সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে মাদক

Slider টপ নিউজ

81285_x7

 

 

 

 

 

সামনে ঈদ। বাজারে অন্যান্য সামগ্রীর মতো মাদকের ব্যবসাও জমজমাট। প্রতিদিন ভারত থেকে আসছে মাদকদ্রব্য। গাঁজা, ফেনসিডিল, হুইস্কি, বটকা, অফিসার্স চয়েসসহ হরেকরকম মাদক। মাদকের পাশাপাশি আসছে শাড়ি, প্যান্ট পিস, তৈরি পোশাক, মসলা ও চাপাতা। সক্রিয় সীমান্ত চোরাকারবারি ও মাদক ব্যবসায়ীরা। তবে অনেকটা নিষ্ক্রিয় সীমান্তরক্ষী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর যৌক্তিক কারণও রয়েছে। এতে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে মিলছে ঈদের বিশেষ সালামী। হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের বাল্লা ও মাধবপুরের ধর্মঘর সীমান্ত এলাকা ঘুরে পাওয়া যায় এসব তথ্য। গভীর বনাঞ্চল, পাহাড় ও চা-বাগান ঘেরা ঝুকিপূর্ণ বাল্লা সীমান্ত এলাকা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাল্লা সীমান্ত এলাকার কয়েকজন জানান, ঈদকে সামনে রেখে সীমান্ত এলাকায় ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে চোরাচালান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ম্যানেজ করেই আসছে আসছে এসব চোরাচালান। তারাও পাচ্ছে চোরাকারবারিদের অবৈধ মুনাফার একটি অংশ। সবচেয়ে বেশি আসছে মাদক। প্রতিদিন সীমান্তের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে আসছে হাজার হাজার বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল। আসছে অফিসার্স চয়েস, হুইস্কি, বটকাসহ ভারতের স্থানীয় মদের চালান। এসব মাদক পাচার হচ্ছে হবিগঞ্জের মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, সদর, আজমিরীগঞ্জ, বাহুবল, নবীগঞ্জ, লাখাই উপজেলাসহ ভাটি এলাকার বিভিন্ন গ্রামে। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল, বিয়ানীবাজার, কমলগঞ্জসহ অন্যান্য এলাকায়ও যাচ্ছে ভারত থেকে আনা এসব মাদকের চালান। প্রতিদিন বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদক ব্যবসায়ীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ম্যানেজ করে এখান থেকে নিয়ে যাচ্ছে মাদকদ্রব্য। সীমান্ত এলাকার অনেকেই এসব মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। প্রভাবশালী এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাননা স্থানীয় বাসিন্দারা। মাদক ছাড়াও ভারতীয় শাড়ি, প্যান্ট পিস, মসলা ও চাপাতার চালান আসে এ রোড দিয়ে।
বাল্লা সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান সবচেয়ে বেশি হয় চিমটিবিল সীমান্তে। সরজমিন চিমটিবিল সীমান্ত এলাকা ঘুরতে গিয়ে হঠা’ চোখে পড়ে কাটাতারের বেড়া ডিঙ্গিয়ে আসছে কয়েকজন যুবক। তাদের প্রত্যেকের পিছনে একটি বস্তা ঝুলানো। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা কাঁটা তার পেরিয়ে আসছেন বাংলাদেশে। কথা বলতে চাইলে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে তারা। এড়িয়ে স্থান ত্যাগ করতে চায়। কৌশলে অভয় দিলে মুখ খুলে যুবকরা। নাম না প্রকাশ ও ছবি না তোলার শর্তে তারা জানায়, প্রতিদিন সীমান্তের ওপার থেকে বস্তায় করে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য নিয়ে আসে। শেষ রাতে তারা বাংলাদেশের সীমান্ত পাড়ি দেয়। তাদের পরিচালনা করে এ এলাকার মাদক ব্যবসায়ী হাছান আলী ও লাল কাজল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব মাদক পৌঁছে দিলে তাদেরকে দেয়া হয় প্রতিদিন ১ হাজার টাকা। তারা জানায়, সীমান্তের কাঁটাতার ডিঙ্গিয়ে ও কালভার্টের নিচ দিয়ে তারা এসব মাদক নিয়ে আসে। সীমান্ত প্রহরীদের সঙ্গে থাকে মাদক ব্যবসায়ীদের গোপন আঁতাত। তাই যেসব এলাকায় মালামাল আনা হয় এসব এলাকায় তারা আসে না। প্রতিদিন ২৫/৩০ জন যুবক এ এলাকায় মাল নিয়ে আসে। স্থানীয়রা জানান, বাল্লা সীমান্ত এলাকায় মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ী। এদের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মাদক মামলাও রয়েছে। মাঝে মধ্যে গ্রেফতার হলেও আইনের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসে তারা। এসব ব্যবসার সাথে জড়িত আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও সরকারি দলের স্থানীয় কতিপয় নেতা। এ এলাকার মোকামঘাট এলাকার মাদক নিয়ন্ত্রণ করে মাদক সম্রাট কুদ্দুছ। বাল্লা এলাকার নিয়ন্ত্রণে মাদক ব্যবসায়ী শহাদ। চেগানগরে ইমরান ও দুধপাতিল এলাকার মাদক নিয়ন্ত্রণ করছে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী জাহিদ। বাল্লা সীমান্ত এলাকায় মাদক ব্যবসা এখন অপেন সিক্রেট। স্থানীয় জনগণ তাদের কাছে অনেকটা জিম্মি। দৌর্দণ্ড প্রতাপশালী এসব মাদক সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না স্থানীয়রা। মাধবপুরের ধর্মঘর সীমান্ত এলাকায় রয়েছে হরষপুর, ধর্মঘর, চৌমুহনী, মনতলা, তেলিয়াপাড়া বিওপি। এ সীমান্তে চোরাচালান বেশি হয় তেলিয়াপাড়া এলাকায়। সরজমিন তেলিয়াপাড়া এলাকায় গেলে চোখে পড়ে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এখানে ভারতীয় পণ্য আনায় জড়িত। বোরকা ও শাড়ির নিচে শরীরে শক্ত করে বেঁধে ভারতীয় শাড়ি, মসলা ও চাপাতা নিয়ে আসেন তারা। এছাড়া এ এলাকায় প্রতিদিন ভারত থেকে আসে গাঁজার চালান। এলাকার নারী-পুরুষ অনেকেই চোরাকারবারে জড়িত। এছাড়া মাদকসহ বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য আসে রাজেন্দ্রপুর ও হরিণখোলা এলাকা দিয়ে। এলাকার স্থানীয় মুদি দোকানের মালিক খসরু মিয়া জানান, ‘ইন্ডিয়ান মালামালতো এখানে সব সময় আসে। আমরা ছোট সময় থাইক্কা দেখতেছি চিনি, মসলা, শাড়িগুলা আইতো। এখন যেটা খারাপ, মদ গান্‌জাও আসে। প্রত্যেকদিন বস্তা ভইরা ওইগুলা আসে। বিডিআর কোনো কুস্তা করে না।’
৫৫ বিজিবি ব্যাটেলিয়ান সূত্র জানায়, হবিগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় বিজিবির বিওপি(বর্ডার আউট পোস্ট) রয়েছে ১১টি। এর মধ্যে চুনারুঘাটে ৬টি মাধবপুরে ৫টি বিওপি রয়েছে। জেলায় সীমান্ত এলাকা রয়েছে ৩০ কিলোমিটার। চুনারুঘাট সীমান্ত পাহারায় রয়েছে সাতছড়ি, চিমটিবিল, গুইবিল, বাল্লা, রেমা ও কালেঙ্গা বিওপি। ভারত সরকার ২০০৫ সালে সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণ সম্পন্ন করে। তবে পানি প্রবাহের ছড়াগুলোতে কোনো বেড়া দেয়া হয়নি। কোনো কোনো ছড়ায় কালভার্ট নির্মিত হয়েছে। ওই ছড়াগুলোই মূলত চোরাচালানের করিডর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
৫৫ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লেফট্যানেন্ট কর্ণেল আসাদুজ্জামান চৌধুরী মানব জমিনকে জানান, হবিগঞ্জে ৩০ কিলোমিটার বিশাল সীমান্ত এলাকা। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি চোরাচালান রোধ করতে। ঈদে চোরাচালান বৃদ্ধি পেতে পারে এই আশঙ্কায় আমারা টহল ও অভিযান জোরদার করেছি। গত ১৫ দিনে আমরা বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ২শ’ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল, ২৪৮ কেজি গাঁজা, ১৭৪০ কেজি চাপাতা, ৮শ’ বোতল ভারতীয় অফিসার্স চয়েস মদ ও ৪শ’ মিটার প্যান্ট পিস আটক করেছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদক চোরাচালান রোধে আমরা বিশেষভাবে সতর্ক রয়েছি। মনতলা বিওপি কোম্পানি কমান্ডার সুবাদার আব্দুছ সবুজ জানান, আমরা সবসময় চেষ্টা করছি চোরাচালান রোধ করার। ঈদ সামনে রেখে আমাদের সদস্যরা আরো সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *