ভারতের আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প: বাংলাদেশের উপর প্রভাব

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি বাংলার মুখোমুখি সারাদেশ

10904848_929302903754631_1869455345_n

 

 

 

 

 

 

 

 

 

নদী হচ্ছে কোন হিমবাহ থেকে আসা জলস্রোত প্রবন বা জলধারা যা বিভিন্ন জনপদের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে অন্য কোন কোন জলাশয়ে পতিত হয় তাই নদী। নদী গর্ভ থেকে সৃষ্টি হওয়া দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ, এদেশের সভ্যতার অতীত নদী, কাজেই নদী আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন আলোচ্য বিষয়, এই নদীর উপর যদি কোন বিদেশী শক্তি আগ্রাসী ভুমিকা পালন করে তাহলে সেটা আমাদের জন্য জটিল এবং কঠিন বিষয়ে পরিনত হওয়া খুবই স্বাভাবিক বিষয়।
অথচ বাংলাদেশের নদী নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক সাহিত্য, রয়েছে ঐতিহ্য কবির ভাষায় তাই প্রমানিত হয়কবিতার ভাষায় বলতে হয় আমাদের ছোট নদী চলে বাকে ,বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে। কৃষি প্রধান দেশে যদি নদী মরে যায় তার চেয়ে দু:খ জনক আর কি হতে পারে। ইতি মধ্যে ভারতের আন্ত: নদী সংযোগের ফলে বাংলাদেশের অশংক নদী মরে গেছে।
আন্ত:নদী সংযোগপ্রকল্প কি?

ফারাক্কা বাঁধ পরিক্ষামুলকভাবে চালুর দু’ বছর আগে ১৯৭২ সালেই ভারতের তৎকালীন পানি সম্পদ মন্ত্রী ড. এল কে রাও একটি পানি সরবরাহ গ্রীডের প্রস্তাব করেন। এর আট বছরের মাথায় ১৯৮০ সালে গঙ্গা, ব্রক্ষ্রপুত্র, মেঘনা আববাহিকা থেকে পানি প্রত্যাাহার করে ভারতের হরিয়ানা, রাজস্থান ও দাক্ষিণাত্যে পানি সরবরাহের একটি বৃহৎ পরিকল্পনা করে। ২০০৩ সালের ১৫ আগস্ট, স্বাধীনতা দিবসে ভারতের রাষ্টপতি ড. আবুল কারাম আজাদ এই পরিকল্পনা ১৫ বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের তাগিদ দেন।এ ই ভাষনের সুত্রধরে জনস্বার্থ সংরক্ষন বিষয়ক এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় সুর্প্রমি কোট আরো দু’বছর আগে অর্থাৎ ১৩ বছরের মধ্যে তা বাস্তবায়নের নির্ধেশ দেন। এই পরিকল্পনার আওতায় হিমালয় পর্বতমালা নদী উন্নয়ন সেক্টরে ১৪ সংযোগখাল আরদাক্ষিণাত্য হিমালয় পর্বতমালা নদী উন্নয়ন সেক্টরে ১৬টি সংযোগখাল খননের পরিকল্পনা গ্রহন করেন।ভারতের এই প্রকল্পের অধীনে মোট ৩৭টি নদীকে ৩০টি সংযোগ খালের মাধ্যমে যুক্ত করা হবে। ৩০ সংযোগ খালের মোট দৈর্ঘ হবে আনুমানিক ১২ হাজার কিলোমিটার। আন্ত:নদী সংযোগ পরিকল্পনার ব্যাপারে বাংলাদেশকে আবহিত না করেই ত্রিশ বছরেরর বেশী সময় ধরে ধীরে ধীরে এটি বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত। যার কারনে বাংলাদেশের জনগনের শংকা দিন দিন বেড়েই চলছে।

আন্তর্জাতিক নদী ব্যবহারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নদী  আইনে কি রয়েছে Un Convention on the low of the non Navigational uses of International water curses 1997  কনভেনশনের ৭ ধারায় বলা হয়েছে: আর্ন্তজাতিক পানি প্রবাহারকারী কোন দেশ তার নিজের এলাকায় বহমান অংশটি যখন ব্যবহার করবে তখন অপর দেশটির যাতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি না হয় তার জন্য সকল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। যে ক্ষেত্রে এমন কোন ক্ষতি সংঘঠিত হয়েছে সে ক্ষেত্রে ৫ও ৬ ধারায় উল্লেখিত নীতিমালার আলোকে তা তা দূরকরার ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে, উপযুক্তক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের আলোচনা করতে হবে।

আমাদের দেশে বর্ষাকালে ও শুকনো মৌসুমে পানি প্রবাহ-
১) বর্ষাকাল:-
ক) সীমানার ওপার থেকে পানি আসে
ব্রক্ষ্রপুত্র নদ এবং এর উপ নদী দিয়ে ৫১%
গঙ্গা নদী এবং এর উপনদী দিয়ে ২৮%
মেঘনা নদী এবং এর উপনদী দিয়ে ১৪
৯৩%
খ) বৃষ্টির কারণে(বাংলাদেশের ভিতরে)৭%
১০০%
২)শুকনো মৌসুম
ক) সীমানা পেড়িয়ে পানি আসে
ব্রক্ষ্রপুত্র নদ এবংএর উপনদী দিয়েগুলি ৯০%
গঙ্গা নদী এবং এর উপনদীগুলি দিয়ে
(ফারাক্কা বাঁধের জন্য গঙ্গা নদীর প্রবাহ শুকনো মৌসুমে দারুণ ভাবে কমে গেছে)
মেঘনা নদী এবং এর উপনদীগুলি দিয়ে ৯%
খ) বৃষ্টির কারণে( বাংলাদেশের ভিতরে) ১%
১০০%
এবার আসা যাক আন্ত:নদী সংযোগ ফলে বাংলাদেশে উপর প্রভাব
ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশে ইতোমধ্যেই মরুকরণ প্রক্রিয়া, লবনাক্তার অনুপ্রবেশ, জীববৈচিত্রের নিাশসহ অসংখ্যা পরিবেশগত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।এর পর ভারত পরিকল্পিত ভাবে আন্ত: নদী সংযোগ প্রকল্পবাস্ত বায়িত করলে বিশ্ব দরবারে সবুজ, সুফলা এবং মাছে ভাতের দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের পরিচিতি ভিন্নতর হবে। এর ফলে আমাদের দেশে যেসব ক্ষতির প্রভাব দেখা দেবে সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
১) বাংলাদেশ ভাটির দেশ হিসেবে উজান থেকে পাওয়া ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে সম্পুর্ন বন্চিত হবে। বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী গঙ্গাব ব্রক্ষ্রপুত্র, তিস্তা, ধরলা,দুধকুমার,করতোয়া এবং মহানন্দা থেকে এক তৃতীয়াংশ বা এরও কিছু বেশী পানি পত্যাহার করলে দেশের প্রায় সব নদ-নদী ক্রমে মরা নদীতে পরিনত হবে । আর সব পানি পত্যাহার করলে বাংলাদেশ আগামীতে একটি বৃহৎ মরুভুেিত পনিত হবে।
২) নদ-নদীতে পানি প্রবাহ কমে গেলে সমুদ্রের লোনা পানি দেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করবে। ফলে ভুর্গভস্ত ও ভু-উপরিভাগের পানিতে লবনাক্ততা বৃদ্ধিপাবে।
৩) ভুগর্ভস্থ পানির স্তর ধীরে ধীরে নিচে নেমে যাবে। ভুর্গভস্থ পানির পুনর্ভরনে বৃষ্টি ২০% এবং নদী প্রবাহের পানি প্রায় ৮০% ভুমিকা রাখে। নদীতে পানি কমে গেলে ভুর্গভস্থ পানির স্তর প্রতিবছরই নিচে চলে যাবে। এবং বর্তমানে বিভিন্ন অন্চলে পানির যে স্তর রয়েছে তা থেকে ২৬ ফিট নিচে চলে গেলে অগভীর নল কুপের মাধ্যমে সেচের পানি পাওয়া যাবে না।
৪) আন্ত:নদী সংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়িত চলে বাংলাদেশের প্রধান ফসল ধান উৎপাদনসহ অন্যান্য ফসল উৎপাদন প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে।
৫) পানির স্তরনিচে নামলে ভুর্গভস্থ আর্সেনি বেশী করে ওপরে উঠে আসবে। পানিতে আর্সেনিকের গাড়ত্ব বৃদ্ধি পাবে এবং আর্সেনিক বিষাক্রান্ত হওয়ার ঝুকি আরও ব্যপক জনগনের ওপর পড়বে। বর্তমানে জনগোষ্টীরএকটি বৃহৎ অংশ, ৪ কোটির ও বেশী লোক আর্সেনিক বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুকির মধ্যে রয়েছে।
৬) নদ-নদীর পানির প্রবাহ কমে গেলে নব্যতা কমে নৌ-চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। নদীর পানি প্রবাহ কমলে পলিমাটি জমে নদী ভরাট হয়ে যাবে। যার ফলে বন্যার সম্ভানা বৃদ্ধি পাবে।
৭) আন্ত:নদীর সংযোগ প্রকল্পের বাঁধের মাধ্যমে পানি প্রত্যাহার মানেই নদীর স্বাভাবিক গতি বাধগ্রস্থ করা । তাই ভুমি কম্প, পানির বিপুল চাপ বা অন্য কোন কারনে কোন একটি বাঁধ ভেঙ্গে গেলে বাংলাদেশে বন্যায় ব্যাপক ধ্বংশযজ্ঞ ঘটতে পারে।
৮) পৃথিবীর সবচাইতে বড় ম্যানগ্রোভ বনভুমিসুন্দরবন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তা ভাবতেই হতভাগ হয়ে কোথায় যাচ্ছি আমরা , আমাদের পরিনতি কোথা ঠেকবে।
৯) দারিদ্র বিমোচনের উপর বিরুপ প্রভাব পরবে। বাংলাদেশের অধিকাংশ ৭৪% জনসংখ্যা গ্রামে বাস করেএ বং তারা গরিব। বিষেশ করে গ্রামের ১০ কোটির ও আধিক গরীব মানুষ জীবন ধারন সম্ভব হবে না। নারী ও শিশ দের জীবন হবে মুত্যু ঝুকির সম্মুখীন।
১০) বাংলাদেশের অস্তিত্ব আজ বিপন্ন, যা কোন ভাবেই মেনে য়ো যায় না। আমরা যদি খাদ্যশষ্যেও ক্ষতির কথা চিন্তা করি ভারত এক তরফা ভাবে পানি সরিয়ে নিলে বাংলাদেশের ৫০ ভাগ ধানের উৎপাদন কমে যাবে। তাহলে এই একটা ক্ষতি পুরনের জন্য বাংলাদেশ কে প্রতি বছর ১,৮০,০০.০০০ টন চাউল বিদেশ থেকে আমদানী করতে হবেযার বাজার মুল্যে ৩৬,০০০ হাজার কোটি টাকা।
এই আলোচনায় শুধু মাত্র বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক নদীর প্রসঙ্গ আলোচনায় এসেছে, এছাড়া দেশেীয় নদী প্রসঙ্গে এখানে আলোক পাত করা হয়নি, অভ্যান্তরীন নদীর বিষয়ে বিস্তর বিষয় রয়েছে যা আমাদেরকে বিপর্যস্ত করছে প্রতি নিয়ত্। ধ্বংস করছে আমাদের পরিবেশ।

পরিশেষে: বলতে চাই আমাদের সকল জনগোষ্ঠী এবিষয়ে সো”্চার না হলে এবং আমাদের সরকার কার্যকর উদ্যেগ গ্রহন না করলে আমাদের দেশ গভীর মানবিক বিপর্যয় সময়ের ব্যাপার মাত্র।জাতীয় এ সমস্যায় সবাই এগিয়ে আসবে এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। কোন বিভেগবান মানুষ এই ইস্যুতে ঘওে বসে থাকতে পাওে না এই আমার বিশ্বাস।

 

ডা. বোরহান উদ্দিন অরণ্য

যুগ্ম সম্পাদক (দপ্তর),

বালাদেশ নদী বাঁচাও আন্দোলন, কেন্দ্রীয় কমিটি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *