হ্যাকিংয়ের ‘নোটিফিকেশন’ যায় মিসরে

Slider অর্থ ও বাণিজ্য
untitled-8_214529
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনার তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলেছে। মিসরের একটি কম্পিউটার শনাক্ত করা হয়েছে হ্যাকিংয়ের সময় যেটিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার থেকে একটি ‘নোটিফিকেশন’ গিয়েছিল। এটি ব্যবহার করতেন একজন নারী। বাংলাদেশের আবেদনের পর মিসর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে; জব্দ করেছে কম্পিউটারটিও। এদিকে অর্থ চুরির ইস্যুতে বাংলাদেশসহ ১১টি দেশকে নিয়ে ৩১ মে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় তিন দিনের সম্মেলন ডেকেছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল। বিশ্বব্যাপী আলোচিত ওই ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি ও বাংলাদেশকে কীভাবে সহায়তা করে টাকা ফেরত পাঠানো যায়_ এসব ব্যাপারে সেখানে আলোচনা হওয়ার কথা। সংশ্লিষ্ট একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র  এসব তথ্য জানিয়েছে। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন

মিসরের ওই কম্পিউটার শনাক্তের মধ্য দিয়ে হ্যাকারদের সম্পর্কে আগামীতে আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসবে। এর মধ্য দিয়ে অর্থ চুরির ঘটনার তদন্ত নতুন মোড়ও নিতে পারে। বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি ও পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের পৃথক তদন্তেও মিসরের ওই কম্পিউটারটির তথ্য উঠে এসেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ আলম  বলেন, হ্যাকিংয়ের ৩০ মিনিটের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার থেকে একটি নোটিফিকেশন মিসরের একটি কম্পিউটারে যায়। সিআইডি ও ইন্টারপোলের তদন্তে সেটি শনাক্ত হয়েছে। মিসর সন্দেহভাজন ওই নারীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও সংশ্লিষ্ট কম্পিউটারটি জব্দ করেছে। পরে এ ব্যাপারে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যেতে পারে।

দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ চুরির ঘটনায় বিশ্বের যেসব দেশে কোনো না কোনো আলামত রয়েছে বা সন্দেহভাজন আসামি রয়েছেন, তাদের নিয়ে ইন্টারপোল ম্যানিলায় সম্মেলনের আয়োজন করছে। এতে বাংলাদেশ, ফিলিপাইন ছাড়াও চীন, শ্রীলংকা, মিসর, সিঙ্গাপুর, হংকং, জাপানসহ ১১টি দেশ অংশ নেবে। সংশ্লিষ্ট দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের এরই মধ্যে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ইন্টারপোল। এতে যোগ দিতে আগামী ২৯ মে ঢাকা ত্যাগ করবেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ আলম ও পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (ইন্টারপোল) রফিকুল হাসান খান। প্রথমে ইন্টারপোল চেয়েছিল এই সম্মেলনটি ঢাকায় করতে। তবে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়, যেহেতু রিজার্ভ থেকে চুরির টাকা ম্যানিলায় গেছে, তাই সম্মেলনটি সেখানে হওয়া যুক্তিযুক্ত। অর্থ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে হওয়া তদন্তের অগ্রগতি তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া পুরো বিষয়টি নিয়ে একটি ব্রিফিং সেশন আয়োজন করবে বাংলাদেশ। জড়িতদের গ্রেফতার ও এরই মধ্যে যারা শনাক্ত হয়েছেন তাদের আইনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট দেশের সহায়তা চাইবে সিআইডি।

বাংলাদেশ মনে করছে, ইন্টারপোলের আয়োজনের এ ধরনের সম্মেলন তথ্য পাওয়ার একটি ‘প্ল্যাটফর্ম’ হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে অর্থ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইন, চীন, জাপান ও শ্রীলংকার সন্দেহভাজন ২০ ব্যক্তিকে এরই মধ্যে শনাক্ত করেছে মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি। তাদের পূর্ণাঙ্গ নাম ও ছবি সংবলিত তথ্য সংশ্লিষ্ট দেশকে সরবরাহ করে আইনের আওতায় আনতে সংশ্লিষ্ট দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলা হবে। বাংলাদেশ মনে করছে, টাকা কোথায় গেছে সেটার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অর্থ চুরিতে কার দায়দায়িত্ব রয়েছে? অর্থ চুরিতে এখন পর্যন্ত ফিলিপাইনের আরসিবিসি ব্যাংকের সবচেয়ে গাফিলতি ছিল বলে মনে করা হচ্ছে।

দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি দু’দফায় ইন্টারপোলের দুটি প্রতিনিধি দল দেশে আসে। গত ৪ থেকে ৬ মে পর্যন্ত জব্দ করা বেশ কিছু আলামতের ফরেনসিক পরীক্ষা করে ইন্টারপোল। এরপর এ ব্যাপারে তারা তাদের নিজস্ব অভিমত ব্যাখ্যা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জব্দ এসব আলামত ইন্টারপোলের আগে সিআইডি তাদের নিজস্ব যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পরীক্ষা করে। সিআইডি তদন্তের এ পর্যায়ে তিনটি দল গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে যাদের চরম গাফিলতি ছিল বলে শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের সিআইডি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করা হয়। আরও অনেক কর্মকর্তাকে ব্যাংকে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিআইডি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাক অফিস অব দ্য ডিলিং রুম ও ফরেক্স রিজার্ভ ট্রেজারি ম্যানেজমেন্টে যেসব কম্পিউটার ব্যবহৃত হয়েছিল তা লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এতে ওই কম্পিউটারের মাধ্যমে ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়াও অভ্যন্তরীণ চ্যানেলে যোগাযোগ রাখা হতো। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য লোকাল সার্ভারে ‘পাচার’ করার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এমনকি নিরাপত্তার ক্ষেত্রে ‘ফায়ার ওয়াল’ ও ‘ইউটিএম’ ব্যবহার করেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্কের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্ভার যুক্ত করা হয়।

সিআইডির জিজ্ঞাসাবাদে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারা দাবি করেন, ব্যাংকের সার্ভারের সঙ্গে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক যুক্ত হওয়ার ঝুঁকির বিষয়টি তাদের জানা ছিল না। তবে এই যুক্তি মানতে নারাজ তদন্ত কর্মকর্তারা। কারণ, সিআইডি বলছে, এ আশঙ্কার কথা জানতে আইটিতে পারদর্শী হওয়ার প্রয়োজন হয় না। এখন সিআইডি খতিয়ে দেখছে_ সন্দেহভাজন ব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে হ্যাকারদের কোনো যোগাযোগের সূত্র ছিল কি-না। এ ছাড়া ওই ঘটনায় বাংলাদেশের কোনো নাগরিক লাভবান হয়েছে কি-না। সূত্র জানায়, হ্যাকাররা উত্তর কোরিয়া ও পাকিস্তানের নাগরিক বলে গুঞ্জন থাকলেও এ ব্যাপারে সন্দেহাতীত সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য সিআইডি বা ইন্টারপোলের কাছে এখনও নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *