আমার আয়সী এখন বাবা পাবে কই!

Slider টপ নিউজ

টঙ্গী : ভালো ছেলে দেখে মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলাম। আমার মেয়ের পছন্দ ছিল লম্বা ও শ্যামলা ছেলে। ভগবান মিলিয়ে দিয়েছিলেন। আমার মেয়ে স্বামী ও একমাত্র শিশু সন্তান আয়সী(৩)কে নিয়ে সুখে শান্তিতে ছিলো। ঘাতক বাস কেঁড়ে নিল আমার মেয়ের জামাইকে। এখন আমার একমাত্র নাতনী আয়সী বাবা পাবে কই! ভগবান একি পরীক্ষায় ফেলল আমায়।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে এসব কথা বলে বিলাপ করছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ডুয়েট শিক্ষক রামচন্দ্র সাহার(৪২) শাশুড়ি ঝর্ণা সরকার। সাথে অঝোর ধারায় কাঁদিছিলেন শশুর উত্তম সরকার ও চিৎকার করে বিলাপ করছিলেন শ্যালক স্বরণ সরকার। চোখের জলে ভিজে একাকার অবয়বে বাকরুদ্ধ ছিলেন স্ত্রী বৃষ্টি সাহা।

রামচন্দ্রের শশুর উত্তম সরকার বলেন, রামচন্দ্রের বাবা ও মা নেই। তার ছোট সংসার সহ দুই ভাই ও এক প্রতিবন্ধী বোনের সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন রামচন্দ্র সাহা।

নিহতের শ্যালক স্বরণ সরকার চিৎকার করে বলছিলেন, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছয়টায় বাসার সামনে ডুয়েটের বাস যায়। আজ কেন গেলো না।

এসময় বাকরুদ্ধ নিহত শিক্ষক রামচন্দ্র সাহার স্ত্রী বৃষ্টি সাহা(২৫) কোন কথা বলতে পারেননি। চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় শুধু অশ্রু ঝরছিল। পুরো মুখমন্ডল জলে ভিজে গেছে সদ্য স্বামী হারা বৃষ্টির। নামের সাথে মিল থাকা বৃষ্টির জলে অবয়ব ভিজে বুক বেয়ে কাপড়ও ভিজে যাচ্ছিল। কয়েকজন তাকে ধরে স্বামীর লাশের কাছে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সংসারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যাক্তির অকাল মৃত্যুতে পুরো পরিবারের কান্নায় হাসপাতাল এলাকায় বাতাস ভারী হয়েছিল কাল।

আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১ টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীর চেরাগআলী এলাকায় ফ্লাইওভারের মোড়ে বাস-মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী ও চালকসহ দুই জন মারা যায়। তাদের মধ্যে একজন ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয় ডুয়েটের শিক্ষক ও অপরজন পাঠাও চালক।

নিহত ডুয়েটের শিক্ষক রাম চন্দ সাহা(৪২) ঢাকার মোহাম্মদপুরের ৪৩/সি রামচন্দ্রপুর চাঁনমিয়া হাউজিং এলাকার স্বপ্ন কুটির এ-৪ ইউনিটের বাসিন্দা। তিনি টাঙ্গাইল জেলার বাসাইল থানার কাঞ্চনপুর গ্রামের স্বর্গীয় রবীন্দ্রনাথ সাহার ছেলে।
তিনি গাজীপুরের শিমুলতলীতে অবস্থিত ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ডুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের একজন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

নিহত অপরজন হলেন পাঠাও চালক দিদার আদেল দিপু(৪০)। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার বড়বিনাইল চর গ্রামের মৃত আব্দুল বাতেন ভুঁইয়ার ছেলে। ঢাকায় থেকে তিনি পাঠাও চালক হিসেবে মোটরসাইকেলে যাত্রী পরবিহন করে সংসার চালাতেন।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চেরাগ আলী ফ্লাইওভারের মুখে গাজীপুরগামী মোটরসাইকেল( ঢাকা মেট্রো ল -৩৫-৩৪১৫) এর সাথে ঢাকাগামী প্রভাতী বনশ্রী পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসের( ঢাকা মেট্রো ব- ১১-৪২১২) মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় মোটরসাইকেল সহ চালক ও যাত্রী মহাসড়ক থেকে ছিটকে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলে পাঠাও চালক দিদার মারা যায়। আহত মোটরসাইকেল আরোহী ডুয়েট শিক্ষক রামচন্দ্র সাহাকে টঙ্গী আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে আনলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সিনিয়র ব্রাদার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রামচন্দ্র সাহা হাসপাতালে আনার পথে রাস্তায় মারা গেছেন।

টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, দুই জন মারা গেছেন। ঘাতক বাসটি আটক করা হয়েছে। চালক ও হেল্পার পালিয়ে গেছে। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *