেঙে গেছে, আর ঠিক হচ্ছে না।
২০১৭ সালের শেষভাগে বক্স অফিস নিয়ে রীতিমতো খেলছে সালমানের ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’
অনেকের মতে সালমান বিয়ে করতে চাচ্ছেন ক্যাটরিনাকে। মাঝখানে রোমানিয়ান মডেল লুলিয়া ভান্তুরের সাথে সালমানের পরিবারের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক দেখা গেলেও সেটা আদতে আর বিয়ের দিকে গড়াবে কি-না কেউ বলতে পারছেন না। কেননা দীর্ঘ সময়ের বিরতির পর ক্যাটরিনার সাথে রসায়নটা সালমানের ফের জমে উঠেছে। ৫২ বছরে সালমানের জীবনে কোনো পরিবর্তন আসে কি-না ভক্তদের সেই প্রত্যাশা।