নতুন আইনে ছোট-বড় সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে সমান হারে ভ্যাট দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে বিশেষ ছাড়ের সুবিধা। এফবিসিসিআইর দেওয়া সংশোধনী প্রস্তাবে বিশেষ ছাড়ের সুবিধা বহাল রেখে সর্বক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেওয়ার পরিবর্তে বিভিন্ন স্তরে হ্রাসকৃত হারে (বিদ্যমানের চেয়ে কম হার) আদায়ের কথা বলা হয়েছে। এফবিসিসিআই প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা প্রস্তাবনায় বলেছে, ফ্রান্স, জার্মান, যুক্তরাজ্য, ভারত, জাপান, চীনসহ বিশ্বের অধিকাংশ উন্নত দেশে ভ্যাট আদায়ে বিশেষ ছাড়ের নিয়ম চালু আছে। ওই সব দেশে পণ্য ও সেবার যতটকু মূল্য সংযোজন হয়, তার অংশের ওপর বিভিন্ন স্তরে ভ্যাট আদায় করা হয়। অথচ বাংলাদেশে নতুন ভ্যাট আইনে এসব বিধান রাখা হয়নি। মোট বিক্রি বা প্রকৃত লেনদেনের ওপর একই হারে ভ্যাট আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক নীতিমালার পরিপন্থী।
এফবিসিসিআই আরও বলেছে, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি নিয়ে সরকার গঠিত যৌথ কমিটি উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ছাড় দিয়ে ভ্যাট আদায় ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করেছিল। আইনটি চূড়ান্ত করা হলেও যৌথ কমিটির ওই সুপারিশ উপেক্ষিত রয়েছে, যা মোটেই সমীচীন হয়নি। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আইনটি পুনঃপরীক্ষা করে সরকার গঠিত যৌথ কমিটির সুপারিশের আলোকে বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে এফবিসিসিআই। একই সঙ্গে এ-সংক্রান্ত সুপারিশগুলো সক্রিয় বিবেচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো এফবিসিসিআইর সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদের স্বাক্ষরিত চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবসম্মত নয়। এটি কার্যকর হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হবে। কমবে ভ্যাট আদায়। যেসব সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে, সেগুলো গ্রহণ করা হলে আদায় সহজ হবে। বাড়বে ভ্যাটের আওতা। তৈরি হবে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ।
সংশোধনী প্রস্তাব :নতুন আইনে যে কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বার্ষিক ৩০ লাখ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে। এফবিসিসিআইর সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে লেনদেনের সীমা আরও ছাড় দিয়ে বার্ষিক ৩৬ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ দেড় কোটি টাকা পর্যন্ত ভ্যাটমুক্ত রাখতে বলা হয়েছে। এর বেশি লেনদেন হলে ৩ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হবে। নতুন আইনে ছোট ব্যবসায়ীদের ২ শতাংশ ও ৪ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের নিয়ম বাতিল করা হয়েছে। প্রস্তাবে বার্ষিক লেনদেনের ভিত্তিতে ছোট ব্যবসায়ীদের ২ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপের কথা বলা হয়েছে। নতুন আইনে ছোট ব্যবসায়ীদের জন্য বহুল আলোচিত বছরে একবার নির্ধারিত ‘প্যাকেজ ভ্যাট’ দেওয়ার প্রথা বাতিল করে প্রকৃত লেনদেনের ওপর ভ্যাট আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে। এফবিসিসিআইর প্রস্তাবে প্যাকেজ ভ্যাটের বিদ্যমান বিধান বহাল রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে সব বিভাগীয় শহর জেলায় ভ্যাট দেওয়ার পরিমাণ বাড়াতে বলেছে। প্যাকেজ ভ্যাটের পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ১৮ হাজার এবং সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার টাকা। এ প্রসঙ্গে এফবিসিসিআই বলেছে, প্যাকেজ ভ্যাটের সুবিধা পেতে হলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ‘বাধ্যতামূলক’ নিবন্ধন করতে হবে। একই সঙ্গে ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে আদায় নিশ্চিত করতে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর) বাধ্যতামূলক ব্যবহারের সুপারিশ করেছে এফবিসিসিআই।
এফবিসিসিআই আরও বলেছে, উন্নত বিশ্বের সব দেশে ভ্যাটে প্রণোদনা দেওয়া হয়। ফ্রান্সে তিন স্তরে বিশেষ ছাড় বা হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট আদায় করা হয়। প্রতিবেশী দেশ ভারত ও পাকিস্তানে এ পদ্ধতি রয়েছে। এ রকম বিশ্বের ২৯টি দেশে বিভিন্ন ধাপে ভ্যাটে ছাড় দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। ওই সব দেশে ‘মূল্য সংযোজিত’ অংশের ওপর ভ্যাট আদায় করা হয়। হ্রাসকৃত হারে বিভিন্ন স্তরে ভ্যাট আদায়ের এই নীতি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হলেও বাংলাদেশে নতুন ভ্যাট আইন প্রণয়নে তা অনুসরণ করা হয়নি; বরং সবার জন্য অভিন্ন হারে ভ্যাট আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে।