জার্মানিতে আনন্দের বন্যা

Slider খেলা গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ

54341_1-1
গ্রাম বাংলা ডেস্ক: বিশ্বকাপ জয়ের পর উচ্ছ্বসিত জার্মানরা রাস্তায় নেমে আসেন : ইন্টারনেট
সবই প্রস্তুত ছিল। তবে অপেক্ষার যেন নেই শেষ! পুরো জার্মানিই থমকে ছিল। পিনপতন নীরবতা বার্লিনের রাস্তায়। কোথাও কেউ নেই? না, তা নয়। সবাই বসে গেছেন বাসার টিভি সেট কিংবা খোলা মাঠের বড় পর্দার সামনে। নব্বই মিনিট শেষ। এর পরও ওঠার উপায় হয়নি। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের তিন ভাগও বিদায় লগ্নে। ঘটনাও ঘটল তখন। ছয় হাজার ২২২ মাইল দূরে রিও ডি জেনিরোর মারকানায় গোল করেন জার্মান মিডফিল্ডার মারিও গোটজে। ব্যস, মুহূর্তের মধ্যেই জাগ্রত হলো বার্লিনের আসমান ও জমিন। চার দিকে শুধুই উৎসব আর উৎসব। দীর্ঘ ২৪ বছর পর বিশ্বকাপ জিতল জার্মানি। দলটির ভক্তরাও মেতে উঠলেন বাঁধভাঙা উল্লাসে। শুধু বার্লিন নয়, দেশটির প্রতিটি শহরই দেখল ফুটবলপ্রেমীদের স্বপ্ন পূরণের উচ্ছ্বাস। বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা জার্মানরাও ফুটবল দলের সাফল্যে উল্লাস করেন। পূর্ব লন্ডন ও স্পেনের মায়োরকার পানশালায় দলবদ্ধভাবে খেলা উপভোগের পর ফেটে পড়েন উন্মাদনায়।
রোববার শ্বাসরুদ্ধকর ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে দুই যুগ পর চতুর্থ বিশ্বকাপ জিতল জার্মানি। অতিরিক্ত সময় শেষ হওয়ার ৭ মিনিট বাকি থাকতে ম্যাচের একমাত্র গোলটি করেন মারিও গোটজে। তার এই গোলের পর মুহূর্ত থেকেই সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে ওঠেন সারা বিশ্বের জার্মান ভক্তরা। রিও ডি জেনিরো থেকে বার্লিন কিংবা লন্ডন সর্বত্রই দেখা মিলল জার্মানদের বিশ্বজয়ের উন্মাদনার চিত্র। জাতীয় দলের জার্সি ও পতাকার রঙের পোশাকে রাস্তায় নেমে এলো তারা। নেচে-গেয়ে কাটিয়ে দিলো সারা রাত। আতশবাজির ফোয়ারায় আলোকিত হয়ে থাকল বার্লিন। ব্যক্তিগত গাড়ির হর্ন ও লম্বা বাঁশির গগনবিদারী ফুৎকার ঘুমন্ত শিশুকেও জেগে উঠতে বাধ্য করল!
উৎসবের সব প্রস্তুতিই ফাইনালের আগেই সেরে নেয় জার্মানরা। শিরোপা জয়ের ইউরোপীয় দলটিই ছিল সবার হট ফেবারিট। তবে লড়াইয়ের বেলায় আর্জেন্টিনা ছেড়ে কথা বলেনি। ফলে টেনশন বেড়ে যায় খোলা আকাশের নিচে বিগ স্ক্রিনে খেলা দেখা হাজারো জার্মানের। ফ্রাঙ্কফুট অ্যারিনাতে ৫০ হাজার, মিউিনিখ অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ৩৩ হাজার ও বার্লিন এফসি ইউনিয়ন কাবের জায়ান্ট স্ক্রিনে ২০ হাজার জার্মান একত্রে খেলা দেখেন। এদের  বেশির ভাগের গায়েই ছিল জাতীয় দলের জার্সি। গোটজের গোলের পর নিজ অবস্থানে থেকেই তারা উৎসবের সূচনা করে। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজতেই শুরু হয় জার্মানদের বিশ্বজয়ের আসল উন্মাদনা। একযোগে রাস্তায় নেমে আসেন সকলে। বাসাবাড়িতে বসে খেলা দেখা অনেকেই বেরিয়ে এসে যোগ দেন বহরের সাথে।
হাতে দেশের পতাকা। মাথায় কাউবয় হ্যাট। কণ্ঠে জাতীয়সঙ্গীত। একপর্যায়ে চর্তুদিক থেকে আসা জার্মানরা একত্র হলো সেন্ট্রাল বার্লিনের ভিক্টোরি কলাম ও ব্র্যান্ডেনবার্গ গেটের মধ্যবর্তী স্থানে। তখন পুরো স্থানটিতেই তৈরি হয় অসাধারণ এক দৃশ্যের। ‘সুপার মারিও’ ‘সুপার ডুয়েশচেল্যান্ড’ স্লোগানে এলাকা মুখরিত করে রাখেন জার্মান ভক্তরা। পাশাপাশি ব্র্যান্ডেনবার্গ  গেটের উপর দিয়ে উদ্ভাসিত আতশবাজির আলোর ফোয়ারা উৎসবের রঙে আলোকিত করে রাখল বার্লিনকে।
জার্মানদের সীমাহীন উন্মাদনার কিছুটা টের পাওয়া গেল ২৪ বছর বসয়ী ড্যানেইলা যখন বলেন, ‘শুরুর দিকে গোল হলে ভালো হতো। আরো বেশি গোলও সবাই প্রত্যাশা করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত আমরা জিতেছি। এখন শুধুই উৎসবের সময়।’ ১৯৯০ সালে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে তৃতীয় বিশ্বকাপ জিতেছিল জার্মানি। দীর্ঘ ২৪ বছর পর ল্যাতিনের দেশটিকেই বেদনায় ফেলে ইউরোপের দেশটি জিতল চতুর্থ বিশ্বকাপ। অবশ্য এমনিতেই আসেনি তাদের সাফল্য। ২০০২ সালের ফাইনালে ব্রাজিলের কাছে হারের পর নতুন স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার যে সংকল্প করেছিল জার্মানরা সেটিই আলোর মুখ দেখল ২০১৪ সালে। যোগ্যতম দল হিসেবেই তারা পেল বিশ্বসেরা দলের ট্যাগ।
সেমিফাইনালে ব্রাজিলকে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠতম লজ্জা দেয়ার পর ফাইনালেও জার্মানরা খেলল নিখুঁত ফুটবল। বল পজিশনেও থাকল দলটির শ্রেষ্ঠত্ব। বল নড়াচড়ায়ও সফল তারা। আর্জেন্টিনার চেয়ে ৩০০ পাস বিনিময় করেন জার্মান ফুটবলাররা। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বেশি গোলও (৭ ম্যাচে ১৮ গোল) তারা করেন। ফলে আপামর জার্মানদের বাঁধভাঙা উল্লাসও বেশ মানিয়ে গেল! এবং আজ ভিক্টোরি প্যারেডের আগ পর্যন্ত তাদের এই উৎসবও অব্যাহত থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *