গ্রেট আমেরিকার জন্য হিলারিই কেন একমাত্র পছন্দ

Slider সারাবিশ্ব

 

ঢাকা; ‘সম্পাদকীয় লেখকদের কাজ হলো যুদ্ধ শেষ হবার পর পাহাড় থেকে নেমে এসে আহতদের ঘায়েল করা’- প্রয়াত খ্যাতিমান সাংবাদিক মারে কেম্পটন একবার এ কথা বলেছিলেন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে হিলারি ক্লিনটনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে যখন একের পর এক লেখা আসছে তখন আমি তার এই উক্তিটা নিয়ে ভাবছি। যাদের কাছ থেকে সমর্থন এসেছে এদের অনেকেই অতীতে কখনও কাউকে সমর্থন জানান নি। আবার অনেকে আছেন যারা কখনও কোন ডেমোক্রেটকে সমর্থন করেন নি। যাহোক, এটা ঠিক যে: ডনাল্ড ট্রাম্প সমর্থনঅযোগ্য। আমেরিকার ইতিহাসে প্রেসিডেন্সির জন্য এর থেকে প্রধান দলের কম যোগ্য কোন প্রার্থী কখনও আসেন নি।
আমি আসলে কখনই কোন প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানাই নি। এটা আমার কাজ নয়। সমর্থন জানানোর বিষয়টি আনুষ্ঠানিক। এটা মালিকানার বিশেষ অধিকার। কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই বছরে আমি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে চাই: ৮ই নভেম্বর আমি হিলারি ক্লিনটনকে ভোট দিচ্ছি।
আনন্দ সহকারে নয়, যদিও আমি তাকে দীর্ঘ দিন ধরে জানি। আমি জানি তিনি কঠোর পরিশ্রমি, বুদ্ধিমতী, নীতিবান এবং প্রকৃতস্থ। আনন্দ নিয়ে নয় একারণে যে আমি উপলব্ধি করছি ৩০ বছর ধরে উগ্রপন্থী আর গণমাধ্যমের হাতে ঘায়েল হয়ে তিনি এখন অত্যন্ত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তিনি হয়তো ওভাল অফিসে সাহসী ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি আত্মরক্ষামূলক।
ফের সামনে আসা তার ইমেইল কেলেঙ্কারি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ক্লিনটনরা বিচিত্র আর অদ্ভুত লোকবলে সমৃদ্ধ। একদল ভ্রমগ্রস্ত অধীনস্তদের হাস্যকর প্রদর্শনী, যাদের কারো কারো ওভাল অফিসের ধারে কাছেও আসতে দেয়া উচিত নয়। এছাড়াও তারা মনে করিয়ে দেয়Ñ নিজ সুবিধা আর প্রাপ্তির বিষয়াদি যা পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতিতে থাকে। ডেমোক্রেটদের দেখে মনে হয় জরাজীর্ন। তারা সরকারের প্রতি অসীম আস্থার প্রতিনিধিত্ব করে, যা আমাদের বর্তমান ব্যবস্থায় ক্ষয়ে যাওয়া অকার্যকারিতাগুলোকে স্বীকার করে না। তারা এক ধরনের পরিচয় ভিত্তিক রাজনীতি চর্চা করে। বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য বিশেষ আচরণÑ যা সহজেই বিকৃত করা যায়। সারা বছর ধরে এই দুর্বলতার সুযোগ নিচ্ছেন ট্রাম্প।
তাছাড়া, নিয়মতান্ত্রিকভাবে জাতিগত আক্রমণের ক্ষেত্রে ট্রাম্পের ধারণা আর ক্লিনটনের নিয়নমতান্ত্রিক পূর্বধারণার মধ্যে পার্থক্য কতটা দেখুনÑ ট্রাম্পের ভাষায় মেক্সিকানরা ধর্ষক, মুসলিমরা সন্ত্রাসী। আর ক্লিনটনের দৃষ্টিতে কৃষ্ণাঙ্গ, লাতিনো আর নারীরা সবাই ভুক্তভোগী। তারা সবাই একই ধারায়: ব্যক্তিগত বৈশিষ্টের চেয়ে দলগত পরিচয় অনেক বেশি সুনির্দিষ্ট। ট্রাম্পের ‘দ্য’ শব্দের ব্যবহার আকারে ইঙ্গিতে ঘৃণাবহ: ‘দ্য ব্ল্যাকস’, ‘দ্য হিসপ্যানিকস’, ‘দ্য মুসলিমস’, ‘দ্য ওমেন’ আর হ্যাঁ এমন কি ‘দ্য ভেটেরানস’। আমেরিকা যে বিস্তর সুযোগ সুবিধা দেয় তা অস্বীকার করে ট্রাম্পের গৎবাঁধা শ্রেণীকরণ। আমি নিশ্চিত নই তার নৈরাশ্যবাদ কতটা বাস্তব; তাকে নিয়ে যে হতাশা রয়েছে সেটা কতটা সত্যি তাও নিশ্চিত নই। তবে এটা এমনভাবে নোংরা আর অন্ধকারাচ্ছন্ন যেমনটা এই দেশের হওয়া উচিত নয়।
ট্রাম্পের একটি দিক নিঃসন্দেহে সত্যি। সেটা হলো তার অহমিকা। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বেপরোয়া হলে যেমনটা হবে তিনি তাই। এটা বিচিত্র এক আমেরিকান রোগ। ট্রাম্পকে আমি যখন একজন ব্যবসায়ী হিসেবে চিন্তা করি তখন আমার পিতার কথাও ভাবি। তিনিও একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি একজন কন্ট্রাক্টরের প্রতি কর্তৃত্ব করার পরিবর্তে পরিবারকে নিয়ে অবকাশে যাওয়ার সুযোগকেই বেছে নিতেন। ট্রাম্পকে যখন আমি একজন সেলিব্রিটি হিসেবে ভাবি, তখন মনে পড়ে আমার মেয়ের কথা। কয়েক বছর আগে সে আমাকে জার্সি শোরের একটি পর্ব দেখার জন্য জোরাজুরি করতো। এর কারণ হিসেবে সে বলতো ‘তুমি ভাবতেও পারবে না তারা কতটা জঘন্য।’ হ্যারি ট্রুম্যানের একই বিশ্বে বাস করেন না ট্রাম্প। তার স্থান হলো ‘স্নুকি’র (জার্সি শোর রিয়েলিটি শোর ব্যক্তিত্ব) জগতে। আর ট্রাম্পের সমর্থকরা এটা জানেন: ট্রাম্পের একনিষ্ঠতা আর গুরুত্ব অনুধাবনের চরম ঘাটতিতে তারা প্রতিহিংসার আনন্দ উপভোগ করেন। তারা জটিলতার প্রতিবাদ জানান। কেন আমরা তিন দিনে মসুল দখল করতে পারবো না? কেন আমরা ওই একই সময়ের মধ্যে নতুন কর্মসংস্থান পাবো না? ওয়ালমার্ট থেকে সস্তায় পণ্য পাবো না? কেন আমরা ইউরোপ থেকে অভিবাসী নিতে পারবো না?
আমাদের সমাজে যা কিছু ভুল হয়েছে, তারই সামগ্রিক রূপ হলো ট্রাম্প। সমাজের যা কিছু ভালো তার কোন কিছুই নয় এ লোকটি। তিনি হলেন অপরের ভবনে নিজের নাম লিখতে চাওয়া মানুষদের প্রতীক। আয়কর না দেয়ার প্রতীক। তিনি একটি দাতব্য সংস্থার প্রতীক, যেটা কিনা আত্ম-সংবর্ধনায় অর্থ ব্যয় করে। তিনি ওই সুন্দরী প্রতিযোগিতার প্রতীক যেখানে মেয়েদের ড্রেসিং রুমে অনায়াসে প্রবেশ করে নগ্ন কিশোরীদের দিকে কামাতুর দৃষ্টিতে তাকানো যায়। ভালো জীবনযাত্রা নিয়ে নিজের ব্যঙ্গরস দিয়ে তিনি আভিজাত্যের মানকেই অধ:পতিত করেছেন। তিনি পড়াশোনা করেন না। কথা শোনার ধৈর্য্য তার নেই। এর থেকেও ভয়ঙ্কর বিষয় হলো বাস্তবতা থেকে পাগলাটে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আর প্রোপাগান্ডা থেকে সত্য আলাদা করার সামর্থ্যও তার নেই। আমাদের নির্বাচনী ব্যবস্থায় রাশিয়ার হামলা মেনে নিয়েছেন তিনি- যা নজিরবিহীন আর সাংঘাতিক। তিনি স্থিতিশীলতাকে আমলে নেন না কেননা এর গুরুত্ব দেয়ার মতো জ্ঞান তার নেই। যারা হিলারির ব্যর্থতাকে ট্রাম্পের অপকর্মের সঙ্গে একই কাতারে বিবেচনা করেন তারা ভ্রমগ্রস্ত।
প্রথম থেকেই, মানুষ আমাকে বলেছেÑ বুঝলাম যে ট্রাম্প তার চুলের চেয়ে বেশি সৎ না। কিন্তু সে মানুষের সত্যিকারের অনুভুতিকে ধরে ফেলছে। এটা সত্যি। তিনি সহজ উত্তরের অবতার। অজানা নিয়ে শঙ্কিত ব্যক্তিদের নেতা তিনি। তিনি এই ধারণা পোষণ করেন যে বহিরাগতদের নাগরিকত্ব গড়পড়তা মানুষের মানতে কষ্ট হয়। কিংবা ছাড় দেওয়াটা একটু বেশিই জটিল। সমঝোতা করার যে শিল্প, তার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের অদ্ভুত অবস্থান। আর তিনি আমাদেরই। এমন একজন মানুষ শুধু এখানেই আবির্ভূত হতে পারেন। নির্বাচনের পর আমাদেরকে এর মোকাবিলা করতে হবে। সেটা জয় হোক বা পরাজয়।

[জো ক্লেইন প্রভাবশালী মার্কিন ম্যাগাজিন টাইমের রাজনৈতিক কলামিস্ট । ওপরের লেখাটি টাইম অনলাইনে প্রকাশিত তার লেখা ‘হোয়াই হিলারি ক্লিনটন ইজ দ্যা অনলি চয়েস টু কিম আমেরিকা গ্রেট’ শীর্ষক নিবন্ধের অনুবাদ।]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *