প্রতিদিন বাংলাদেশে আসছে ৩০০০ রোহিঙ্গা

Slider জাতীয়

48590_b4

 

ঢাকা; জাতিসংঘের একটি নতুন রিপোর্ট বলেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ২২ হাজার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। গতকাল মঙ্গলবার বৃটেনের গার্ডিয়ান এ খবর দিয়েছে। তার মানে ২০১৭ সালটি শুরু হয়েছে প্রতিদিন অন্তত ৩ হাজার রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আগমনের মধ্য দিয়ে। গার্ডিয়ানের রিপোর্টে বলা হয়, ‘অন্তত ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে গেছে এবং এর এক-তৃতীয়াংশ গেছে গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে। জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনটি এলো এমন এক সময়ে যখন রাইটস গ্রুপগুলো দাবি করছে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী যে মানবাধিকারের লঙ্ঘন করছে তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল। রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়েছে এমন একদিনে যেদিন মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক দূত ইয়াং হি লি সেনানিয়ন্ত্রিত রাখাইন রাজ্যে সরজমিন পরিদর্শন শুরু করেছেন। তিনি ১২ দিনব্যাপী এক সফরে মিয়ানমার সফরে আছেন।
জাতিসংঘের রিলিফ এজেন্সি তার সাপ্তাহিক রিপোর্টে আরো উল্লেখ করেছে যে, গত এক সপ্তাহে রাখাইন রাজ্য থেকে আরো ২২ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে রাজ্যের সীমান্ত অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশে অবস্থানরত জাতিসংঘের অফিস ফর দ্যা কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স বলেছে, ৫ই জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের কক্সবাজার অঞ্চল সন্নিহিত ক্যাম্পগুলোতে প্রায় ৬৫ হাজার রোহিঙ্গা অবস্থান নিয়েছে। প্রায় তিন মাস আগে সীমান্তের পুলিশ ফাঁড়িতে বিদ্রোহীদের সন্ধানে পরিচালিত ক্লিয়ারেন্স কর্মসূচির অধীনে রোহিঙ্গারা পালাতে শুরু করে।
গতকাল গার্ডিয়ানের খবরে উল্লেখ করা হয় যে, নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা তাদের ওপর পরিচালিত নির্যাতনের নির্মম বিবরণ দিয়েছেন। যেসব বৃত্তান্ত উদ্‌ঘাটিত হচ্ছে তা অং সান সূচির নতুন সরকারের ওপর কালো প্রভাব ফেলছে, যার বিরুদ্ধে প্রধানত মুসলিম মালয়েশিয়া সরব হয়েছে। মিয়ানমার সরকার বলেছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা বানানো এবং তারা অভিযোগের তদন্তে একটি বিশেষ কমিশন গঠন করেছে।
গত সপ্তাহে ঐ বিশেষ কমিশন একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন দাখিল করেছে। যাতে গণহত্যা ও ধর্মীয় নিপীড়নের অভিযোগ নাকচ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আনীত ধর্ষণের স্বপক্ষে অপ্রতুল সাক্ষ্যপ্রমাণ রয়েছে। মিয়ানমারের এ বিশেষ কমিশনের রিপোর্ট এসেছে একটি ভিডিওতে রোহিঙ্গাদের পুলিশের নির্যাতনের চিত্র প্রকাশিত হওয়ার পরে। সরকার অবশ্য বলেছে, ওই ভিডিওর ঘটনা বিচ্ছিন্ন এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গত সোমবার জাতিসংঘের বিশেষ দূত লি কাচিন রাজ্যে সফরের মধ্য দিয়ে তার নিজস্ব তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। ঐ রাজ্যে সেনাবাহিনী এবং জাতিগত বিদ্রোহীদের মধ্যে পরিচালিত যুদ্ধে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। মি. লি এর আগে একাধিকবার মিয়ানমার সফর করেছেন। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বর্মী নির্যাতনের বিষয়ে তার রূঢ় মন্তব্যের কারণে আগের সফরগুলোতে তিনি প্রতিবাদ ও বিক্ষোভের সম্মুখীন হয়েছিলেন। মি. লি আগামী ২০শে জানুয়ারি মিয়ানমার ত্যাগ করার আগে আরাকান সফর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের মুখপাত্র আই উইন বলেছেন, গত রোববার সন্ধ্যায় লি মিয়ানমারে পৌঁছেছেন।  সোমবারই তিনি ছুটে গেছেন কাচিনে। বর্মী প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জ্যো বলেছেন, বিরোধপূর্ণ অঞ্চলসমূহ সফরকালে মি. লি-কে নিরাপত্তা সুবিধা দেয়া হবে। মি. লি একই সঙ্গে জানিয়েছিলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি আলাপ-আলোচনার জন্য মিয়ানমার সরকারের একটি প্রতিনিধি দল ১১-১৩ই জানুয়ারি বাংলাদেশ সফর করবে।
মিয়ানমারে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক স্পেশাল রেপোর্টিয়ার মি. লি এক বিবৃতিতে বলেছেন, গত কয়েক মাসের ঘটনাবলীতে দেখা যাচ্ছে যে, মানবাধিকার পরিস্থিতি লঙ্ঘনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে সতর্ক থাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *