শিগগিরই ‘ভারমুক্ত’ হচ্ছেন মির্জা ফখরুল!

Slider রাজনীতি

 

2016_01_01_12_35_49_fwe8zGTPSzNnRyB9GHkJrki5g10i9f_original

 

 

 

 

ঢাকা : প্রত্যাশা ও সম্ভাবনা সত্ত্বেও জাতীয় কাউন্সিলে ঘোষিত হয়নি বিএনপির পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব। ফলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে দলের কাউন্সিলর, ডেলিগেটস ও তৃণমূল নেতা-কর্মীদের প্রতীক্ষার প্রহর আরো প্রলম্বিত হয়েছে, বেড়েছে হতাশা। তাদের প্রত্যাশা ছিল, কাউন্সিলেই ভারমুক্ত হবেন মির্জা আলমগীর। কিন্তু হননি। তবে দলের নেতাকর্মীরা নিরাশ হলেও একেবারে হাল ছেড়ে দেননি। এছাড়া ফখরুলের ভারমুক্তির প্রতিক্ষায় রয়েছেন ২০ দলীয় জোট নেতারাও।

স্বাধীনতা দিবসের আগেই ‘পূর্ণাঙ্গ মহাসচিবের নাম’ ঘোষণার গুঞ্জন থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। তবে যেকোনো সময় আসতে পারে সেই কাঙ্ক্ষিত ঘোষণা। আর সেই ঘোষণায় ভারমুক্ত হতে যাচ্ছেন মির্জা ফখরুল! একইসঙ্গে অবসান ঘটতে যাচ্ছে তার দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রতীক্ষারও। বিএনপি সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

২০১১ সালের ১৬ মার্চ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। এরপর ২০ মার্চ চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সৌদি আরবে যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে মির্জা ফখরুলকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়ে যান। তখন থেকেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন তিনি।

এদিকে তৃণমূলের পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের নেতাদেরও আশা, দ্রুততম সময়ে ‘ভারমুক্ত’ হবেন ‘পরিচ্ছন্ন, ভদ্র, বিনয়ী ও দৃঢ় মনোবলসম্পন্ন’ রাজনীতিক মির্জা ফখরুল ইসলাম।

জানতে চাইলে ফেনি সদর থানার কাজিরবাগ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি হাজী মীর মো. ইদ্রিস (বতন)  বলেন, ‘প্রত্যাশা ছিল, কাউন্সিলে ‘ভারপ্রাপ্ত’ মহাসচিব ‘ভারমুক্ত’ হবেন। কিন্তু সেটা হলো না। আশা করছি, দলের প্রতি ত্যাগ ও সাংগঠনিক দক্ষতা বিবেচনায় নিয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে মহাসচিব হিসেবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নাম ঘোষণা করবেন।’

এছাড়া সম্প্রতি রাজধানীতে যুব জাগপার এক অনুষ্ঠানে ২০ দলীয় জোট শরিক জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান বলেন, ‘পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আমরা আর ভারপ্রাপ্ত দেখতে চাই না, আমরা তাকে ভারমুক্ত দেখতে চাই।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘মির্জা আলমগীর একজন বিনয়ী নেতা। কিন্তু তার এ বিনয়কে কেউ যেন দুর্বলতা না ভাবে। তিনি নৈতিক শক্তিতে বলীয়ান। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়েও তিনি আপোষ করেন নাই, মাথানত করেন নাই, বেঈমানি করেন নাই। আশা করি, দৃঢ়চেতা ও পরীক্ষিত এই রাজনীতিককে অচিরেই ভারমুক্ত করা হবে।’

এদিকে, মির্জা ফখরুলের ভারমুক্তির আশায় রয়েছেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানও। তিনি  বলেন, ‘তৃণমূলসহ দলের নেতা-কর্মীরা মির্জা ফখরুল ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হিসেবে দেখতে চান। তাদের চাওয়ার সঙ্গে আমিও একাত্মতা ঘোষণা করছি। আশা করি, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে ভারমুক্ত করবেন।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বর্তমানে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে বিএনপি। বিরোধী দলের দুর্যোগপূর্ণ রাজনীতিতে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গত পাঁচ বছর ধরে ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’র হাল ধরে রয়েছেন বিএনপির ‘ভারপ্রাপ্ত’ মহাসচিব মির্জা আলমগীর। ‘প্রশ্নবিদ্ধ ও হাস্যকর’ বিভিন্ন মামলায় ইতোমধ্যে সাত দফায় গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খেটেছেন দলের ‘ক্লিনম্যান’ খ্যাত এই নেতা।

গেল দুই বছরের মধ্যে দীর্ঘ সময় তাকে কারাগারেই থাকতে হয়েছে। সর্বশেষ গত ১ ডিসেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ৮৪টি মামলা রয়েছে। দলের প্রতি এত ত্যাগ সত্ত্বেও এখনো ‘ভারপ্রাপ্তই’ রয়ে গেছেন ফখরুল।

জানতে চাইলে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি ইসাহাক আলী মণ্ডল  বলেন, ‘আশা করেছিলাম, কাউন্সিলে আমরা নতুন মহাসচিব পাব। কিন্তু সেটা হয়নি। প্রত্যাশা করি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে মহাসচিবের নাম ঘোষণা করা হবে। সেক্ষেত্রে আশা, বর্তমান ‘ভারপ্রাপ্ত’ মহাসচিব ‘ভারমুক্ত’ হবেন ।’

যুব জাগপার ওই অনুষ্ঠানে জোট শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতিক বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আমাদেরও প্রত্যাশা ছিল, পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ হিসেবে খ্যাত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কাউন্সিলে ভারমুক্ত হবেন। কিন্তু সে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। তবে আমরা হতাশ নয়। আশা করি, খুব দ্রুতই তিনি পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হবেন।’

কাউন্সিলের আগেই চেয়ারপারসন ও সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান পদে যথাক্রমে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। কাউন্সিলে তা অনুমোদিত হয়। তবে দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মহাসচিব পদে নির্বাচন হয়নি।

সূত্র মতে, বিএনপির মহাসচিব পদে ইতোমধ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। ওই পদে বিএনপির বেশ কয়েকজন যোগ্য নেতার নাম গণমাধ্যমে প্রচার হলেও তা আর ভারি হয়নি। কেননা, খালেদা জিয়ার পাশাপাশি তারেক রহমানও ফখরুলের ব্যাপারে ‘ইতিবাচক’ । সুতরাং মহাসচিব হিসেবে মির্জা আলমগীরের নাম ঘোষণা করাই এখন শুধু বাকি।  আর এ বিষয়টি বলতে গেলে মেনেই নিয়েছেন তার প্রবল বিরোধিতাকারী দলের প্রভাবশালী ওই অংশটি।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলে আগাগোড়াই জনপ্রিয়, চেয়ারপারসনেরও অত্যন্ত বিশ্বস্ত। তিনি দলের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। একাধিকবার জেলও খেটেছেন। পার্টিকে এগিয়ে নিতে যা যা করণীয় তার সবই করছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘আশা করি, দলের প্রতি ত্যাগ ও সাংগঠনিক দক্ষতাসহ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে চেয়ারপারসন দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব করবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *