সংবাদ পরিবেশন করায় বিশেষ অধিকার ক্ষুন্নের নোটিশ এমপির

Slider জাতীয়

50856_lead

 

ঢাকা; ছবি দিয়ে ও মিথ্যা তথ্য পরিবেশন করে সংবাদ প্রকাশ করায় বিশেষ অধিকার ক্ষুন্নের নোটিশ দিয়েছেন রাজশাহী-৪ আসনের এমপি এনামুল হক। পরে স্পিকার তা কন্ঠভোটে দিলে নোটিশটি গ্রহণ করা হয়। এরপর সেটা পাঠানো হয় বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে। বৃহস্পতিবার সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষে এ ঘটনা ঘটে।
সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, সংসদের গত ২০ বছরে এ ধরণের ঘটনার উদাহরণ নেই। উল্লেখ্য ওই কমিটির সভাপতি স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। মাগরিবের নামাজের বিরতি শেষে সংসদে কার্যপ্রণালী বিধির ১৬৪ ধারা অনুযায়ী বিশেষ অধিকার ক্ষুন্নে নোটিশটি অধিবেশনে তুলে ধরেন। এসময় তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সৈনিক হিসেবে ২০০৮ সাল থেকে এই সংসদে একজন সদস্য হিসেবে জনপ্রতিনিধিত্ব করছি। দেশ যখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই সময়ে যারা বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে জঙ্গীবাদী হিসেবে কলঙ্কিত করেছে, যারা দেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা জাতির জনককে হত্যা করে আবার পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিল- তাদের ষড়যন্ত্র থেমে নেই। তারা সবসময় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন থেকে দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন, দেশ যখন এগিয়ে যায়, তখনি ষড়যন্ত্র শুরু হয়। আমার বিরুদ্ধে হঠাৎ করে একটি পত্রিকায় কোন তথ্যবিহীন ছবি দিয়ে নিউজ করে আমার চরিত্র হনন করে। আমাদের যারা নির্বাচিত করেছেন তাদের সামনে আমাদের বিতর্কিত করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। গাইবান্ধায় নিহত সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটনের প্রসঙ্গে তুলে ধরে এনামুল হক বলেন, লিটন নিহত হওয়া নিয়ে তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা টেলিভিশনে বা কোথাও এখন আলোচনা করেন না। কিন্তু একটি ঘটনার পর কিভাবে আলোচনা ও লেখা হয়েছে মিডিয়াতে। এখন সংসদের এমপিদের নিয়ে তথ্যবিহীন অসত্য ছবি দিয়ে নিউজ করা হয়। স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘আপনি (স্পীকার) সংসদের অভিভাবক। আপনাকে অনুরোধ করবো যারা অসত্য সংবাদ পরিবেশন করে এমপিদের চরিত্র হননে নেমেছে তাদের ডাকেন। আমাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ তারা যদি প্রমাণ দিতে পারে তাহলে জনপ্রতিনিধিত্ব করব না। কিন্তু যদি প্রমাণ দিতে না পারে তাহলে আপনার কাছে আমরা প্রতিকার চাই। তাদেরকে সংসদে তলব করে তথ্য চান। তারা অনেক সংসদ সদস্য’র বিরুদ্ধেও মিথ্যা বানোয়াট খবর দিয়ে বিতর্কিত করেছে। তিনি বলেন, আমাকে নিয়েও একটি পত্রিকায় বিভ্রান্তিকর নিউজ দিয়ে বিতর্কিত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এতে আমার অধিকার ক্ষুণœ হয়েছে। এমন একটি পত্রিকা নিউজটি ছাপানো হয়েছে দুঃখজনক হলেও সত্য সেই পত্রিকার সম্পাদক হচ্ছেন ইকবাল সোবহান চৌধুরী। তিনি বলেন, ইতোমধ্যেই আমি আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি, লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি। কিন্তু এই হাউসের আপনি গার্ডিয়ান হিসেবে, আপনার কাছে আমি প্রতিকার চাই। আপনাকে বলব, এই রকমভাবে ভিত্তিহীন নিউজ যারা প্রকাশ করবে তাদেরকে পার্লামেন্টে ডেকে কৈফিয়ত তলব করা। তারা যদি প্রমাণ দিতে পারে তাহলে আমি বলতে চাই প্রধানমন্ত্রীর সৈনিক হিসেবে আমরা তাঁর সদস্য হিসেবে তাঁকে বিতর্কিত করবো না। আমরা পদত্যাগ করে চলে যাব। আর প্রমাণ দিতে না পারলে বিশেষ অধিকার কমিটিতে তাঁকে তলব করা হোক। সামনাসামনি করা হোক। প্রমাণ দিতে না পারলে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। পরে স্পিকার কার্যপ্রণালী বিধির ১৬৮ বিধি অনুযায়ী সংসদ সদস্য এনামুল হক আনীত অধিকার ক্ষুন্নের নোটিশটি ভোটে দিলে সরকার ও বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা ‘হ্যাঁ’ উচ্চারণ করে তাতে সম্মতি জানান। ভোটের পর এনামুল হকের আনীত অধিকার ক্ষুন্নের নোটিশটি সংসদের বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করেন। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে,নবম জাতীয় সংসদে অধিকার ক্ষুন্নের ৭১টি আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু কোন আবেদনই সংসদ অধিবেশনে তোলা হয়নি। এমনকি বিশেষ অধিকার কমিটিতেও পাঠানো হয়নি। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয জোট সরকারের আমলেও এ নিয়ে একাধিক আবেদন জমা দেন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিরা। সেগুলোরও একই পরিনতি হয়। সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, গত ২০ বছরে পাঁচ শতাধিক অভিযোগ জমা হলেও একটিও নিষ্পত্তি হয়নি। ফলে সংসদ সদস্যরা এ নিয়ে অভিযোগ করার আগ্রহ হারান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *