বাবাকে নিয়ে সোহেল তাজের স্মৃতিচারণা

Slider টপ নিউজ লাইফস্টাইল

f20862c37711c0a8c4e747c392666501-national-id

ঢাকা;  বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের স্মৃতিচারণা করে আবেগঘন স্ট্যাটাস দিয়েছেন ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তাঁর ফেসবুক পাতায় তিনি এই স্মৃতিচারণা করেন।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর তাজউদ্দীন আহমদসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। ওই সময় সোহেল তাজের বয়স ছিল মাত্র পাঁচ বছর।
সোহেল তাজ তাঁর ফেসবুক পাতায় লেখেন, আজ থেকে ঠিক ৪১ বছর আগে এই দিনে একটি পাঁচ বছর বয়েসের ছোট্ট ছেলে হারাল তার প্রিয় বাবাকে। যার হাত ধরে সে যেত বাড়ির পাশে আবাহনীর মাঠে। যার হাত ধরে ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডের রাস্তা দিয়ে হেঁটে হেঁটে খুঁজে পেয়েছিল তার প্রথম স্কুল। টেলিভিশনের পর্দায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত আর জাতীয় পতাকা পরিবেশিত হলে যিনি সব সময় মনে করিয়ে দিতেন দাঁড়িয়ে স্যালুট করে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে। যিনি কোমলভাবে বোঝানোর চেষ্টা করতেন মুক্তিযুদ্ধে লাখো মানুষের আত্মত্যাগের কথা। যিনি এই ছোট্ট ছেলেটিকে একটি আত্মবিশ্বাসী দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করার গুরুত্ব শেখানোর চেষ্টা করেছিলেন এবং অনুপ্রেরণা জোগানোর চেষ্টা করেছিলেন নানা কায়দায়।

বঙ্গতাজের ছেলে সোহেল তাজ আরও লেখেন, ‘এ ছেলেটির জীবনটা হঠাৎ করে পাল্টে গেল একদিন। ছেলেটি দেখতে পেল একটি লাশ, তার বাবার লাশ। লাশটি রাখা হলো একটি রুমে। আর সেই লাশ দেখতে এল হাজার হাজার মানুষ। সে-ও অবাক হয়ে দেখতে লাগল সবার সঙ্গে। পরে সে-ও গেল বনানী কবরস্থানে। সেখানে সবাই তাকে প্রথমে মাটি দিতে বলল—সে-ও দিল। তার কাছে মনে হচ্ছে, এটা যেন একটি স্বপ্ন এবং এই স্বপ্নের মধ্য দিয়ে সে ভেসে যাচ্ছে।’

সোহেল তাজ লেখেন, ‘আস্তে আস্তে সময় পার হতে লাগল। আর সেই স্বপ্নের আবরণ ধীরে ধীরে কেটে যেতে লাগল। তারপর থেকে তার মনে খালি প্রশ্ন আর প্রশ্ন। তার কেন বাবা নেই? অন্য সবার তো বাবা আছে। আরও সময় পার হলো। কিন্তু প্রশ্নগুলো আরও জটিল হতে লাগল। কেন মেরে ফেলা হলো তার প্রিয় বাবাকে? তিনি কি অন্যায় করেছিলেন? তাঁকে জেলে কেন রাখা হয়েছিল? আর জেলখানায় মেরে ফেলল কারা এবং কেন? এই প্রশ্নগুলো যখন তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, তখন সে তার মাকে বলতে শুনত, “আমি আমার স্বামী হারিয়েছি আর আমার সন্তানেরা তাদের বাবাকে হারিয়েছে, কিন্তু দেশ কী হারাল? আমাদের ক্ষতি থেকে দেশের আরও মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেল।”’ আবেগঘন সোহেল তাজ লেখেন, ‘তারপর ৪১ বছর পার হয়ে গেল। ছোটবেলার সেই দুঃখ, কষ্ট আর যন্ত্রণা নিয়েই বছরগুলো পার করল। সে বুঝতে পারল যে তার সত্তা, তার সেই হারানো বাবার মাঝেই লুকিয়ে আছে।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সোহেল তাজ লেখেন, ‘আজ ৩ নভেম্বর ২০১৬। আজ থেকে ৪১ বছর আগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানকারী জাতীয় চার নেতা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, অর্থমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) এম মনসুর আলী, খাদ্য ও ত্রাণমন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান। বাংলাদেশ তার সত্তা খুঁজে পাবে তখনই, যখন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুসহ সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন (অব.) এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানদের মতো সব নেতার আত্মত্যাগ, অবদান আমরা সঠিক এবং পৃথকভাবে মূল্যায়ন করতে পারব। তাঁদের আত্মত্যাগ ও আত্মদান খুলে দিক ইতিহাসের সেই জানালা, যার গভীরে ঢুকে এই জাতি খুঁজে পাবে তার সত্তা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *