প্যারিসে শোক কাটিয়ে আলোর মিছিল

Slider সারাদেশ

101507_Paris

শুক্রবার রাতের নারকীয় বর্বর আক্রমণের পর শনিবার সকালে ভয়, অবিশ্বাস আর আতংকে জেগে উঠে পৃথিবীর পর্যটকদের প্রথম পছন্দের শহর প্যারিস। আগের রাতে নাগরিকদের জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার অনুরোধ করে প্যারিসের পুলিশ। ফলে আতংকিত মানুষ ঘর থেকে বের হননি সকালে। যাদের সকাল থেকে কাজ ছিল তারা অনেকটা বাধ্য হয়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন বটে কিন্তু চেহারায় অতংকের ছাপ ছিল স্পষ্ট। অনেকেই কাজে গিয়ে জেনেছেন তার কর্মস্থল বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশীদের অনেকেই প্রতিদিনের মত কাজে যোগ দিয়েছেন চাপা আতংক নিয়ে। মুসলিম হওয়ায় অনেকেই আবার ফরাসী বা ইউরোপিয়ান সহকর্মীদের বিব্রতকর প্রশ্নের হচ্ছেন। মুয়াজ্জেম হুসেন নামে এক বাংলাদেশী জানান, আমার কর্মস্থলে অধিকাংশ ইউরোপিয়ান, আবার আমি এশিয়ান মুসলমান, তাই তারা নানা প্রশ্ন করে, কোনটার উত্তর দিতে চেষ্টা করি আবার অনেক সময় উত্তর না পেয়ে নীরব থাকি, কিন্তু এভাবে কতদিন !
এদিকে রাতেই ঘোষণা আসে শনিবার যে সকল স্কুল কলেজ সাধারণত খোলা থাকে তা বন্ধ থাকবে। পাশাপাশি প্যারিসের ঐতিহ্যবাহী খুলা বাজার বা ‘মাখসে’ বসবেনা, বন্ধ থাকবে ল্যুবখ মিউজিয়ামসহ সকল মিউজিয়াম, এমনকি প্যারিসের প্রতীক খ্যাত আইফেল টাওয়ারও বন্ধ থাকবে। এর মধ্যে সকাল নয়টায় প্রেসিডেন্ট ওলাদ ঘোষণা দেন, সন্ত্রাসীরা ফ্রান্সের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং আমরা আমাদের রক্ষা করতে প্রস্তুত। পাশাপাশি তিনি তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেন। এমন অবস্থায় ভয়ে পর্যটকরা আর হোটেল থেকে বের হননি। হোটেল সুত্রে জানা গেছে গ্রাহকরা তাদের বুকিং ক্যান্সেল করে দিয়েছেন, যারা ইতিমধ্যে হোটেলে আছেন তারা রুম থেকে আর বের হননি। ফলে ছুটির দিনে কর্মচঞ্চল থাকে এমন পর্যটন এলাকা যেমন-বোলবার্ড ওসমান, এভিনিউ সম্প এলিজে প্রভৃতি এলাকা থাকে ফাঁকা। তাইওয়ান থেকে আসা পর্যটক প্যান বলেন, প্যারিস ঘুরে দেখতে এসেছিলাম, কিন্তু ভয় আর আতংকে হোটেলে ফিরে যাচ্ছি।
তবে সন্ধ্যার পর প্যারিস সহ ফ্রান্সের মানুষ শোক কাটিয়ে, জরুরি অবস্থা জারি থাকা সত্ত্বেও নতুন শক্তিতে ধীরে ধীরে রাস্তায় নামতে শুরু করেন। আলোর মশাল আর ফুল হাতে বিভিন্নস্থানে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে নেমে আসেন তারা। প্যারিসের পুতী ক্যাম্বজ রেস্টুরেন্ট ও কারিলো মানের ক্যাফে বার, সেন্ট ডেনিশের স্তাদ দ্যু ফ্রান্সের সামনে যেখানে শুক্রবারের সন্ত্রাসী হামলায় অনেকেই নিহত হয়েছিলেন সেখানে লোকজন নীরবে চোখের জল ফেলে ফুল দিয়ে শদ্ধা জানান। সন্ধ্যার পর রাত যত বাড়তে থেকে আলোর মিছিল দীর্ঘ হতে তাকে। আলোর মশাল হাতে থাকা মানুষ যেন বলছে প্যারিস তোমাকে আধারে মিশে যেতে দেব না। এ দৃশ্য গোটা ফ্রান্স জুড়েই দেখা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *