সহ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান চেয়েছেন দাপুটে জয়। তার মতো করে বলেননি মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে যেভাবেই হোক জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করতে চান অধিনায়ক। ওয়ানডেতে স্বপ্নের মতো একটি বছর কাটানোর পর সামনে আবার সেই প্রতিপক্ষ, যাদের গত বছর হারিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর গল্পটা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের।
শনিবার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডে শুরু হবে দুপুর একটায়।
সিরিজের প্রথম ম্যাচ বলে দারুণ সতর্ক মাশরাফি। সিরিজ বা টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচের শুরুতে চাপে পড়ে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য নতুন নয়। গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই প্রথম ওয়ানডেতে ৭০ রানে প্রথম চার উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ১১৯ রানে আবার প্রথম চার ব্যাটসম্যানকে হারায় দলটি।
দুইবারই দলকে বিপদ থেকে টেনে তুলেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম। এবার তেমন পরিস্থিতি চান না অধিনায়ক। সাকিব পর্যন্ত ব্যাটিং আসুক সেটা চাওয়া নয় তার। সৌম্য সরকারের অনুপস্থিতিতে মাশরাফির এই চাওয়া পূরণ নাও হতে পারে।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সাফল্যে বড় অবদান রয়েছে বিস্ফোরক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সৌম্যর। চোটের জন্য জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলাই হবে না তার। সৌম্যর জায়গা দলে আসা ইমরুল কায়েস শেষ তিনটি ওয়ানডেতে ছিলেন পুরোপুরি ব্যর্থ। জিম্বাবুয়ে সিরিজে তার জন্য বড় একটি পরীক্ষাই হতে যাচ্ছে।
মাশরাফি স্বীকার করেছেন, সৌম্যর অভাব তারা দারুণভাবে অনুভব করবেন। তবে একই সঙ্গে দলে আসা ইমরুল ও লিটনের জন্য এবারের সিরিজকে ভালো একটি সুযোগ হিসেবেও দেখছেন তিনি।
প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের হয়ে রান পেয়েছেন মুশফিক। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে শতক পেয়েছিলেন সাকিব। মিডল অর্ডারে তাদের ওপর নির্ভর করবে স্বাগতিকরা।
চলতি বছর ওয়ানডেতে খুব একটা ব্যাটিংয়ের সুযোগ মেলেনি মিডল অর্ডারের দুই ব্যাটসম্যান নাসির হোসেন ও সাব্বির রহমানের। বিসিবি একাদশের হয়ে প্রস্তুতি ম্যাচে খেললেও খুব একটা ভালো করতে পারেননি সাব্বির।
দল কেমন হতে পারে- এই প্রশ্নের উত্তরে কৌতুহল রেখে দিয়েছেন মাশরাফি। তিন পেসার নিয়ে খেলবে বাংলাদেশ নাকি স্পিন নির্ভর আক্রমণ সাজাবে স্বাগতিকরা? অধিনায়কের কথায় অবশ্য এবার স্পিনারদের উপর নির্ভর করারই ইঙ্গিত।জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাশরাফি। সেই ম্যাচে হার ভাবাচ্ছে জাতীয় দলের অধিনায়ককে। তবে জাতীয় দলের বোলারদের ওপর আস্থা থাকায় দেশসেরা পেসার জয় ছাড়া আর কিছু ভাবছেন না।
“আরভিন আর উইলিয়ামস ব্যাটিং করার সময় আমি একজন অফ স্পিনারের অভাব অনুভব করেছিলাম। বিসিবি একাদশে তেমন কেউ ছিল না বলে ইমরুলকে দিয়ে বল করিয়েছিলাম। জাতীয় দলে তেমনটা হবে না। মাহমুদউল্লাহ, নাসির হোসেন ছন্দেই আছে।”
বোলিংয়ে সাকিবের ওপর অনেকখানি নির্ভর করবেন মাশরাফি। আরেক বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানিরও থাকতে পারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। দুই অফ স্পিন অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ ও নাসিরও আছেন অধিনায়কের পরিকল্পনায়। বৈচিত্র্যময় একটি বোলিং আক্রমণ হাতে আছে মাশরাফির।
প্রস্তুতি ম্যাচে ভালো করতে পারেননি জুবায়ের হোসেন। তিন পেসার নিয়ে খেললে বাইরে থাকতে হতে পারে এই লেগ স্পিনারকে। প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে আসা পেসার কামরুল ইসলাম রাব্বিকে অভিষেকের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হতে পারে।
জয় দিয়ে শুরুর দিকেই সব মনোযোগ অধিনায়কের। তিনি মনে করেন, খেলায় দাপট দেখানোর চেয়ে যেকোনো ভাবে জেতাটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর ব্যাপারটি মাথায় রেখেই একাদশ সাজাবেন তিনি। যাতে থাকবে প্রতিপক্ষের দুর্বলতা আর নিজেদের শক্তির দিকের সমন্বয়। একটি ভূমিকা থাকবে উইকেটেরও।
জিম্বাবুয়ে সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা আছে মাশরাফির। প্রস্তুতি ম্যাচ দেখে এবারের দলটিকে বেশ ভারসাম্যপূর্ণ বলে মনে হয়েছে তার।
“গতবার উইলিয়ামস ছিল না। দলে থাকলেও আরভিন কোনো ম্যাচ খেলেনি। আমার মতে এই দুই জন জিম্বাবুয়ের সেরা দুজন ক্রিকেটার। ওদের এবারের দলটির ব্যাটিং অনেক ভালো, ভারসাম্যপূর্ণ।”
এদের সঙ্গে আছেন চামু চিবাবা, সিকান্দার রাজা, চিগুম্বুরার মতো ব্যাটসম্যান। প্রতিপক্ষের অধিনায়ককে মাশরাফি দেখেন বিশ্বের সোর ক্লিন হিটারদের একজন হিসেবে। তাই প্রতিপক্ষের সব ব্যাটসম্যানের জন্যই পরিকল্পনা থাকবে তারা।
নিজেদের সর্বশেষ সিরিজে সহযোগী দেশ আফগানিস্তানের কাছে হেরেছে জিম্বাবুয়ে। মাশরাফি মনে করেন, সেই হার পেছনে ফেলতে বাংলাদেশে প্রাণপণে লড়বে চিগুম্বুরার দল। অন্য দিকে, পাকিস্তান-ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার মতো তিন ক্রিকেট পরাশক্তির বিপক্ষে টানা তিনটি সিরিজ জেতা বাংলাদেশ ধরে রাখতে চাইবে জয়ের ধারাবাহিকতা।
“আমি মনে করি, খুব ভালো লড়াই হবে। অবশ্যই আমাদের লক্ষ্য থাকবে জেতা।”
প্রথম ম্যাচের ভেন্যু শের-ই-বাংলা নয় বাংলাদেশ দল শুক্রবার অনুশীলন করেছে ফতুল্লায়। তাই এ দিন উইকেট দেখার সুযোগ মেলেনি স্বাগতিকদের।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এবারের সিরিজে বাংলাদেশের পাওয়ার আছে সামন্যই। সব ম্যাচ জিতলে মাত্র এক পয়েন্ট বাড়বে মাশরাফির দলের। হারলে অনেক পয়েন্ট হারানোর শঙ্কা আছে তাদের। তবে এই সব নিয়ে ভেবে নিজেদের ওপর চাপ বাড়াতে রাজি নন তিনি।
“প্রতিটি সিরিজই চ্যালেঞ্জিং। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তো সবসময়ই চ্যালেঞ্জ ছিল। গুরুত্বপূর্ণ হল যে, আমরা পরস্পরের সঙ্গ যেভাবে উপভোগ করছিলাম, সেভাবে করতে পারলে ভালো কিছু না হওয়ার কারণ নেই।”
গতবার বাংলাদেশ সফরে সব আন্তর্জাতিক ম্যাচ হেরেছিল জিম্বাবুয়ে। প্রস্তুতি ম্যাচেও জিততে পারেনি তারা। একটি ম্যাচ ড্র করেছিল অতিথিরা; হেরেছিল অন্যটিতে। এবার জয় দিয়ে সফর শুরু করায় ওয়ানডেতে ভালো করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী তারা।
বাংলাদেশের মাটিতে সিরিজ জয়ের অভিজ্ঞতা নেই জিম্বাবুয়ের বর্তমান দলটির কারোরই। এবার সিরিজ জিততে কোচ ডেভ হোয়াটমোরের দিকে তাকিয়ে আছে দলটি। ২০০৩ থেকে ২০০৭ পর্যন্ত বাংলাদেশের কোচ থাকা হোয়াটমোর নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এবারের সফরের জন্য প্রস্তুত করেছেন চিগুম্বুরাদের।আফগানিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজের ব্যর্থতা ভুলতে এবারের সফরে ভালো করতে উন্মুখ হয়ে আছে জিম্বাবুয়ে। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে প্রাণপণে লড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অধিনায়ক চিগুম্বুরা।
“আফগানিস্তান এখন অতীত। বাংলাদেশ নিজেদের মাটিতে ভালো দল। এটা হবে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজ যেখানে দুই দলই জয়ের জন্য মরিয়া থাকবে। আমাদের শেষ সিরিজ থেকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আমরা নিজেদের সেরাটা দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।”
গত বছর জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল বাংলাদেশ। আবার সেই দলের সামনে দাঁড়িয়ে জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার প্রত্যয় জানিয়েছেন মাশরাফি। সহজ কোনো সিরিজ আশা করছেন না তিনি। তবে সবাই নিজের শতভাগ দিয়ে না জেতারও কোনো কারণ দেখছেন না তিনি।