কাতার নিয়ে কী হচ্ছে?

Slider সারাবিশ্ব

c21fbf2ab152930169a62264dc631bca-595cf6d98dd60

 

 

 

 

উপসাগরীয় অঞ্চলে শুরু হওয়া সাম্প্রতিকতম উত্তেজনার শুরু গণমাধ্যমের অব্যাহত আক্রমণাত্মক খবরের মধ্য দিয়ে। এসব খবরে কাতারকে পারস্য উপসাগরের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এক হুমকি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। উপসাগরীয় সহযোগিতা সংস্থার (জিসিসি) দেশগুলোর নতুন বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে গত ২৩ মে এক সামরিক গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির ‘বিস্ফোরক’ কিছু মন্তব্য ঘিরে।

গত ২৪ মে কাতার নিউজ এজেন্সির (কিউএনএ) ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খবরে কাতারের আমিরকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে তাঁর দেশের সম্পর্ক উত্তেজনার। আরও বলা হয়, হামাস ফিলিস্তিনি জনগণের বৈধ প্রতিনিধি এবং ইরান আরব অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য এক বড় শক্তি। এদিনই কাতার টিভিও তার সন্ধ্যাকালীন খবরে এ বক্তব্যকে আমিরের মন্তব্য বলে চালিয়ে দেয়। বিলম্ব হলেও একই দিন আরও পরের দিকে কাতারের সরকারি যোগাযোগ দপ্তর দাবি করে, কিউএনএর ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে। তাতে আমিরের নামে ভুয়া বিবৃতি প্রচার করা হয়েছে।

দোহাকে খাটো করার প্রচারণা
এ খবর বানানো বা ভুয়া কি না, তা যাচাই করার আগেই কাতারের আমিরের কথিত ওই মন্তব্য নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে আঞ্চলিক গণমাধ্যমগুলোতে উত্তেজনা ছড়ানো হয়। যদিও সামরিক গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন এমন লোকজন জোর দিয়ে বলেছেন, আমির এ রকম কোনো মন্তব্য করেননি। যেসব গণমাধ্যমে উত্তেজনা ছড়ানো হয়, সেগুলোর বেশির ভাগ সৌদি আরব ও আরব আমিরাতভিত্তিক।
কাতারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলার পর এ উভয় দেশই আল জাজিরা টেলিভিশন চ্যানেল ও কাতারভিত্তিক অন্যান্য সংবাদমাধ্যমের সম্প্রচার নিজ নিজ দেশে বন্ধ করে দিয়েছে। তখন থেকে সপ্তাহের প্রতিদিন কাতার নিয়ে নতুন নিবন্ধ ছাপাচ্ছে দুই দেশের পত্রপত্রিকা। ব্যতিক্রম ছাড়া প্রতিটি নিবন্ধে আমিরের মন্তব্য বলে চালানো বক্তব্য তাঁর নিজের বলে তুলে ধরা হচ্ছে। একে ভিত্তি করে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতায় ইরান ও সন্ত্রাসবাদের হুমকির সঙ্গে কাতারের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলা হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, কাতারকে জিসিসি বা ইরানের যেকোনো একটিকে বেছে নিতে হবে।
কাতারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ও গণমাধ্যমের আক্রমণাত্মক নিবন্ধ এ ইঙ্গিত দেয়, আঞ্চলিকভাবে দোহাকে খাটো করার পাশাপাশি ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে তাকে হেয় করতে পরিকল্পিত প্রচারণা চলানো হচ্ছে। ছয় সদস্যের জিসিসির অন্যতম সৌদি আরব, ইউএই ও বাহরাইন—এই তিন প্রতিবেশীর সঙ্গে নয় মাস ধরে কাতারের সম্পর্কে অচলাবস্থা চলার তিন বছর পর দেশটিকে নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা শুরু হলো।

ডোনাল্ড ট্রাম্প ফ্যাক্টর
পারস্য উপসাগরের ভূরাজনৈতিক চিত্রপটে দৃশ্যত সাদৃশ্যপূর্ণ বেশ কিছু উপাদান উঠে এসেছে। এর একটি ট্রাম্প ফ্যাক্টর। ট্রাম্প প্রশাসন আভাস দিয়েছে, দোহার চেয়ে রিয়াদ ও আবুধাবির বেশি ঘনিষ্ঠ আঞ্চলিক নীতি তারা সমর্থন করার আগ্রহী।
আবুধাবির যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ ও সৌদি উপযুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান রিয়াদে আরব ও অন্য মুসলিম বিশ্বের নেতাদের সম্মেলন সামনে রেখে ওয়াশিংটন সফর করেন। উপরন্তু, ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতরে অনেকের পররাষ্ট্রনীতি-সংক্রান্ত অনভিজ্ঞতা ইরান ও জঙ্গিবাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের ভাবনাকে এক নতুন রূপ দিতে সৌদি আরব ও আমিরাতকে সুযোগ এনে দিয়েছে। এ নিয়ে রিয়াদ সম্মেলনে ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন চিন্তাভাবনার বিষয় স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পূর্বসূরি বারাক ওবামা প্রশাসন যেখানে পুরো জিসিসি জোটের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ বৃদ্ধির চেষ্টা করেছে, সেখানে বর্তমান ট্রাম্প প্রশাসন তার উপসাগরীয় নীতিতে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতকে দুটি স্তম্ভ হিসেবে বিবেচনা করে তাদের দিকে মনোযোগ নিবিষ্ট করেছে। এর ধারাবাহিকতাতেই ট্রাম্পের উপদেষ্টা ও জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে মোহাম্মদ বিন সালমান ও ওয়াশিংটনে নিযুক্ত আরব আমিরাতের প্রভাবশালী রাষ্ট্রদূত ইউসুফ আল-ওতাইবার মধ্যে সম্পর্ক পাকাপোক্ত হয়েছে।
ইতিমধ্যে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জিম ম্যাটিস ও সিআইএর পরিচালক মাইক পম্পিওর মতো ট্রাম্প প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তারা ইরান এবং মুসলিম ব্রাদারহুড নিয়ে এমন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন, যা কার্যত রিয়াদ ও আবুধাবির দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে পার্থক্যহীন।
আবার বাহরাইনে, সে দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নতুন যুগ শুরু করা বিষয়ে বাহরাইনি বাদশাহকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আশ্বস্ত করার মাত্র দুদিন পর সেখানে বিরোধীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর রক্তক্ষয়ী অভিযানে পাঁচজন নিহত হয়েছেন। ২০১১ সালের পর এটাই ছিল দেশটিতে সবচেয়ে জোরালো অভিযান।
কাতারের বিরুদ্ধে সৌদি ও আমিরাতের গণমাধ্যমের সমন্বিত প্রচারণা এমন সময় চালানো হচ্ছে, যখন ওয়াশিংটনেও গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মার্কিন বিশ্লেষকেরা আঞ্চলিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে অংশীদার হিসেবে কাতারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন।

ওয়াশিংটন পোস্ট অবলম্বনে আবু হুরাইরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *